বাংলা সন ইসলামী ঐতিহ্যেরই অংশ
বাংলাসন ইসলামী ঐতিহ্যজাত। এ সনের উদ্ভাবন ঘটেছে হিজরিসন থেকে। এর উদ্ভাবন, প্রবর্তন সবই মুসলমানরা করেছে।
প্রাচীন বাংলার জনজীবন ও সমাজের চিত্র তেমন একটা পাওয়া যায় না। সেকালে বাঙালির সাহিত্য বা ইতিহাস রচিত না হওয়াই এর কারণ। উনিশ শতক বা আধুনিক যুগের আগে বাঙালি কাব্য রচনা করেছে, তবে ইতিহাস লেখেনি। চর্যাপদকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একমাত্র প্রাচীন নিদর্শন বলা হয়। এর রচনাকাল নিয়ে ব্যাপক মতভেদ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে আট থেকে বারো শতক সময়সীমার মধ্যে তা রচিত হয় বলে পন্ডিতেরা সিদ্ধান্ত করেছেন। তবে চর্যাপদ ঠিক কবিতা নয়, সেকালের পদ বা গান। এর কয়েকটি পদে সমকালের সমাজ ও জনজীবনের অতি সামান্য তথ্য মেলে। প্রাচীন কালের বাংলা সম্পর্কে আমরা যেসব খবর পাই তা চীনা পর্যটক ফা হিয়েন (পাঁচ শতক), হিউয়েন সাং (সাত শতক)-এর বিবরণে। এর কয়েকশ’ বছর পর আসেন মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা (চৌদ্দ শতক) ও আরেক চীনা পর্যটক মা হুয়ান (পনেরো শতক)। চৌদ্দ শতকের শেষার্ধের আগে আর বাংলা সাহিত্য রচিত হয়নি, সাহিত্যে বাংলার কথাও আসেনি। এরপর আনুমানিক ষোড়শ শতকে রচিত কবি মুকুন্দরামের ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্যে বাংলার সমাজ ও জনজীবনের কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, বাংলা ভূখন্ডের আবহমান কালের সমাজ জীবনে বিরাট পরিবর্তনের ঢেউ আসে তেরো শতকের শুরুতে এ ভূখন্ডে মুসলিম শাসন কায়েমের পর। তখন হিন্দু, বৌদ্ধ ও আদিম ধর্মমতের অনুসারী অধ্যুষিত জনজীবনের নবীন অংশীদার হতে শুরু করে ইসলামের অনুসারী মুসলিমরা। ক্রমে তারা বাংলার জনসমাজের অন্যতম প্রধান অংশ হয়ে ওঠে। বাংলার জনজীবনে নতুন রূপ ব্যাপক পরিবর্তন আনে। কিন্তু গোটা মধ্যযুগে (তেরো শতক থেকে আঠারো শতক) বহু কাব্য রচিত হলেও সেগুলোতে বাংলার জনজীবনের কথা নেই। তাই বাঙালির ভাষ্যে মধ্যযুগে বাঙালির জন জীবন ও সমাজের খবর আমাদের প্রায় অজানা। তাই গবেষকরা স্বীকার করেন যে ‘সতেরো শতকের আগের বাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিত জনজীবন ও সমাজের তেমন তথ্য পাওয়া যায় না।’
সাহিত্য সূত্রে না হলেও বাঙালির দ্বারা রচিত না হলেও ভিন্নভাষীদের রচিত বিভিন্ন গ্রন্থে আঠারো শতকের বাংলার প্রথমার্ধের জন জীবন ও সমাজ বিষয়ে বেশ তথ্য পাওয়া যায়। এ গ্রন্থগুলো হচ্ছে- ১. সৈয়দ গোলাম হোসেন খান তাবতাবায়ির (জ.১৭১৭-২৮)-‘সিয়ার-উল-মুতাখ্খিরিন’ (রচনা:১৭৮১), ২. গোলাম হোসেন সলিমের (মৃ: ১৮১৭-১৮) ‘রিয়াজ-উস-সালাতিন’ (রচনা: ১৭৮৭-৮৮), ৩. মুনশি সলিমুল্লাহর ‘তারিখ-ই-বাঙ্গালা’ (রচনা : ১৭৬৩), ৪. ইউসুফ আলির ‘আহবাল-ই-মহব্বতজঙ্গ’ (রচনা: ১৭৫৬) . ৫. করম আলির ‘মুজাফ্ফর নামা’ (আনু. ১৭৭৩), ৬. সুজন রায় ভান্ডারির ‘খুলাসাত-উত-তাওয়ারিখ’ (রচিত ১৬৯৫) ও রায় চতুর্মনের ‘চাহার গুলশান’ (রচিত ১৭৫৯)। সবগুলো গ্রন্থের কোনো কোনোটি বাংলায় মুসলিম শাসন ও অন্যগুলো নবাবদের শাসনের ইতিহাস। সবগুলোই ফারসি ভাষায় রচিত।
ইংরেজদের দ্বারাও আঠারো শতকের বাংলা সম্পর্কে ইংরেজিতে বই বা গবেষণাধর্মী রচনার কথা জানা যায়। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মধ্যযুগের বাংলার আয়তন ছিল ইংল্যান্ডের আয়তনের চেয়ে কিছু বেশি। আর ব্রিটিশ ভূবিদ, ভূগোলবিদ, নৌ-প্রকৌশলী, ঐতিহাসিক ও মহাসাগর বিদ্যার জনক মেজর জেমস রেনেলের (১৭৪২-১৮৩০) ‘মেমোয়ার অব এ ম্যাপ অব হিন্দুস্তান’ (১৭৮৮) বইয়ের তথ্য মতে, জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাকে ১৭৬৪ সালে বাংলাদেশের জরিপ কাজের দায়িত্বে নিয়োগ করার পর প্রথম বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ১৭৬৭ সাল পর্যন্ত এ জরিপ কাজ চালান তিনি। ঢাকায় ছিল তার প্রধান দফতর। রেনেলের কাজের বছর দশেক পর আরেক ব্রিটিশ সেনা অফিসার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রির লে. কর্নেল ও প্রকৃতিবিদ, লেখক-অনুবাদক আলেকজান্ডার ডাও (১৭৩৬-১৭৭৯) তার ‘অ্যান ইনকোয়ারি ইন্টু দি স্টেট অব বেঙ্গল’ (১৭৭৪) নামক গবেষণা নিবন্ধে বাংলার জনসংখ্যা দেড় কোটি বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, ইংল্যান্ডের আয়তনের চেয়েও কিছু বেশি আয়তনের ‘বাংলা পৃথিবীর অন্যতম উর্বর ও বিশাল সমতল ভূমি। বহু নাব্য নদীর জলপ্রবাহে বিধৌত এ বংলার দেড় কোটি মানুষ অতিশয় পরিশ্রমী।’
আঠারো শতকের মধ্যকালোত্তর সময়ে ব্রিটিশ শাসন শুরুর পূর্বে ১৭০০ সাল থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত ৫ জন দেওয়ান ও নবাব সুবা বাংলা শাসন করেন। আর এ সময় বিহার ও উড়িষ্যা সুবা বাংলার অন্তর্গত ছিল। তথ্য মতে, ১৭০০ সাল থেকে উড়িষ্যা ও ১৭৩৩ সাল থেকে বিহার বাংলার সাথে যুক্ত হয়, আর সে কারণে এ দু’টি অঞ্চল উল্লেখিত সময়কাল থেকে বাংলার প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে ১৭৫১ সালে মারাঠা আক্রমণের ফলে উড়িষ্যা বাংলার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যা হোক, দিল্লির মোগল বাদশাহ নিয়োজিত ও অনুমোদিত বাংলা সুবার ৫ দেওয়ান ও নবাব হলেন- ১. মুর্শিদ কুলি খাঁ দেওয়ান ও উপ-সুবাদার (১৭০০-১৭১৭ সাল); সুবাদার বা নবাব (১৭১৭-১৭২৭ সাল); ২. সুজাউদ্দিন খাঁ (১৭২৭-১৭৩৯ সাল); ৩. সরফরাজ খাঁ (১৭৩৯-১৭৪০ সাল) ৪. আলিবর্দি খাঁ (১৭৪০-১৭৫৬ সাল) ও সিরাজউদ্দৌলাহ্ (১৭৫৬-৫৭ সাল)। আরো উল্লেখ করা যায় যে, গোলাম হোসেন সলিম ১৭৮৮ সালে রচিত তার ‘রিয়াজ-উস-সালাতিন’ গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে সমকালীন বাংলার প্রাকৃতিক সীমারেখা নির্দেশ করেছেন। এতে বাংলার দক্ষিণে সাগর, উত্তরে নেপাল, সিকিম ও ভুটানের পর্বতমালা, পূর্বে চট্টগ্রাম ও আরাকান অঞ্চলের পর্বতমালা, উত্তর পশ্চিমে বিহার সুবা ও দক্ষিণ পশ্চিমে উড়িষ্যার কথা বলা হয়েছে। তবে ১৭৫১ সালে মারাঠা আক্রমণের ফলে উড়িষ্যা বাংলার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় ত্রিপুরা নামে কোনো স্বাধীন রাজ্য ছিল না, এটি ছিল বাংলার করদ রাজ্য।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৭০০ থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত শেষদিকে দশ বছর (১৭৪২-৫১) মারাঠারা বাংলায় হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। অন্যদিকে সাগর তীরবর্তী এলাকায় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের হানা ও বর্বরতা চলছিল। তা সত্তে¡ও মুর্শিদ কুলি, সুজাউদ্দিন ও আলিবর্দি খানেরা বাংলায় অপেক্ষাকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইউরোপীয় লেখকরা এ সময়কে সুশাসন ও শান্তির যুগ বলেছেন। সুজাউদ্দিনের সময় ঢাকা উপপ্রদেশ হয়। এর ডেপুটি গভর্নর হন সরফরাজ খাঁ। তার দেওয়ান ছিলেন যশোবন্ত রায়। তিনি সুশাসন কায়েম করার ফলে অবস্থার এত উন্নতি ঘটে যে চালের দর শায়েস্তা খাঁর রেকর্ড স্পর্শ করে এবং তার পরে সে সময়ই প্রথম ও শেষবারের মতো টাকায় আট মণ চাল বিক্রি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে শায়েস্তা খাঁর বন্ধ করা দরজা আবার খোলা হয়। অন্যদিকে ‘মুজাফ্ফর নামা’য় বলা হয়েছে, ‘আলিবর্দীর সময়ে চোর ডাকাতের নামই শোনা যেত না। যদি কারো সম্পত্তি রাস্তায় পড়ে যেত, মালিক না আসা পর্যন্ত সেদিকে কেউ তাকাত না।’
বাংলার জনসমাজে এ সময় বহু জাতি-ভাষার মানুষ এসে মিশেছিল। প্রধান দু’টি ধর্মীয় সম্প্রদায় ছিল হিন্দু ও মুসলমান। অতি অল্পসংখ্যক ইংরেজ,
ফরাসি, ডাচ ও আর্মেনীয় ব্যবসায়ী ছিলেন। হিন্দু সমাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের অবাঙালিরা স্থায়ীভাবে বাংলায় বাস করত। তারা ছিল রাজপুত, মাড়োয়ারি, কাশ্মীরি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি প্রভৃতি। আর অবাঙালি মুসলমানদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বাংলায় বসবাসকারীদের মধ্যে ছিল আরব, ইরানি, তুর্কি ও পাঠানরা। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, মুসলমানরা বেশির ভাগই যোগ দিত সৈন্য বিভাগে। পক্ষান্তরে হিন্দু ব্রাহ্মণরা কেরানির চাকরি নিত, কিন্তু কোনোভাবেই সৈন্যদলে বা কূটনীতিকের চাকরিতে যেত না। জানা যায়, মুর্শিদ কুলি থেকে নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ পর্যন্ত সকল নবাবই রাজস্ব বিভাগ ও প্রশাসনে ব্যাপক হারে হিন্দুদের নিয়োগ করতেন।
তথ্যে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে হিন্দু জমিদার সৃষ্টি হয় এ সময়েই। নবাবরা হিন্দু ব্রাহ্মণদের সহজ শর্তে জমিদারি বন্দোবস্ত প্রদান করতেন। ফলে বিশেষ করে নাটোরের সুবিখ্যাত ব্রাহ্মণ জমিদার পরিবার রামজীবন, রামকান্ত ও রানী ভবানী, ময়মনসিংহের শ্রীকৃষ্ণ হালদার, মুক্তাগাছার (ময়মনসিংহ) শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী প্রভৃতি জমিদার পরিবারের উৎপত্তি হয় এ সময়েই। এ ছাড়া রাজশাহীর তাহিরপুর, পুঠিয়া প্রভৃতি স্থানে হিন্দুদের ছোট জমিদারি পত্তনি দেয়া হয়। কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের পিতা নরেন্দ্রনাথ রায় বর্ধমানের ভুরসুট পরগণার পান্ডুয়ার জমিদার ছিলেন। জমিদারদের কেউ কেউ নবাবের কাছ থেকে রাজা বা মহারাজা খেতাব পান।
জানা যায়, এ সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার ব্রাহ্মণ জমিদার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও পূর্ববঙ্গের ঢাকার রাজনগরে উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী মহারাজ রাজবল্লভ সেন হিন্দু সমাজের নেতা ছিলেন। হিন্দু সমাজে বর্ণ ও জাতিভেদের মতো কঠোর প্রথা বিদ্যমান ছিল। তবে তা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কঠোর ছিল না। সহমরণ, বহুবিবাহ বৈধব্য প্রথা ও বাল্য পরিণয় চালু ছিল। রাজবল্লভ এগুলো বাতিলের চেষ্টা করেন, কিন্তু মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র বাধা দেয়ার কারণে তা ব্যর্থ হয়।
এ সময় বাংলার সমাজ জীবনে জনশ্রেণির মধ্যে চারটি স্তর দেখা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সর্বোচ্চে নবাব, তার পরের স্তরে বাংলার প্রভাবশালী অভিজাতরা যাদের মধ্যে ছিলেন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী, সেনাধ্যক্ষ, মন্ত্রী ও পারিষদবর্গ ও প্রভাবশালী জমিদারেরা। এর নিচের স্তরে ছিলেন গ্রামীণ সম্পন্ন ভ‚স্বামী, বণিক, মহাজন, ব্যবসায়ী, রাজকর্মচারী, বেনিয়ান, সরকার, গোমস্তা, মুৎসুদ্দিরা। আর সর্বনিম্ন স্তরে ছিল জনগণ যাদের মধ্যে ছিল কৃষক, কারিগর, হস্তশিল্পী, সাধারণ সৈনিক, কর্মজীবী ও শ্রমজীবী সব মানুষ।
এ সময়ের বাংলার মুসলমানদের তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। আশরাফ, আজলফ বা আতরাফ ও আরজল। আশরাফ ছিল উচ্চ শ্রেণি- সৈয়দ, শেখ, পাঠান, মোগল (সে সময়ের লেখায় মুসলমান আশরাফদের পরিচয় এভাবেই দেয়া হয়েছে)। আরব, মধ্য এশিয়া, ইরান ও আফগানিস্তান থেকে তাদের বাংলায় আগমন ঘটেছিল। আজলফ বা আতরাফ ছিল মধ্যম শ্রেণি- কৃষক, শ্রমিক, অন্যান্য বৃত্তিজীবী, কারিগর, শিল্পী, দোকানদার, জোলা (তাঁতি)। আর আরজল ছিল নিম্ন বা পতিত শ্রেণি- চামার, বেদে, বাজীকর প্রভৃতি। এও বলা হয়েছে যে, মুসলমান সমাজের ২০ শতাংশ ছিল আশরাফ, ৭৫ শতাংশ ছিল আতরাফ ও ৫ শতাংশ ছিল আরজল। আভিজাত্য ও সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে উচ্চে ছিলেন সৈয়দরা। এ যুগের বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে পাঠানরা ছিল সংখ্যায় বেশি। তাদের উপাধি ছিল খাঁ। আশরাফ শ্রেণির মুসলমানদের জীবিকার উপায় ছিল অসি ও মসি অর্থাৎ তারা ছিলেন যোদ্ধা ও রাজকর্মচারী।
বিশ শতকে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তারা পরস্পরের ঘোর শত্রুতে পরিণত হয় বললেও অত্যুক্তি হয় না। একুশ শতকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি হলেও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিবর্তন তেমন ঘটেনি। কিন্তু সেকালে কী অবস্থা ছিল? একালের গবেষকদের ধারণা যে, সে সময় বাংলার এ দুই প্রধান সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলিম হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি একে আন্তরিকভাবে অন্যের মঙ্গল সাধন করছে, একই ধরনের চিন্তা পোষণ করছে, একই পরিবারের সন্তান হিসেবে একে অন্যের কথা ভাবছে, একই মায়ের সন্তান হিসেবে ভাইয়ের মত বাস করছে।’
গবেষকরা মনে করেন, সে যুগে হিন্দু-মুসলমান শান্তিতে বাস করেছে, তাদের মধ্যে বিরোধ ও অশান্তির ঘটনা ছিল বিরল। তারা আরো মনে করেন, তার মন্তব্যের বিরোধিতা করার মতো কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন।
মেজর রেনেলের একটি মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি তার ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘ইউরোপীয়দের তুলনায় বাঙালিরা অনেক মহৎ দার্শনিকতা নিয়ে কষ্ট ও দুর্ভাগ্য বরণ করে।’ আজ প্রায় দুইশ’ বছর পর বাঙালি প্রসঙ্গে ইতিহাস খ্যাত ব্যক্তির এ মন্তব্য একালের বাঙালিরা কীভাবে দেখবেন তা এক কৌত‚হলের বিষয়।
রচনাসূত্র: ১. ‘প্রাক-পলাশী বাংলা’ (সামাজিক ও আর্থিক জীবন, ১৭০০-১৭৫৭): সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৩৬৫। ২. ‘মধ্যযুগে বাঙ্গলা’: শ্রী কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, কলিকাতা , আশ্বিন ১৩৩০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।