Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মহাসড়ক যানজটমুক্ত ও নিরাপদ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একি হলো! যানজটের জগদ্দল পাথর কি এই মহাসড়কের বুক থেকে কখনোই নামবে না? যানজটের দুর্বিষহ অবস্থার অবসানে এই মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। এ জন্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু যে লক্ষ্যে এত খরচ, সেই যানজটের বিন্দুমাত্র উপশম হয়নি। আগের চেয়ে যানজট আরো বেড়েছে। প্রায়ই ৩০ কিলোমিটার, ৪০ কিলোমিটার ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। গতকালও মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে ৪৫/৪৫ কিলোমিটার যানজটের খবর প্রকাশিত হয়েছে। যানজটের কারণে ৬/৭ ঘণ্টার স্থলে ১২/১৫ ঘণ্টা লেগে যায় চট্টগ্রামে যেতে কিংবা ঢাকায় আসতে। এসময় জনভোগান্তির কোনো সীমা-পরিসীমা থাকেনা। বিমান যাত্রী বিমান ধরতে পারেনা, জরুরি চিকিৎসায় রোগী হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেনা, যাত্রী হিসাবে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদের রোদবৃষ্টিতে রীতিমত নাকাল হতে হয়। আমদানি পণ্য যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনা, রফতানিপণ্য পথে আটকে থাকায় জাহাজ ধরতে পারেনা। এভাবে এ মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের নানারকম দুর্ভোগ, মানসিক যাতনা ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়। এর যেন কোনো শেষ নেই, সমাপ্তি নেই। ২০১৫ সালে এই মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করণের সময় সওজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যানজটের কারণে এই মহাসড়কে ব্যবসায়ীদের বছরে ক্ষতি হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। যাতায়াতে সময় অপচয়ের কারণে যাত্রীদের ক্ষতি হয় ১ হাজার কোটি টাকা। দুর্ঘটনা ও ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে ক্ষতি হয় ৫৭০ কোটি টাকা। এছাড়া জ্বালানি অপচয়ের জন্য ক্ষতি হয় ২ হাজার কোটি টাকা। পরিবেশের ক্ষতি হয় ১ হাজার কোটি টাকার। স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ৩শ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ক্ষতি ১শ কোটি টাকা। সবমিলে ক্ষতি হয় ৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এই হিসাবে দিনে ক্ষতি হয় ২৭৪ কোটি টাকা। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ক্ষতি বর্তমানে আরো বেড়েছে এবং তা ৩শ কোটি টাকার কম নয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে অর্থনীতির লাইফলাইন বলা হয়। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সড়ক পথে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই মহাসড়কটি। দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যাতায়াতেরও এটিই প্রধান অবলম্বন। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দিয়েই দেশের আমদানি-রফতানি পণ্যের অন্তত ৭৫ শতাংশ পরিবাহিত হয়। অথচ এই মহাসড়কে যাতায়াতকে এখনো নিবার্ধ, মসৃন, নিরুপদ্রব ও নিরাপদ করা সম্ভব হয়নি। শুধু যানজট নয়, এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত কত মানুষ যে হতাহত হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। শুধু কি তাই? এই মহাসড়কে দস্যু, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও রাহাজানদের দৌরাত্ম্য লেগেই আছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, এদের দৌরাত্ম্য থামছে না। ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে যাত্রীবাহী বাস পর্যন্তও ডাকাতদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। যে কোনো সময় এদের হানায় সর্বস্ব হারানোর আতংকে থাকতে হয় যাত্রীদের। ডাকাতদের প্রধান টাগেট আমদানি-রফতানিবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। এরা প্রায়ই পণ্যসহ ট্রাক বা কার্ভাড ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে যায়, মালামাল লুট করে। এদের এধরনের বেপরোয়া তৎপরতায় ব্যবসায়ীরা সব সময় সন্ত্রস্ত থাকে এবং হরহামেশা ক্ষতির শিকার হয়। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার ময়নামতি পর্যন্ত অন্তত ১৫টি ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে, যাদের প্রতিটি দলের ১৫ থেকে ২০জন সদস্য রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই কেবল নয়, অন্যান্য মহাসড়কেও যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনা ও দস্যু-ডাকাতের উৎপাৎ-উপদ্রব ও হানাদারি তৎপরতার কারণে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা শংকা, আতংক ছাড়াও নিত্যাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক মানে দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক নয়। মানুষ যাতে নির্দিষ্ট সময়ে, স্বচ্ছন্দে, নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারে প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে তার নিশ্চয়তা বিধান করাই আসল কথা। এরকম সড়ক-মহাসড়কই নিরাপদ সড়কের অভিধা পেতে পারে। নিরাপদ সড়কের জন্য সামাজিক ও সাংগঠনিক প্রয়াস অব্যাহত থাকলেও দু:খের বিষয়, এখনো সড়ক-মহাসড়কগুলো নিরাপদ করা যায়নি।
সড়ক-মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা ও দস্যু-ডাকাতের বেপরোয়া তৎপরতা রোখার ক্ষেত্রে পুলিশের সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য। এ ব্যাপারে হতাশ হওয়ার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত মওজুত আছে। কদিন আগে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের প্রধান কারণ মূলত তিনটি। একটি কারণ হলো, এই মহাসড়কে কোথাও কোথাও এখনো নির্মাণ কাজ চলছে। মহাসড়কের সব অংশের অবস্থাও একরকম নয়। কোথাও কোথাও রাস্তা ভেঙ্গে খানাখন্দক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। অন্য দুটি কারণ হলো, পুলিশের গাফিলতি ও টোলপ্লাজায় চাঁদাবাজি। মহাসড়কে সুশৃংখল যানচলাচল নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যতদ্রæত সম্ভব মহাসড়ক যানচলাচল উপযোগী করাও তাদের দায়িত্ব। চাঁদাবাজি রোধ করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। পুলিশ এইসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে না। উপরন্তু ডাকাতদল ও চাঁদাবাজচক্রের সঙ্গে পুলিশের একশ্রেণীর সদস্যের অনৈতিক যোগসাজসের অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি চাঁদাবাজের ভূমিকাও তাদের দেখা যায়। অথচ পুলিশের পেছনে রাষ্ট্র কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় করে। প্রতি বছর পুলিশের জন্য বিশাল অংকের বরাদ্দ থাকে। এই বরাদ্দ এই জন্য দেয়া হয় যে, পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃংখলা ও নাগরিক নিরাপত্তা বিধানের মহান ব্রতে নিয়োজিত। পুলিশ যাতে কষ্টে না থাকে, ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারে সে জন্যই তাদের পেছনে এত ব্যয় করতে রাষ্ট্র কুণ্ঠাবোধ বা কার্পন্য প্রদর্শন করেনা। পরিতাপের বিষয়, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পালিত-পোষিত পুলিশের কাছ থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যায়না। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। নাগরিক নিরাপত্তা বলতে এখন আর তেমন কিছু নেই। সড়ক-মহাসড়কে স্বাভাবিক নিরাপত্তা পর্যন্ত পুলিশ দিতে পারছে না। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের কথা আর কিছু হতে পারে না। সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদ ও সহজ যাতায়াতের বিষয়টি নাগরিক স্বার্থের সঙ্গে যেমন সম্পৃক্ত তেমনি অর্থনীতির বিবেচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ। এমত প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীসভায় একক আলোচনা হতে পারে। কীভাবে সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা যায়, তাকে নিরাপদ করা যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেয়ার এখনই সময়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন