Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যা আমার সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না, তা আধুনিকতা নয়-কুমার বিশ্বজিৎ

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিনোদন রিপোর্ট: কুমার বিশ্বজিতের নামের আগে কোনো বিশেষণের প্রয়োজন নেই। সঙ্গীত জগতে তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছেন। তিনি বরাবরই আমাদের সংস্কৃতির কট্টরবাদী। যে কোনো অপসংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চাইলে, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও সোচ্চার হন। দেশপ্রেমিক এবং আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতির ধারক-বাহক সঙ্গীতশিল্পী এই সময়ে সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের বিভিন্ন সমস্যা এবং সংকট নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি সরাসরিই বললেন, আমরা এখন এক ধরনের আইডেন্টি ক্রাইসিসেও ভুগছি। বিষয়টা এমন হয়ে গেছে, আমাদের বাঙালিত্বের মধ্যেও এখন অনেক কিছুর ভিন্নতা তৈরি হয়েছে। যার কারণে এখন কোনোটাই হয় না। না বিদেশি না স্বদেশী, না পরদেশি, না ভিনদেশি। একটা কিছু এলো আর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কোনো ধরনের বিচার-বিবেচনা করছি না। নিজের সংস্কৃতি ভুলে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ, বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত। বিশ্বায়নের এই সময়ে আমরা অসলে কোন দেশি সেটা বলা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব সংস্কৃতি, পোশাকে, মূল্যবোধে এবং সামাজিকতায় কেমন জানি একটা ছাপ পড়েছে। সেখানে সত্যিকারের বাঙালি ব্যাপারগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মনুষত্বের দিক থেকেও মানুষ কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। বাঙালি তো এতটা অ্যাগ্রেসিভ ছিল না। এত ভাগাভাগির চিন্তা করত না। এখন তো কত রকমের আদর্শরে কথা শুনি, খুব বেশি সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, এই যে আমাদের স্বাধীনতা, ভ‚খÐ, একটি পতাকা, এর সঙ্গে তো আমাদের সংস্কৃতির শেকড় রয়েছে। ৩০ লক্ষ লোকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া একটি দেশ। এখন তো বিশ্বায়নের যুগ, চাইলেই কোনো কালচারকে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা যাবে না। সেখানে পরিবর্তন আসবে, তবে আমার মূল জায়গাটা তো ঠিক রাখতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার মূল থেকে কখনো বের হতে চাই না, আর হবও না। আমার একটা নির্দিষ্ট ধারা রয়েছে, যেখানে চিরায়ত বাংলা গানের বিষয় রয়েছে, আমি সে ধারাতেই থাকতে চাই। আমি অত্যাধুনিক কিছু হতে চাই না। তিনি বলেন, এখন বিশ্বায়নের যুগ। তবে সব ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন ভালো লাগে না। সংস্কৃতিটা মায়ের তো। আমার মায়ের কিন্তু একটা আইডেনটিটি আছে। বাঙালি মা। সংস্কৃতিটা যদি আমার মায়ের মতোই হয়ে থাকে, আমি তাকে কতটা আধুনিক করব? আমি একটা অলংকার দিয়ে অলংকৃত করতে পারি। আমি তো আমার মাকে হুট করেই শর্টস পরিয়ে দিয়ে আধুনিক বানাতে পারি না। এটা কী মানাবে? সংস্কৃতিটা হচ্ছে তাই। আমি যতই আধুনিকতা বলি, সেটা কতটুকু আমার কালচারের সঙ্গে যায় তা আমাকে অবশ্যই দেখতে হবে। কারণ প্রতিটা জাতিরই আলাদা একটা ভ্যালুজ আছে। যা আমার সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না, তা আধুনিকতা নয়। আর আধুনিকতাকে ধারণ করতে গিয়ে যারা নিজেরটাই ভুলে যায় তা কখনো আধুনিক হতে পারে না, এটা হচ্ছে পরাজিত হওয়া। এখানে গর্বিত হওয়ার কিছু নেই। বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন এমন হয়ে পড়েছে, যে গায়ক সেই গীতিকবি, সেই সুরকার, সেই ক¤েপাজার। এ ধরনের একটি শ্রেণী তৈরি হয়েছে। এতে অনেক যোগ্য ছেলেমেয়েরা হারিয়ে যায়। এখন তো অনেকে মাইক বাজিয়ে বলে আমার এত লাখ ভিউয়ার্স হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শিল্পীরা যদি মনে করি শ্রোতারা আসলে অজ্ঞ, এটা ভুল। তারা আমাদের চেয়ে ভাল জানে। কারণ তারা দেশি-বিদেশি সব গানেরই খোঁজ-খবর রাখে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংস্কৃতি

২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ