বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ঈদ উল আজহায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখি জনশ্রোতে এ অঞ্চলের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি ব্যাপক যানযটের সৃষ্টি করছে। ফলে ফরিদপুর-ভাংগা-বরিশাল, ভাংগা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল এবং ভাটিয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনার বিভিন্ন অংশে ব্যাপক যানযটে নাকাল ঘরমুখি মানুষ। ভাংগা থেকে বরিশাল মহানগরী পর্যন্ত টেকেরহাট, মোস্তফাপুর,ভুরঘাটা, গৌরনদী, বাটাজোড়, উজিরপুর টোলপ্লাজা সহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রূপাতলী মিনি বাস টার্মিনাল ও সাগরদী বাজার এলকায় এখন ব্যাপক যানযটে সব কিছু স্থবির হয়ে যাচ্ছে।
এমনকি ঈদেকে সামনে রেখে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলমুখি জনশ্রোত অব্যাহত থাকার মধ্যেই ভাংগায় এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক যানযটে যাত্রীরা চরমভাবে নাকাল হচ্ছেন। ৬০ বছরের পুরনো ও মেয়াউত্তীর্ণ অপ্রসস্ত মহাসড়কটির বিভিন্নস্থানে বাজার ও দোকানপাটের সাথে নানা অবৈধ যানবাহনের ভীড়ে দিনরাত যানযট লেগেই আছে। ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ভাংগা অতিক্রমের পরেই যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে মাত্র ১৬৫ কিলোমিটার দুরের বরিশালে পৌছতেই এখন সাড়ে ঘন্টা থেকে ৬ ঘন্টাও লেগে যাচ্ছে। দক্ষিনাঞ্চলের অন্যন্য গন্তব্য আরো অনেক দুরে।
তবে সড়ক পথের নানা বিড়ম্বনার মধ্যেই যথেষ্ঠ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পরিবহন সেক্টর। শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথেই গত তিনদিন ধরে ২০টিরও বেশী বৃহদাকার বেসরকারী যাত্রীবাহী নৌযান ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করছে। প্রায় প্রতিটি নৌযানেই ধারন ক্ষমতার দ্বিগুনেরও বেশী যাত্রী নিয়ে মাঝ রাতে বরিশালে পৌছে যাত্রী নামিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে ঘরমুখি মানুষকে নিয়ে আসতে।
বৃহস্পতিবার ঈদের আগে শেষ কর্ম দিবসে অফিস ছুটির পরে রাতেই ঢাকা থেকে প্রায় ৫০টি নৌযান দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী বোঝাই করে যাত্রা করে। বরিশাল মুখি নৌযানগুলো শুক্রবার রাতের প্রথম প্রহরে এ বন্দরে যাত্রীদের নামিয়ে শেষ রাতেই ঢাকায় ফিরে যায়। এসব নৌযান ঢাকায় পৌছে শুক্রবার সন্ধায় পুনরায় যাত্রী বোঝাই করে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মাঝ রাতেই বরিশালে যাত্রী নামিয়ে আবার ফিরে গেছে। এমনকি শুক্রবার সকালেও কয়েকটি নৌযান ঢাকা থেকে যাত্রী বোঝাই করে বিকেলের মধ্যে বরিশালে নোঙর ফেলে। এসব নৌযনেরও বেশীভাগই যাত্রী নামিয়ে পুনরার ঢাকায় ফিরে শণিবার সকাল থেকে দুপুরের আগেই আবার বরিশালে ফিরছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের নৌযানগুলো অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পন্ন হওয়ায় মাত্র ৬ ঘন্টায় ১৬৫ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে বরিশালে পৌছছে।
অপরদিকে সড়কপথে ভাংগা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার মহাসড়ক অতিক্রম করতেই এখন প্রায় ৩ ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। অথচ ফরিদপুর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত দেশের ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের ২১০ কিলোমিটার ৬ লেনে উন্নীত করার লক্ষে গত ১০ বছর ধরেই অনেক আশার বাণী শোনা যাচ্ছে। এমনকি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থে ২০১৫ সাল থেকে এ লক্ষে সম্ভব্যতা সমিক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন করা হলেও বরিশাল বাইপাস অন্তর্ভূক্ত না করা সহ নানা ত্রুটির কারণে তা বাতিল হয়ে গেছে। এডিবি এখন পুনরায় ঐ সমিক্ষা সহ নকশা প্রনয়ন করতে বলেছে। পরবর্তিতে তারা এ প্রকল্পে অর্থয়নের কথা বিবচেনার কথাও জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
পদ্মাসেতু চালু হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পরিবহন সেক্টরে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল, ঈদকে কেন্দ্র করে তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন নৌযান মালিকগন। ঈদের আগের মত পড়ের অন্তত ১০ দিনও দক্ষিণাঞ্চল থেকে চাঁদপুর ও ঢাকার নৌপথে নুন্যতম ৫ লাখ যাত্রী পরিবহনের আশা করছেন নৌযান মালিকগন।
বিগত দু বছর করোনা সংকটে দক্ষিণাঞ্চলে ঘরমুখি যাত্রীর সংকট ছিল। দু বছরই কয়েক দফায় নৌপথে যাত্রী পরিবহনও বন্ধ থাকায় নৌযানের ব্যাবসায় মহাসংকট ঘনিভুত হয়। সে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার মধ্যেই পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নৌ বানিজ্যে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে দাবী করেছেন নৌযান মালিকগন।
তবে এবারো অন্তত দশ লাখ মানুষ আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছেন। একাধিক নৌযান মালিক জানিয়েছেন, শণিবার সকাল পর্যন্ত অনেক গার্মেন্টসই খোলা ছিল বেতন বোনাস দেয়ার জন্য। শণিবারে শ্রমিকরা টাকা হাতে পেয়ে বিকেলে ঘরমুখি যাত্রা শুরু করবেন। এসব বিবেচনায় নৌযান মালিকগন ঈদের আগের দিন, শণিবার সন্ধা পর্যন্ত ঢাকা থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি রুটে ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করছে। এভাবে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন নৌযান মালিকগন। কর্মস্থলমুখি বাড়তি যাত্রী পরিবহনে ঈদের পরের এক সপ্তাহ ‘যথেষ্ঠ ভাল’ এবং পরের সপ্তাহেও নৌ পরিাবহন ব্যাবসা ‘কিছুটা ভাল’ থাকবে বলে আশা করছেন বেসরকারী নৌযান মালিকগন।
অন্যান্য বছর দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ ঘরমুখি মানুষ নৌপথে যাতায়াত করলেও পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তার একটি বড় অংশই নৌপথ ছেড়ে সড়ক মুখি হয়েছেন। ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বছর বেসরকারী নৌযানে ভাড়া বৃদ্ধির যে প্রবনতা লক্ষ্য করা যেত, এবার তা কিছুটা অনুপস্থিত। পাশাপাশি যাত্রীদের সাথে নৌযান কর্মীদের আচরনেরও এবার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষণীয়। নৌযানের মালিক ও কর্মচারীরা যাত্রীদের আবার নৌপথ মুখি করতে সম্ভব সব কিছু করছে এবং করবে বলেও জানিয়েছেন একাধীক নৌযান মালিক।
বিভিন্ন দিক বিবেচনায় ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক ঘরমুখি মানুষ এখনো নৌপথকেই বেছে নিচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।