বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার এখনো কুল কিনারা হয়নি। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা সিটিটিসি। তবে বাড়িটি মালিককে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে গত জানুয়ারীতে। ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় ‘সূর্যভিলা’ নামের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। ‘অপারেশন রিপল ২৪’ নামে শ্বাসরুদ্ধকর ১৬ ঘণ্টার ওই অভিযানে নিহত হয় দুই জঙ্গি। তবে অভিযান চলাকালে বাড়িটির ওই আস্তানায় থাকা দুই নারী জঙ্গি ও দুই শিশু আত্মসমর্পণ করে।
এই ঘটনার একবছর পর‘সূর্যভিলা’ বাড়ির নিচতলার ওই ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেছেন ভাড়াটিয়ারা। এ বছরের জানুয়ারি মাসে জঙ্গিদের আস্তানার ওই ফ্ল্যাটি ভাড়া দেন বাড়ির মালিক। বাড়ির সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ভেতরে ও বাইরে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নির্মাণ করা হয়েছে প্রধান ফটক।
সিটিটিসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,অপারেশন রিপল-২৪ অভিযানের পরপরই সব আলামত সংগ্রহ করা হয় তবে নানা কারণে প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব হচ্ছে। হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর রাজধানীসহ সারাদেশে একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। একটি অভিযান অন্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর আশকোনায় ‘সূর্যভিলা’ বাড়িতে যে অভিযানটি হয়েছে, সেটি হোলি আর্টিজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই নির্ভুল চার্জশিট তৈরির জন্য কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।
সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আব্দুল মান্নান বলেন, এ মামলার তদন্ত এখনও চলছে। চার্জশিট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। নির্ভুল চার্জশিট তৈরিতে কিছুটা সময় লাগছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) মনিরুল ইসলাম বলেন, আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের আগে গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে আমরা জানতে পারি, ওই আস্তানায় থাকা জঙ্গিরা বড়দিনের অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা করেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমার অভিযান পরিচালনা করি। কয়েকজন জঙ্গিকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করি এবং বাকিরা সেখানে নিহত হয়। এর মধ্যে একজন নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হয়।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল গনি সাবু বলেন, সূর্যভিলা বাড়িতে জঙ্গি অভিযানের পর থেকে পূর্ব আশকোনা এলাকার সবাই অনেকটা সচেতন হয়ে গেছে। এখন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা সবাই থানা-পুলিশকে নিজেদের তথ্য দিচ্ছেন। এখন সবাই নিয়ম মেনে চলেন।
তিনি বলেন, এছাড়া বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণখান থানার বিট অফিসার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রতিনিয়ত সেগুলো হালনাগাদ করা হচ্ছে।
সূর্যভিলা বাড়িতে ‘অপারেশন রিপল-২৪’ অভিযানের পর ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাতে আটজনকে আসামি করে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আত্মসমর্পণ করা নারী জঙ্গি তৃষা মনি, জেবুন্নাহার শিলা, শাকিরা, আফিফ কাদেরী, মাইনুল ওরফে আবু মুসা, রাশেদুর রহমান ওরফে সুমন, মো. সেলিম ও মো. ফিরোজকে এ মামলায় আসামি করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সিটিটিসি’র অভিযানের পর তদন্তের স্বার্থে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ফ্ল্যাটটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিম্মায় নেওয়া হয়। সব আলামত সংগ্রহের পর তদন্ত সংস্থা ফ্ল্যাটটি পুনরায় বাড়ির মালিকের কাছে হস্তান্তর করে।
সূর্যভিলা বাড়ির মালিক পক্ষ জানায়, অভিযানের পর ফ্ল্যাটটি তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিম্মায় ছিল। বেশ কিছুদিন পর ফ্ল্যাটটি আমাদের বুঝিয়ে দেয়। এরপর ফ্ল্যাটের মেরামতের কাজ শুরু করা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটে একটি পরিবার ভাড়ায় ওঠে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা ছিলেন, তারপর চলে যান। পরবর্তীতে মার্চ মাসের শুরুতে আবারও নতুন ভাড়াটিয়া এসেছেন।
সূর্যভিলায় ‘অপারেশন রিপল-২৪’ নামে সিটিটিসি’র অভিযানে নিহত হয় দুই জঙ্গি। তাদের মধ্যে শাকিরা নামের এক নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হয়। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় আফিফ কাদেরী ওরফে আদর নামে এক কিশোর জঙ্গি। তার বাবা আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত তানভির কাদেরী। এছাড়া,ওই অভিযানে রূপনগরে নিহত জঙ্গি নেতা মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার ও তার সন্তান এবং নিহত জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষামনি ও তার সন্তান আত্মসমর্পণ করে। অভিযানের পর ঘটনাস্থল থেকে ১৯টি গ্রেনেড, তিনটি পিস্তল ও দুটি সুইসাইডাল ভেস্টসহ বোমা তৈরির বেশকিছু সরঞ্জাম জব্দ করে পুলিশ। পরে গোয়েন্দা পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট উদ্ধার করা গ্রেনেডগুলো কয়েক দফায় নিষক্রিয় করে।
অভিযানের পর সূর্যভিলা বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটটি গুলি ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফ্ল্যাটটি মেরামতের জন্য সহযোগিতা করেছে বলে জানান বাড়ির মালিকের বড় মেয়ে জোনাকি।
তিনি বলেন,নিচের ফ্ল্যাটটি বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমরা সেটি মেরামত করি। এর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। এখন কোনও সমস্যা নেই। নিচের ফ্ল্যাটটিতে গত তিন মাস ধরে ভাড়াটিয়ারা বসবাস করছে।
জোনাকির স্বামী মো. রাসেল বলেন,ওই ঘটনার পর আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তারা বাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের অনেক পরামর্শ দিয়েছে। আমরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারি, সেজন্য বাড়ির ভেতরে ও বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরাও স্থাপন করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন অনেকটা সতর্ক। বাড়ির সব ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছি। কে কী করেন, সে বিষয়গুলোও নজরে রাখার চেষ্টা করছি।
সংস্কারের পর নতুন সাজে সূর্যভিলার নিচ তলাপূর্ব আশকোনা এলাকার বাসিন্দারা জানায়, সূর্যভিলা বাড়ির মালিক কুয়েত প্রবাসী। তিনি দু-তিন মাসে একবার দেশে আসেন। তবে বাড়িটির সবকিছু দেখভাল করেন তার বড় মেয়ে জোনাকি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পর থেকে এই এলাকার প্রায় সব বাড়ির মালিকই এখন ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখছে। পুলিশও মাঝে মাঝে এসে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে তথ্য নিয়ে যায়।
জোনাকিদের প্রতিবেশী ফারজানা বলেন, যখন অভিযান হয়েছিল, তখন এই বাড়ির মূল ফটকে ছিল টিনের দরজা। আর নিচ তলাটি ছিল নির্মাণাধীন। বেশ কিছুদিন আগে বাড়ির মালিক দেশে এসে নতুন গেইট নির্মাণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।