নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : গত চব্বিশ ঘন্টায় যেন টর্নেডো বয়ে গেল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) উপর দিয়ে। সেই উত্তাল পরিস্থিতি যে এখনো থেমেছে তা নয়। তবে আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা ‘শান্ত’ হয়েছে কেপটাউন টেস্টের মাঝেই অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও তার ডেপুটি ডেভিড ওয়ার্নারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। অবস্থা এমন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞাও পেতে পারেন স্মিথ-ওয়ার্নার!
অভিযোগ গুরুতর বললেও কম বলা হবে। ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা সন্দেহ। দলীয়ভাবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বল টেম্পারিং করেছে অস্ট্রেলিয়া। কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিনের ঘটনা। ঐ দিনই ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সবকিছু স্বীকার করেন স্মিথ। আসল টিভি ক্যামেরায় সবকিছু স্পষ্ট ধরা পড়ায় অপরাধ স্বীকার করতে বাধ্য হন তিনি। এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ভবিষ্যতে এমন কলঙ্কজনক কাজ তার নেতৃত্বে আর হবে না বলে আস্বস্থ করেন অজি দলপতি। তাদের এই পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দেন দলের সিনিয়র আট খেলোয়াড়। তবে এই পরিকল্পনায় কোচ বা টিম ম্যানেজমেন্টের হাত নেই বলে জানান স্মিথ। এতকিছুর পরও অধিনায়কের পদ থেকে তিনি সরে যাবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন। কিন্তু তার এই বাসনা পূরণ হয়নি। ঘটনার রেশ না কাটতেই তাকে সরে যেতে হয়েছে। তার পরিবর্তে টেস্টের বাকি সময়ে দলকে নেতৃত্ব দেবেন দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান টম পাইন।
দলের এহেন কর্মকাÐে বিষ্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেন সিএ’র প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড, ‘অস্ট্রেলীয়রা তাদের ক্রিকেট দলকে নিয়ে সব সময়ই গর্বিত। কিন্তু আমি নিশ্চিত, আজ (গতকাল) ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর তাদের সেই গর্ব কিছুটা হলেও ¤øান হয়েছে।’ এই ঘটনায় ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থি উল্লেখ করে সাদারল্যান্ড আরো বলেন, ‘ক্রিকেট খেলাটির একটা বিশেষত্ব আছে। সেটি হচ্ছে, খেলাটি কেবল নির্দেশিত নিয়মকানুন মেনেই অনুষ্ঠিত হয় না, এর কিছু আলাদা চেতনাবোধ আছে। গতকাল বিকেলে কেপটাউন টেস্টে যা হয়েছে, সেটি আইনের মধ্যে তো পড়েই না, ক্রিকেটীয় চেতনার সঙ্গেও সেটি যায় না।’
ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তোলা এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন খোদ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। এমন ঘটনার পর স্মিথ অধিনায়ক থাকার মর্জাদা খুঁইয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ায় সবকিছু ঘটে যায় যেন মুহূর্তেই। কালই স্মিথ ও ওয়ার্নারের পদ হারানোর বিষয়টা নিশ্চিত করেন সাদারল্যান্ড।
এখানেই শেষ নয়। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্যে জরুরি বোর্ড সভার পর সিএ নৈতিকতাসংক্রান্ত বিভাগের প্রধান ইয়ান রয় ও দলের টিম পারফরম্যান্স ম্যানেজার প্যাট হাওয়ার্ড কেপটাউনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
তৃতীয় দিনের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় বল বিকৃতি করার পরিকল্পনা নেয় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ বাঁচাতেই তারা এমন জঘন্য প্রতারণার আশ্রয় নেন বলে জানান স্মিথ। ঐ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার লিড একশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বোলিংয়ে কোন সুইং পাচ্ছিলেন না অজি বোলাররা। পরিকল্পনা অনুযায়ী হলুদ রঙের টেপ ব্যবহার করা হয় বল টেম্পারিংয়ের কাজে। বাড়তি সুই আদায় করার লক্ষ্যে হলুদ টেপে বালি মিশিয়ে তা বলে ঘষা হয়। চা বিরতির সময় তা টেলিভিশন ক্যামেরায় ধরা পড়ে। মাঠের আম্পায়ারের চোখ এড়ালেও টিভি পর্দায় দেখা যায় ক্যামেরন ব্যানক্রফট পকেট থেকে হলুদ রঙের কিছু একটা বের করে তা বলে ঘষছেন। সেই টেপ পকেটে রাখার দৃশ্যও ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা টিভি আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডের নজরে এলে তিনি মাঠের আম্পায়রকে বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্যে জানান। মাঠের আম্পায়ার ব্যানক্রফটকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি পকেট থেকে সানগøাস পরিষ্কার করার হলুদ কাপড় বের করে দেখান। তার আগেই তিনি হলুদ টেপ নিজের অন্তর্বাসে লুকিয়ে ফেলেছেন। তাৎক্ষনিক আম্পায়ারের চোখে ধুলো দিতে পারলেও পরে ঠিকই ধরা পড়ে যান ব্যানক্রফট।
বল বিকৃতিতে ব্যানক্রাফটকেই কেন বেছে নেয়া হয়েছে তারও যুক্তি তুলে ধরেন স্মিথ। ব্যানক্রফট হলেন দলের সবচেয়ে নতুন খেলোয়াড়। মাত্র আটটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা তার। টিভি ক্যামেরা তাকে কম অনুসরণ করবে বলেই তাকে বেছে নেয়া। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ঠিকই ভেস্তে যায়।
স্মিথ-ব্যানক্রফটের শাস্তি
স্মিথ ব্যানক্রফট যেখানে স্বীকার করেছেন দলীয় পরিকল্পনায় তারা বল বিকৃতি করেন, সেখানে কেবল স্মিথ ও ব্যানক্রফটকে সাজা দিয়েই দায় সেরেছে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন স্মিথ। সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ম্যাচ ফির পুরোটাই (১০০ শতাংশ)। বল টেম্পারিংয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি এটিই। ব্যানক্রফটের নামের পাশে বসানো হয়েছে তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট। তার জরিমানা ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ। তার মানে জোহানেসবার্গে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে খেলতে পারবেন না স্মিথ। তবে পরোক্ষভাবে দলের বাকি সদস্যরা জড়িত থাকার পরও তাদের শাস্তি দেয়নি আইসিসি।
আইসিসির চিফ এক্সিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসন স্মিথের বিরুদ্ধে আইসিসি কোড অব কন্ডাক্টের ২.২.১ ধারায় অভিযোগ আনেন। খোনে বলা হয়েছে, ‘খেলার নিয়মের পরিপন্থি যে কোন ধরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ করা হবে।’ একই সঙ্গে স্মিথের নামের পাশে দুটি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ করা হবে। সব মিলে তার নামের পাশে এখন জমা পড়বে চারটি ডিমেরিট পয়েন্ট। স্মিথ তার প্রতি আনিত শাস্তি মেনে নিয়েছেন। রিচার্ডসন বলেন, ‘দলের অধিনায়ক হিসেবে এই সব খেলোয়াড়দের দায়ভার নিতে হবে স্টিভেন স্মিথকে এবং তাকে নিধিদ্ধও হতে হবে।’
সিএর দুঃখ প্রকাশ
জাতীয় ক্রিকেট বলের এমন নেক্কারজনক কর্মকান্ডের জন্য ভক্ত ও সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। সিএর চিফ এক্সিকিউটিভ জেমস সান্ডারল্যান্ড বলেন, ‘আমরা দুঃখিত। আমরা দুঃখিত এই কারণে যে, আজ (গতকাল) সকালে আপনাদের ঘুম ভেঙেছে দক্ষিণ অফ্রিকা থেকে ভেসে আসা এমন খবরে। যেখানে আমাদের পুরুষ ক্রিকেট দল ও আমাদের অধিনায়ক এমন কান্ড করেছেন যা ক্রিকেটের আইন বা নিয়মের পরিপন্থি। এমন আচরণ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সততাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। আমরা জানি এই পরিস্থিতিতে আপনাদের অনুভুতি কি। আমরা আপনাদের ক্ষোভ ও হতাশায় সমবেদনা প্রকাশ করছি।’
সাবেকদের প্রতিক্রিয়া
কোন সন্দেহ নেই যে, ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী দল অস্ট্রেলিয়া। সেই সব অর্জন এখন প্রশ্নের মুখে। এই ঘটনায় তাই স্বাভাবীকভাবেই অপনানিত দলটির সাবেক খেলোয়াড়রা। এমনটিই বলেছেন দলটির সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এখন সবার হাসির খোরাক’ বলে মন্তব্য করেছেন দলের আরেক সাবেক তারকা অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।
ক্রিকেট মাঠে গিলস্ট্রিস্টের নৈতিকতা স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত। তার আউট আম্পারের চোখ এড়ালেও নিশ্চিত আউট জেনে নিজেই সাজঘরের পথ ধরতেন। তার এমন কাজে খোদ তখনকার অধিনায়ক রিকি পন্টিংও খুশি হতে পারেননি। কিন্তু গিলক্রিস্ট তার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। সেই তার উত্তরসূরিরাই কিনা দলীয়ভাবে বল টেম্পারিংয়ের মত পরিকল্পনা করছেন! লজ্ঝিত অপমানিত গিলক্রিস্ট তাই বলেই ফেললেন, ‘এটা এখন অন্য জিনিসকেও কলুসিত করবে। সবাই এখন অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্ন তুলবে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট, যা আমাদের অনেক গৌরবের স্থান তা এখন সবার হাসির খোরাক। মানুষ এখন আমাদের আগের কীর্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলবে।’
ক্লার্ক তো রিতিমত আরো ক্ষুদ্ধ। নিজের টুইটারে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘এসব কিসের মাঝে ঘুম ভাঙল আমার! দয়া করে কেউ বলুন, আমি দুঃস্বপ্ন দেখছি।’ একটি টেলিভিশন চ্যানেলে নিজের সাক্ষাতকারে ক্লার্ক বলেন, ‘যদি দলীয় টেম্পারিংয়ের বিষয়টা আসে তাহলে দলের সিনিয়রদের সবাই আধিনায়ক হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’ এমতাবস্থায় বোর্ড থেকে যদি তাকে ক্রিকেটে ফিরে দলের দায়ীত্ব নিতে হলা হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লার্ক বলেন, ‘যদি সঠিক কেউ (বোর্ড) জিজ্ঞেস করে, আমি অবশ্যই ভেবে দেখব।’
ক্লার্কের এমন মন্তব্য দেশের ক্রিকেটের করুণ দশার কারণে নাকি সত্যি সত্যি তা হয়ত দ্রæতই বোঝা যাবে।
শেষটাও লজ্জাজনক হারে
এমন ম্যাচে মাঠের খবর অনেকটাই গৌণ। তবে এতকিছু করেও হার এড়াতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ৪৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০৭ রানেই গুটিয়ে ম্যাচ হেরেছে ৩২২ রানে। মরকেল ৫, রাবাদা ৪ ও মহারাজ নিয়েছেন ২টি উইকেট।
বিনা উইকেটে ৫৭ রান থেকে ৫৯ রানে ৪ উইকেটে পরিনত হয় তাদের ইনিংস। ৫৯ রানে দাঁড়িয়েই ফেরন তিন ব্যাটসম্যান। ব্যানক্রফটের রান আউটের মাধ্যমে ধসের শুরু। শেষ ৫০ রানেই তারা হারায় ১০ উইকেট।
এর আগে ৫ উইকেটে ২৩৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে ৩৭৩ রানে। ৩টি করে উইকেট নেন হ্যাজলউড, কামিন্স ও লায়ন। ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন লেগ স্পিনার লায়ন। ডি ভিলিয়ার্সের পর ফিফটি ইনিংস খেলেন কি কক ও ফিল্যান্ডার। মধ্যাহ্ন বিরতির ঘন্টা খানেক পর শেষ হয় তাদের ইনিংস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।