পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত ১৪ মার্চ বুধবার সকালে পদার্থ বিজ্ঞানের উজ্জ্বল নক্ষত্র স্টিফেন হকিং ৭৬ বছর বয়সে লন্ডনের অক্সফোর্ডে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে পৃথিবীর সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া। যুগ ও কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থ বিজ্ঞানীর মৃত্যুতে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে পৃথিবী নামক আবর্তনশীল গ্রহটির গতিময়তায় অনুকম্পন সৃষ্টি হয়েছিল কি না তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও এ কথা অবশ্যই বলা সহজ যে, পৃথিবীকে একান্তভাবে যিনি ভালোবাসতেন তার চিরবিদায় ঘটেছে।
স্টিফেন হকিং যেসব অবদান রেখে গেছেন তন্মধ্যে ‘বর্ধনশীল বিশ্বজগতের উপাদানসমূহ’ শিরোনামের থিসিস আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত¡ প্রমাণ করা, ‘এ ব্রিফ হিস্টরি অব টাইম’ গ্রন্থ রচনা এবং দ্য ইউনিভার্স ইন এ নাটশেল গ্রন্থ রচনা ইত্যাদি। তার সুবিশাল অবদানের কথা স্মরণে রেখেই আমরা তার সুপ্রসিদ্ধ প্রবন্ধ ‘দুঃসময় পর করছে আমাদের গ্রহ’ থেকে পাওয়া দিকনির্দেশনাকে সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদের সামনে আল কুরআনের আলোকে উপস্থাপন করতে প্রয়াস পাব। স্টিফেন হকিংয়ের এই প্রবন্ধটি ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এতে তিনি বলেছেন, ‘আমরা মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথে ভয়াবহতম সময়ে আছি। যে গ্রহে আমরা বাস করি সেটি ধ্বংস করার প্রযুক্তি আমরা আবিষ্কার করে ফেলেছি। কিন্তু এই গ্রহ থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রযুক্তি এখনো আমরা বের করতে পারিনি’। তাই দেখা যায় পৃথিবী নামক গ্রহটি ধ্বংস করার প্রযুক্তি যাদের আয়ত্তে আছে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পিছপা হচ্ছে না। এতে করে মারা যাচ্ছে অগণিত মানুষ ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, নষ্ট হচ্ছে মাটি, পানি ও বাতাস। এর করুণ পরিণতি ও ভয়াবহতার ¯্রােতধারা কোথায় গিয়ে থামবে তা বল দুরূহ ব্যাপার।
কিন্তু তাই বলে বর্তমানে নির্যাতিত-নিপীড়িত ও ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়া মুসলিম মিল্লাতকে হতোদ্যম ও নিরাশার হিন্দোল দোলায় গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না। তাদের সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে আল কুরআন থেকে। আল কুরআনই মুসলিম মিল্লাতকে বলে দেবে পথের দিশা ও যথার্থ ঠিকানা। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
পৃথিবী নামক গ্রহের বুকে ঘটে গেছে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামে খ্যাত। এই দু’টি বিশ্বযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। ক্ষয়ক্ষতির যথার্থ পরিমাণ আজও নির্ণীত হয়নি। কিন্তু পৃথিবী ধ্বংসকারী প্রযুক্তি থেমে থাকেনি। আরো বিধ্বংসী রূপ পরিগ্রহ করে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এরই মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকাও তৈরি করে ফেলেছে। যার ভয়াবহ রূপ পৃথিবীবাসী প্রতিনিয়তই অবলোকন করে চলেছেন। তাইতো ‘পৃথিবী ধ্বংসকারী প্রযুক্তি’ একটি বার্তা, একটি খবর, একটি সংবাদ। তবে কি এই বার্তার শেষ নেই, ইতি নেই, সমাপ্তি নেই? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। আল কুরআন সাক্ষ্য দিচ্ছে, ‘প্রত্যেক বার্তার জন্য নির্ধারিত কাল রয়েছে এবং শীঘ্রই তোমরা অবহিত হবে’। আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘আকাশমÐলী ও পৃথিবী এবং এদের মধ্যবর্তী সব কিছুই আমি যথাযথভাবে নির্দিষ্ট কালের জন্য সৃষ্টি করেছি। কিন্তু সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা তাদের সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা অবজ্ঞাভরে অস্বীকার করে।’
কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন জায়গায় উপরোক্ত বার্তার নির্ধারিত কাল বা সময়সীমা রহস্যের আবরণে ঢাকা পড়ে আছে, যা ইন্দ্রীয়লব্ধ জ্ঞানের বহির্ভূত। কেবলমাত্র আল্লাহ পাকের সবিশেষ অনুগ্রহের মাধ্যমে এসব রহস্যের দ্বার উন্মোচন সম্ভব। কারণ আল্লাহ পাক বলেন, ‘আকাশ এবং পৃথিবীতে এমন কোনো রহস্য নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নয়’। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘আকাশমÐলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং মহা প্রলয়ের ব্যাপার চক্ষুর পলকের ন্যায় বরং তা অপেক্ষাও সত্বর, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’
উপরোক্ত আয়াতসমূহের মর্ম গভীর অভিনিবেশ সহকারে হৃদয়ঙ্গম করলে বোঝা যায় মহা প্রলয় কখন, কোন মুহূর্তে ঘটবে তা কিছুতেই কোনো অবস্থায়ই মানুষের জ্ঞানের আওতাভুক্ত হতে পারে না। কারণ এর সংঘটন মুহূর্ত ‘চোখের পলকের’ চেয়েও সত্বর। তাই এর জ্ঞানকে আল্লাহ তায়ালা ‘চরম’ বিশেষণ দ্বারা বিশেষিত করেছেন। কিন্তু পূর্বে উল্লিখিত বার্তার নির্ধারিত কাল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। যদি আল্লাহ পাকের বিশেষ অনুগ্রহ ও মেহেরবানি লাভ করা নসিব হয়।
সৃষ্টির পর মানব জাতির বেহেশতে অবস্থান এবং তারপর তাদের দুনিয়াতে অবস্থানের সময়সীমা আল কুরআনের আয়াত সংখ্যা দ্বারা নির্দিষ্ট এবং সীমাবদ্ধ। আমরা জানি আল কুরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৭, তন্মধ্যে হযরত আদম (আ:) ও তাঁর স্ত্রীর বেহেশতে অবস্থানকাল ছিল ৮১ বছর। সূরা বাকারার ৩৫ নং আয়াতে এর বিবরণ রয়েছে। এখন দুনিয়াতে স্বাভাবিকভাবে মানব জাতির অবস্থানের মেয়াদ ৬২৩৭-৮১=৬১৫৬ বছর। আল কুরআনের সূরার সমসংখ্যক (১১৪) পর্বে এই অবস্থানকাল বিভক্ত। আমরা বর্তমানে শেষ পর্বে অবস্থান করছি। আমাদের পরে আর কোনো পর্বের অবতারণা ঘটবে না।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বর্তমান জামানার কাল গণনার শুরু হযরত ঈসা (আ:)-এর জন্মসাল থেকে এবং তখন থেকেই খ্রিষ্টাব্দের প্রচলন হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ সময়সীমা (৬১৫৬ বছর) দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়। ১. খ্রিষ্টপূর্ব কাল (ই.ঈ.) এবং ২. খ্রিষ্ট-পরবর্তীকাল অর্থাৎ খ্রিষ্টাব্দ (অ.উ.)। হযরত আদম (আ:) থেকে হযরত ঈসা (আ:) পর্যন্ত ৪১০৪ বছর (ই.ঈ.) এবং হযরত ঈসা (আ:) থেকে এই পৃথিবী বিধ্বংসী প্রযুক্তির ধ্বংস পর্যন্ত ২০৫২ বছর (অ.উ.)।
এখন উভয় অংশের সময়সীমার যোগফল দাঁড়ায় ৪১০৪+২০৫২=৬১৫৬ বছর।
এ পর্যায়ে স্বভাবতই প্রশ্নের উদয় হতে পরে যে, ২০৫২ সংখ্যাটির প্রমাণ কি? হ্যাঁ, প্রমাণ আছে। আল কুরআনের সূরা মায়ারিজে এই ২০৫২ সংখ্যাটির সন্ধান মেলে। এই সূরার ১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি চাইল অবধারিত শাস্তি সংঘটিত হোক’। আর ২ নং আয়াতে উপরের কথার জের টেনে অবধারিত শাস্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, ‘যা অবধারিত সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই’। এই প্রেক্ষিতে নি¤েœর বক্তব্য অনুধাবন করলে ২০৫২ সংখ্যাটি পাওয়া যাবে। যেমন ক) সূরা মায়ারিজের আয়াত সংখ্যা=১০২৬ খ) সে আয়াতে অবধারিত শাস্তি সংঘটনের উল্লেখ আছে, তার ক্রমিক=২ গ) শাস্তি সংঘটনের সময়সীমা কীখ, ১০২৬ী২=২০৫২।
শুধু তা-ই নয়। আল কুরআনের সূরা মোহাম্মাদেও ২০৫২ সংখ্যাটির সন্ধান পাওয়া যায়। এই সূরার ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘তারা কি কেবল এ জন্য অপেক্ষা করছে যে, তাদের নিকট প্রলয় আকস্মিকভাবে এসে পড়–ক? প্রলয়ের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। প্রলয় এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’
ক) উপরোক্ত ১৮ নং আয়াতের অক্ষরসংখ্যা : ৬৭
খ) সূরা মোহাম্মাদের ক্রমিক : ৪৭
গ) ক+খ =৬৭+৪৭=১১৪
ঘ) আয়াতের ক্রমিক : ১৮
এখন গীঘ=১১৪ী১৮=২০৫২ এই নিরিখে এ কথা সহজেই বোধগম্য যে, পৃথিবী ধ্বংসকারী প্রযুক্তির প্রলয়ের লক্ষণসমূহের অন্যতম। এর বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। এর বিনাশকর্মটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চোখের পলকের চেয়েও সত্বর সংঘটিত হবে। বিশ্বখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই অবস্থার কথা চিন্তা করেই হয়তো প্রবন্ধটির নামকরণ করেছিলেন, ‘দুঃসহ সময় পার করছে আমাদের গ্রহ’। এর জন্য তাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।