Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে মানুষের প্রত্যাশা

ড. আব্দুল হাই তালুকদার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রাষ্ট্র থাকলে পুলিশ থাকবে। আভ্যন্তরীণ শান্তিশৃংখলা ও জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনী অপরিহার্য। সেকারণে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। জনগণের সমস্যা-সংকটে পুলিশ জীবন বাজি রেখে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে হলেও এগিয়ে আসে। জনগণের কল্যাণে পুলিশ সদা সতর্ক। সে কারণে বলা হয়, পুলিশের দায়িত্ব ২৪ ঘণ্টা। যে কোন সময় তাদের ডাক পড়তে পারে। রাত ১২টার সময় ঘুমিয়ে পড়েছে, এমন সময় কোন নাগরিক বিপদে পড়েছে। তাকে উদ্ধার করতে হবে। ডাক পড়ার সাথে সাথে ঘুম শিকেয় তুলে রেখে পুলিশকে দৌড় দিতে হয়। জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বেতন-ভাতা পায়। ফলে জনসেবা তাদের প্রধান ও পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা অপারগতার কোন সুযোগ নাই। নৈতিক কর্তব্য পালন থেকে যেমন ছুটি নাই, তেমনি কোন কিছু বাধা হতে পারে না। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও একজন পুলিশকে দায়িত্ব পালনে সদা নিয়োজিত থাকতে হয়। সেকারণে পুলিশের ঝুঁকিভাতার পরিমাণ অনেক বেশি। প্রফেসর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তির ঝুঁকিভাতা নাই। এসব পেশায় ঝুঁকি থাকে না, ফলে ঝুঁকি ভাতার প্রশ্ন উঠে না। কিন্তু পুলিশের জীবন সব সময় ঝুঁকিতে থাকে। তারা মানুষের সমস্যা-সংকট মোকাবেলার সাথে, তার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকে। সমস্যা-সংকট মানব জীবনে অহরহ দেখা যায়। এসব সংকটের কিছু আছে প্রাকৃতিক ও কিছু মানব সৃষ্ট। বাংলাদেশ রাজনৈতিক দিক দিয়ে এক সংকটকাল অতিক্রম করছে একথা জোর দিয়ে বলা যায়। এ রাজনৈতিক সংকটটি কৃত্রিম, মানব সৃষ্ট। এ মানব সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের সমাধানও মানুষের হাতে, অর্থাৎ রাজনীতিকরা এক্ষত্রে বসে এ সংকটের সমাধান করবেন প্রত্যাশিত হলেও একটি দল আলাপ-আলোচনা ও সংলাপে অনাগ্রহী। তার নেতারা বসতেই নারাজ। এ রাজনৈতিক সংকটকে তারা সংকট হিসাবে বিবেচনা না করে বল প্রয়োগে সমাধানে আগ্রহী। তাদের সহায়তা দিচ্ছে জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় পালিত পুলিশ বাহিনী। পুলিশ বাহিনী পেশাদারিত্ব হারিয়ে সরকারের পেটুয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। বিএনপি নামক বৃহত রাজনৈতিক দলকে ছলে, বলে, কৌশলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা পুলিশ বাহিনীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এটি বিনা ভোটে নির্বাচিত স্বঘোষিত একটি সরকারকে বৈধতা দিয়ে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা। ২০১৪ সারের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রতিদ্বিদ্বতাহীন নির্বাচনে পুলিশ সরকারি দলের বাহিনীর মতো কাজ করেছে। এরপর থেকে পুলিশ ও বেসরমারিক প্রশাসন সরকারকে জোর করে টিকিয়ে রেখেছে। পুলিশ বাহিনীতে উৎকট দলীয়করণ দেখা যায়। এর সদস্যরা মূলতঃ সরকার ও সরকারি লোকজনের সেবকে পরিণত হয়েছে। দেশের একটি বিরাট অংশের মানুষের সেবক না হয়ে পুলিশ বাহিনী প্রভ‚ সেজেছে। অথচ তার বেতন ভাতার যোগানদাতা কিন্তু দেশের সকল শ্রেণির মানুষ। পুলিশ সকলের না হয়ে একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের সেবকের পরিচিতি পেয়েছে, যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য লজ্জা ও কলংকের। 

বাংলাদেশের মানুষ পুলিশের কর্মকান্ড দেখে খুশি হতে পারছে না। তারা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য পুলিশকে বন্ধু ভাবতে পারে না। পুলিশকে মানুষ ভয় করে এবং তাদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। পুলিশের অযাচিত বাধা কর্মসূচি পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বাধাহীনভাবে নির্বেঘ্নে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। অথচ সরকার ও জোটবদ্ধ দলগুলো বিনাবাধায় মুক্ত বিহঙ্গের মত রাজনৈতিক ময়দান চষে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের কর্মসূচিতে বাধা না দিয়ে বরং সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। একটি উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ প্রাণপণে নাগরিকদের সেবা করে থাকে। নাগরিকদের জানমালের নিশ্চয়তা দিতে ঐসব রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ। জানমালের নিরাপত্তার সাথে পুলিশ নাগরিকদের মান-সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রেখে কাজ করে। তারা সরকারি দল ও বিরোধীদলের মধ্যে কোন সীমারেখা টানে না। কোন বিশেষ দলের সেবক না হয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের বন্ধু হিসেবে পুলিশ বাহিনী সেবা দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকারি দল, বিরোধীদল, এমন কি সাধারণ মানুষ পুলিশের নিকট সমান আচরণ ও মর্যাদা পেয়ে থাকে। তারা কোন দলের বাহিনী না হয়ে, জনতার বাহিনী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী জনতার বাহিনী না হয়ে সরকারি বাহিনী হিসেবে কাজ করছে বলে জনগণের পারসেপশন তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক আন্দোলন করতে গেলে পুলিশী বাধায় কর্মসূচি পন্ড হওয়া প্রায়ই লক্ষ করা যাচ্ছে। একটি ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, ৪/৫ জনকে নাম ধরে আসামী করার সাথে সাথে শত শত বেনামী আসামী করে মামলা দেয়া হচ্ছে। এতে কোন রাজনৈতিক কর্মী নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছে না। একজন কর্মী হয়ত ঘটনাস্থলে ছিলই না, অথচ বেনামী আসামীর তালিকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার, নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকার পরও অনেক কর্মীকে আসামী করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে জেলখানা ও আদালতে দৌড়াদৌড়ি করছে। পুলিশ বাহিনী হবে আইনের সেবক। একটি স্বাধীন দেশের পুলিশ বাহিনীর নিকট মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এর সদস্যরা সর্বক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগ করবেন, পক্ষাপাতিত্ব করবেন না। ক্ষমতাবান, ক্ষমতাহীন, ধনী-গরীব, সাধারণ খেটে খাওযা শ্রমজীবী সকলে পুলিশের নিকট নিরপেক্ষ আচরণ প্রত্যাশ করে। সকলে সংবিধানসম্মত সমআচরণ ও ব্যবহার পেলে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যেতে বাধ্য। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক সময় মিথ্যা, ভূয়া ও বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়, রিমান্ডে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয় যা অত্যন্ত দুঃখজনক, নিন্দনীয় ও অনৈতিক কর্ম। কয়েকদিন আগে ঢাকায় ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেনকে পুলিশ ধরে নিয়ে রিমান্ডে নেয়। ছেলেটি পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। একজন সুস্থ, সবল যুবক ছেলের মৃত্যু জনমনে নানা প্রশ্ন জাগায়। পরিবার দাবি করেছে, পুলিশ তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক। শুধু এই জাকির হোসেন নয়, এরূপ বহু ঘটনা ঘটছে। পুলিশ হেফাজতে অনেক ছাত্র, যুব ও রাজনৈতিক নেতার করুণ মৃত্যু পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করছে।
সভাসমাবেশ, মিছিল-মিটিং, বিক্ষোভ কর্মসূচি, মানব বন্ধন, কালোপতাকা প্রদর্শন প্রভৃতি রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। আমি নিজে জয়পুরহাটে এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দেখলাম পুলিশ পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে। বিশ^বিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কোনদিন বাধা পাইনি। কিন্তু জয়পুরহাটে বাধা পেয়ে গলির মধ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি, মানব বন্ধন প্রভৃতি করতে বাধ্য হলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা অবিরত বলছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। অথচ বাধা দেয়া হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, পুলিশ কি স্বউদ্যোগে এসব করছে? দেশের অনেক জায়গায় পুলিশী বাধায় অনেক কর্মসূচি পন্ড হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীকে ধীর-স্থির, ধৈর্য্যশীল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রতি আরও সহনশীল হতে হবে। এসব নেতাকর্মী একসময় রাষ্ট্র-ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটিই নিয়ম। তাই আমাদের আহবান, পুলিশ সকল দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সম ও উদার আচরণ করবে। কারণ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এ দেশের সন্তান। মানুষ রাজনৈতিক জীব। রাজনীতি করার অধিকার সকলের সংরক্ষিত। গণতন্ত্র না থাকলে রাজনীতিও থাকে না। দেশে যেহেতু গণতন্ত্র আছে বলে দাবি করা হয়, সেকারণে রাজনীতি করার অধিকারও থাকতে হবে। বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা যাতে স্বচ্ছন্দে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে, সেরকম পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকার ও পুলিশ বাহিনীর নিকট প্রত্যাশিত। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশের নিকট থেকে অনুমতি নিতে হয়। বিএনপি বার বার আবেদন নিবেদন করেও অনুমতিবঞ্চিত হয়। দু’একটি ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে অনুমতি পাওয়া গেলেও নানারকম শর্ত থাকায় তড়িঘড়ি করে সভা শেষ করতে হয়। অথচ সরকারি ও সরকারি জোটের শরীকদের অনুমিত পেতে কোন অসুবিধা হয় না। পুলিশের এরূপ কর্মকান্ড প্রশংসিত হবার বদলে নিন্দিত হয়। একই দেশে স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্নভাবে আইনের প্রয়োগ দৃষ্টিকটু ও সমালোচনার খোরাক যোগায়।
৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি দল জমকালো আয়োজনে বিশাল জনসভা করেছে। সেখানে পুলিশের অনুমতি পেতে ও অবাধে সভা করতে কোন অসুবিধা হয়নি। বিএনপি ১২ মার্চ অনুমতি চাইলেও জননিরাপত্তার অজুহাতে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। বিষয়টি খুবই আপত্তিজনক ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। একদল সভা করতে চাইলে সানন্দে অনুমতি দেয়া হয়, আর একটি দল অনুমতি চাইলে জননিরাপত্তার অজুহাত তোলা হয়, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একই দেশে দু’রকম আইন মানবাধিকারের চরম লংঘন। বিএনপি নেত্রী জেলখানায়, তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে, সমতল মাঠ না পাওয়ায় তারা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর। তবে সুখের বিষয় হলো তারা সহিংস পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। খুলনা হাদিস পার্কে বিএনপি ৮ মার্চ সভা করার অনুমতি চেয়ে পায়নি। মহিলা আ.লীগ একই সময় সেখানে সভা ডাকায় পুলিশ নাকি বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে। অনুমতির ক্রমানুযায়ী ব্যবস্থা নিলে বিএনপিকে বঞ্চিত করতে হত না এবং পুলিশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হতো। দুঃখের বিষয়, পুলিশ সরকারের মন রক্ষা করতে গিয়ে বিএনপিকে পার্টি অফিসের সামনে সম্মেলনটি করতে দিয়েছে। শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা হাদিস পার্ক নয়, এরূপ ঘটনা দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই অহরহ ঘটছে। খোঁড়া অজুহাত ১৪৪ ধারা জারি করে বিএনপিকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়ায় উদাহরণের অভাব নাই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চের জনসভা ঘিরে নারীদের যেভাবে লাঞ্চিত হতে হয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও নিন্দাজনক। ঐ সময় যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে জননিরাপত্তা বজায় থাকেনি এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এটিকে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় চরম উদাহরণ বলা যায়। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে বিএনপিকে অনুমতি দেয়া হয় না, কিন্তু আওয়ামী লীগের সভায় জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এরূপ পূর্বাভাষ গোয়েন্দা রিপোর্টে পাওয়া যায় না। এসব যুক্তি ধোপে টেকে না। এতে সরকারের ভাবমর্যাদার সাথে পুলিশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, দুর্নাম রটে ও পুলিশ সম্পর্কে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে সমালোচনার রসদ যোগায়। পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী সম্প্রতি বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না। ড. পাটোয়ারী সম্পর্কে মানুষের উচ্চাশা রয়েছে। শুনেছি, তিনি খুব উঁচুমানের পেশাদার কর্মকর্তা। তবে তার কথা শুনে হতাশ হলাম। তার বক্তব্য বাস্তব অবস্থার সাথে মেলে না।
জাতীয় নির্বাচন সামনে। সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান মানুষ প্রত্যাশা করে। নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ প্রত্যাশিত। সমতল মাঠ না হলে একপক্ষীয় গোলের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তাকে আর খেলা বলা যায় না। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ায় আনন্দ নাই। আর এরকম খেলা দেশবিদেশের কোন মানুষ প্রত্যাশা করে না। প্রতিযোগিতাহীন খেলায় বিজয়ে কোন আনন্দ পাওয়া যায় না। সমতল মাঠ সৃষ্টি ও তা নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত বজায় রাখতে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করতে পারে পুলিশ। পুলিশের নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন পুলিশকে কোন দলের বাহিনী থেকে প্রজাতন্ত্রের বাহিনীর স্বীকৃতি দেবে। তাতে পুলিশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হবে। এ মুহূর্তে পুলিশ বাহিনী ও প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যারা কর্মরত আছেন, তাদের উচিত জনগণের কল্যাণার্থে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করা। একটি দলকে চাপে ফেলে ঘরে আবদ্ধ রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান কিছুতেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বেগম জিয়ার জামিন নিয়ে তামাশা বন্ধ করা উচিত। তার কল্যাণে স্বৈরশাসন থেকে এদেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। জেলখানায় আবদ্ধ রেখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তাকে মুক্ত করে সমান মাঠে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করলে মানুষ খুশি হবে। ক্যাপ্টেন ছাড়া খেলা অসম্ভব। এক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীসহ প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা মানুষ আশা করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভূমিকা অপরিসীম।
লেখক: প্রফেসর (অব.), দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।



 

Show all comments
  • bokul mutin ২৪ মার্চ, ২০১৮, ৪:৪৭ পিএম says : 0
    ঠিক লিখেছেন ধন্যবাদ , পুলিশ কে জনবান্দব হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন