Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সিরিয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে পশ্চিম দুনিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির জন্যখানিকটা হলেও দায়ী পশ্চিম দুনিয়া। যে সময় পদক্ষেপ করা উচিত ছিল, সে সময় তারা কার্যত কিছুই করেনি। যার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আসাদ সরকার।
সদিচ্ছা থাকলে ঘটনা অন্যরকম হতে পারত। সিরিয়া আজকের চেহারায় পৌঁছাতো না। কিন্তু বাস্তব অন্যরকম হয়েছে। কারণ সিরিয়া নিয়ে পশ্চিম দুনিয়া যে অবস্থান নিয়েছে তা অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি›-র মতো। যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন।
সাত বছর হয়ে গেল সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। যদিও শুরুটা অন্যরকম ছিল। সে সময় সিরিয়ার আসাদ সরকারের পাশে অন্য কোনো দেশ ছিল না। এবং তখন থেকেই দেশের সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছিল আসাদ সরকার। বিশ্ব দেখেছিল রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। আসাদ সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেছিলেন, সিরিয়ার সরকার অবিলম্বে এ ধরনের অস্ত্রের প্রয়োগ বন্ধ না করলে অ্যামেরিকা কড়া ব্যবস্থা নেবে। বস্তুত ওবামা একটি বাক্য ব্যবহার করেছিলেন সে সময়। সিরিয়া ‘রেড লাইন› অতিক্রম করে ফেলছে। যার ফল তাদের ভুগতে হবে। কিন্তু ওবামার বক্তব্যকে কার্যত আমল দেয়নি আসাদ সরকার। একের পর এক রাসয়নিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে নিজের দেশের সাধারণ মানুষের ওপরেই। কিন্তু অ্যামেরিকা সে সময় কোনোই ব্যবস্থা নেয়নি। কেন নেয়নি?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইরাকে এবং লিবিয়ায় ভুল স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল অ্যামেরিকা। বস্তুত দু’জায়গাতেই তথাকথিত স্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বিপ্লবে অ্যামেরিকা সহায়তা করেছিল। কিন্তু সেই বিপ্লব যে ‘মিস ফায়ার’ করবে এবং বুমেরাং হয়ে অ্যামেরিকার দিকেই ফিরে আসবে, মার্কিন কূটনীতিকেরা তা বুঝতে পারেননি। ইরাক এবং লিবিয়ায় বিপ্লবের পর উগ্র ইসলামিক শক্তির দাপট ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আইএস জঙ্গিরা কার্যত মুক্তাঞ্চল তৈরি করে ফেলে। যা নিয়ে অ্যামেরিকাকে যথেষ্ট সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল। ফলে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে ভয় পেয়েছিলেন ওবামা। ভেবেছিলেন, সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে আবার তা ‘মিস ফায়ার’ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওবামা এবং ইউরোপের অন্যান্য রাজনীতিকেরা যদি সে সময় সিরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতেন, তাহলে সিরিয়ার এই চেহারা হতো না। অন্যদিকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে রাশিয়া এবং ইরান। আসাদ সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে তারা বিশ্বরাজনীতিতে মেরুকরণ করেছে। ফলে এখন আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করলে তা অন্য চেহারা নেবে। পৃথিবী আরো একটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হবে। আসলে, অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। একটা লম্বা সময় তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। যে সময় যে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল, তখন তারা কিছুই করেনি। এদিকে সিরিয়ার সমস্যা ক্রমশ জটিল হয়েছে। আইএস জঙ্গিরা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। আসাদের থেকে ফোকাস সরে গিয়ে সকলের ফোকাস চলে গিয়েছিল আইএসের দিকে। যে লড়াইয়ে পশ্চিম দুনিয়া সহ সকলেই জোটবদ্ধ হয়েছিল। আসাদ সরকারকে সাহায্য করেছিল অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ। আপাতত সিরিয়া আইএসমুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কূটনীতির চেহারা বদলে গিয়েছে। সকলেই নিজের আখেড় গোছানোর চেষ্টা করছে। এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে আসাদা সরকার এবং তুরস্ক। ফলে নতুন করে সিরিয়ার সাধারণ মানুষ আবার সমস্যার মুখোমুখি। এমন অবস্থায়, একটাই উপায়। অকারণ কথা না বলে সকলকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। পশ্চিম বিশ্ব এখনই সে কাজ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ আরো ভয়ঙ্কর হবে। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিরিয়া

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ