নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কমনওয়েলথ গেমসে শ্যুটিং থেকে বাংলাদেশকে টানা দ্বিতীয় পদক এনে দিলেন আব্দুল্লাহ হেল বাকি। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে তিনি রূপা ধরে রাখলেন। সর্বশেষ ২০১৪ গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে এ ইভেন্টেই রৌপ্যপদক জিতেছিলেন দেশসেরা এই শ্যুটার। এবার গোল্ড কোস্ট কমনওয়লথ গেমসেও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখালেন তিনি। গতকাল জ্বলে উঠলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বেলমন্ট শ্যুটিং সেন্টারে।
গেমসের গত আসরে সাফল্য পাওয়ায় এবারও বাকিকে ঘিরেই জাতির স্বপ্ন ছিল। গোল্ড কোস্টে ভালো করবেন তিনি এমন আশা ছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনসহ দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের। স্বপ্ন পুরণ করলেন বাকি। কমনওয়েলথ গেমস থেকে এবারও জিতে নিলেন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের দ্বিতীয় সেরার খেতাবটি। অল্পের জন্য লাল-সবুজের এই শ্যুটার স্বর্ণ হাতছাড়া করলেন। মাত্র ০.৪ পয়েন্ট বেশি করতে পারলেই গোল্ড কোস্টে স্বর্ণপদকটি বাকির গলায় শোভা পেত। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ডেনি স্যাম্পসন ২৪৫.০ স্কোর করে স্বর্ণ জয় করলে বাকি তুলেন ২৪৪.৭ স্কোর। এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন গেমসের আরেক ফেবারিট ভারতের রবি কুমার। তার স্কোর ২২৪.১। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে রবি ছিলেন দ্বিতীয়স্থানে। শীর্ষে ছিলে তার স্বদেশী দীপক কুমার। স্যাম্পসন ছিলেন তৃতীয়স্থানে এবং বাংলাদেশের বাকি ছিলেন ষষ্ঠ স্থানে।
ফাইনাল রাউন্ডে এসে ঘুরে দাঁড়ান বাংলাদেশ শ্যুটিংয়ের স্বপ্ন জয়ের নায়ক। আরেকটুকু মনোযোগী হলে হয়তো সেরার মুকটটি তার মাথায়ই উঠতো। অবশ্য এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই বাকির। কারণ তার তো এই ইভেন্টে অংশ নেয়ার কথাই ছিল না। দেশে জাতীয় শ্যুটিংয়ে নিজের প্রিয় ইভেন্ট ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে তিনি ভালো করতে পারেননি। ফলে কমনওয়েলথ গেমসে তার খেলার কথা ছিল ৫০ মিটার রাইফেলে ইভেন্টে। কিন্তু ড্যানিশ কোচ ক্লাভস ক্রিস্টেনসেনের মাথায় ছিল অন্য পরিকল্পনা। বাজির ঘোড়া বাকি-সেটা তিনি ভালোই জানতেন। গত দ্’ুবছর ধরে বাকির কোচ ক্রিস্টেনসেন। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে তিনি অন্য কাউকে নয়, চ‚ড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য বেছে নেন বাকিকেই। বড় আসরে বাকির অভিজ্ঞতা এবং দৃঢ়তায় তার উপর আস্থা ছিল কোচের। ঢাকায় থাকা অবস্থায় বাকিকে জানানো হয়, পরিবর্তন হতে পারে তার ইভেন্টের। কিন্তু সেটি চ‚ড়ান্ত হয় রেঞ্জে নামার মাত্র একদিন আগে। গত পরশু যখন বাকি জানলেন তিনি ১০ মিটারে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, তখনই তার মনের জোর বেড় যায়। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে চঞ্চল হয়ে ওঠে তারা মন। নিজের প্রিয় ইভেন্ট ফিরে পেয়ে যেন প্রতিজ্ঞা করলেন মনে মনে- ভালো করতেই হবে। মনের জোড় আরও বাড়িয়ে নেন। তিনি জানতেন কোচের মত সারাদেশ তার দিকে তাকিয়ে আছে পদকের আশায়। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল নিজের সেরাটা দিতে পারলে পদক আসবেই। তাই হলো। খেলতে নেমে নিজের সেরাটাই দিলেন। অল্পের জন্য স্বর্ণবঞ্চিত হলেন। জিতে নিলেন গেমসে টানা দ্বিতীয় রৌপ্য।
গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে যখন ধারাবাহিক ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা তখন সব চাপ যেন পড়লো বাকির ওপর। কিন্তু খেলতে নেমে তিনি চাপ না নিয়ে ছিলেন স্বভাবসুলভ শান্ত। কখনো লক্ষ্যচ‚ত্য হননি। শুরুতেই চ‚ড়ান্ত ৮ জনের টিকে থাকার লড়াই। হলেন ষষ্ঠ। তখন যেন বাংলাদেশ শ্যুটিং দলের আকাশে কালো মেঘ জমছে। কারণ তার সঙ্গে এই ইভেন্টে অংশ নেয়া বাংলাদেশের আরেক শ্যুটার মো: রাব্বি হাসান মুন্না ১৮ জনের মধ্যে হন ১৪তম। এদিকে নিজ ইভেন্ট থেকে আরও দুই শ্যুটারের ছিটকে পড়ার খবর আসে বাকির ইভেন্ট শুরু আগেই। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে বাংলাদেশের আরদিনা ফেরদৌস অল্পের জন্য ফাইনালে খেলতে পারেননি। তিনি ২৫ জনের মধ্যে নবমস্থান পেলে তাকে ছিটকে পড়তে হয়। শীর্ষ আটজন খেলে ফাইনালে। আর ১৭তম হন লাল-সবুজের আরেক নারী শ্যুটার আরমিন আশা।
ফলে শেষ ভরসা আব্দুল্লাহ হেল বাকি- এমনটা মেনে নিয়েই ব্রিসবেনের বেলমন্ট শ্যুটিং সেন্টারে সবার চোখ তার ্পরই পড়ে। খেলতে নেমে বাকি একে একে তার লক্ষ্য ভেদ করে যান। আর বাংলাদেশও এগিয়ে যায় স্বপ্ন পুরনের পথে। ৬০ শটের বাছাই পর্বে ষষ্ঠ হলেও পদক লড়াইয়ের শুরুটা করেন দৃঢ়তায়। সমান তালে আবার কখনো এগিয়ে থেকে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তুলেন অস্ট্রেলিয়া ও ভারতীয় প্রতিযোগীর বিপক্ষে। ৫০.৫, ১০১.৪, ১১২.৪, ১৪৩.০, ১৬৩.৪, ১৮৩.৫, ২০৪.৮ ও ২২৪.৬ স্কোর করে অর্জন করেন রৌপ্য পদক। এর কোনোটাতে মাত্র ০.৪ পয়েন্ট বেশি স্কোর করতে পারলে বেলমন্ট শ্যুটিং সেন্টারে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠত। তা না হলেও বাকি দেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন ঠিকই। এ জন্য শ্যুটিং সেন্টারে উপস্থিত বাংলাদেশের শ্যুটার, কোচ ও কর্মকর্তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন বাকিকে। গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবারের মত ‘সাফল্যের’ ছোঁয়ায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান গেমস কভার করতে আসা সাংবাদিকরাও।
দেশকে পদক এনে দিতে পেরে খুশি বাকি। রৌপ্যপদক গলায় ঝুলিয়ে বললেন, ‘আমি জানতাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি স্বর্ণের দিকে নজর দেইনি। আমার টার্গেট ছিল পদক। সেটা পেয়েছি বলে ভালোই লাগছে। তবে আরেকটুকু মনোযোগী হলে হয়ত স্বর্ণও পেতে পারতাম।’ আগের দিন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নেয়ার কথা জানার পর কিছুটা বিচলিত হন বাকি। তিনি বলেন, ‘আমাকে ঢাকাতেই ধারণা দেয়া হয়েছিল এমন কিছু হতে পারে। তাই আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। যদিও আমার ফোকাস ছিল ৫০ মিটার রাইফেলে। যখন জানলাম আমি ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নেব। তখন কিছু সময় অনুশীলন করি। শেষ পর্যন্ত সাফল্য এসেছে-এটাই বড় কথা।’ বাকির কাছে গøাসগো থেকে গোল্ড কোস্টের সাফল্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার কথা, ‘গøাসগো কমনওয়েলথ গেমসে আমার সঙ্গে ভারতের অবিনভ বিন্দার তফাত অনেক ছিল। কিন্তু এবার খুবই কাছে ছিলাম। আরেকটু হলে স্বর্ণ পেতে পারতাম।’
বাকি ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের গøাসগো কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য জিতেছিলেন ২০২.৩ স্কোর করে। আর স্বর্ণ জিতেছিলেন ভারতের বিন্দা ২০৫.৩ মেরে।
বাকির মত সন্তুষ্ট বাংলাদেশের শ্যুটিংয়ের কর্মকর্তারা। শ্যুটিং ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু জানান, কোচ বাকিকে নিয়ে বাজি খেলেছিলেন। তার সেই গেম প্লান সফল হয়েছে। তিনি আরও জানান, শ্যুটিং থেকে বাংলাদেশ আরও সাফল্য আশা করছে। তার এবারের বাজির ঘোড়া শাকিল আহমেদ। তিনি আজ ১০ মিটার পিস্তলে অংশ নেবেন। আর ৫০ মিটার পিস্তলে অংশ নেবেন ১১ এপ্রিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।