Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অধিগ্রহণে ভূমি অপরাধ

ক্ষতিপূরণ পেতে দশকের অপেক্ষা আইন বলছে, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরকার যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে হয় ২২ থেকে ২৩টি ধাপ

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

অধিগ্রহণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক লোকসানের সম্মুখীন ক্ষতিগ্রস্তরা। অধিগ্রহণ আইনের ৮ ও ৯ ধারায় বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান থাকলেও ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে লেগে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ভুয়া রেকর্ডপত্র দাখিল করে হুকুম দখলে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ দাবি করে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আবার অধিগ্রহণের ভিটেমাটি হারাচ্ছেন অনেকে। ক্ষতিপূরণ পেতে পার হচ্ছে বছরের পর বছর। এ অবস্থাকে ‘ভূমি দস্যুতা’ এবং ‘ভূমি অপরাধ’ বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী। সেতু নির্মাণের কারণে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ২২ হাজার ৫৯৩টি পরিবারের সদস্যসহ ৮০ হাজারের বেশি মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। ফলে পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ লাভ করেন। পক্ষান্তরে চাঁদপুরে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য ভূমি অধিগ্রহণে কারসাজির মাধ্যমে ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি তুলে নেয়ার চেষ্টার ঘটনাও রয়েছে। সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দামে দলিল করে নেন প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা।

ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটিত হয় কক্স¦বাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও। অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ থেকে ৭৮ কোটি টাকার মধ্যে ৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণও মেলে। এ ঘটনায় ১৫৫ প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিক ও আমলার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণাদিত তুলে ধরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করে চাকরি হারান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো: শরীফউদ্দিন।

এ বাস্তবতার বিপরীতে উল্টো ঘটনাও আছে, যারা অধিগ্রহণের ফলে শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারিয়ে পথের ফকির। দশকের পর দশক চলে গেলেও পাচ্ছেন না অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা। বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে কেউ টাকা পেলেও সেটি পাচ্ছেন ১০/১৫ বছর আগের হিসেবে। ততদিনে সম্পত্তির মূল্য কয়েক গুণ বেড়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত বর্তমান বাজার দরে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না।

আইন বলছে, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরকার যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে হয় ২২ থেকে ২৩টি ধাপ। প্রত্যাশী দফতরের প্রস্তাব পেশ, সরেজমিন প্রাথমিক যাচাই ও জেলা স্থান নির্বাচন কমিটির সুপারিশ, সরেজমিন যাচাই ও ভিডিওকরণ, রেকর্ড সংগ্রহ, দাগসূচি প্রস্তুত, ভূমি বরাদ্দ কমিটির সিদ্ধান্ত, ৪(১) ধারায় নোটিশ জারি, যৌথ তদন্ত, ক্ষেত্রমত কমিশনার কিংবা সরকারের অনুমোদন, ৭ ধারায় নোটিশ জারি, প্রাক্কলন প্রস্তুত, প্রত্যাশী সংস্থা কর্তৃক তহবিল যোগান, রোয়েদাদ প্রস্তুত, ৮ ধারায় নোটিশ জারি, ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু, দখল হস্তান্তর, আরবিট্টেশন মামলা ও নিষ্পত্তি, বেসরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে হস্তান্তর দলিল সম্পাদন, নামজারি, হিসাব সমন্বয় ও রেকর্ড সংরক্ষণ। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশের অন্তত ৫৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে। অতীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জমি অধিগ্রহণ করা হতো। সর্বশেষ সামরিক সরকার জারিকৃত ‘অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড রিকুইজিশন অব ইমমুভেবল প্রোপার্টি অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’ সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হতো। ২০১৭ সালে প্রণয়ন করা হয় নতুন ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন’।

বিধি অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ দেয়ার লক্ষ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এলএ কেস (ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন মামলা) সৃষ্টি হয়। এলএ কেস প্রক্রিয়ায় অধিগ্রহণের আওতায় পড়া সম্পত্তির মালিককে যথাক্রমে: ৩ ধারা এবং ৪ ধারায় নোটিশ করা হয়। এ ২টি নোটিশ প্রাপ্তির সম্পত্তির মালিক অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জমি উন্নয়ন, স্থাপনা নির্মাণ, বিক্রি, বন্ধক, ভাড়া, লিজ প্রদান, এওয়াজ বদল, নামজারি ও খাজনা পরিশোধ আটকে যায়।

এমনও দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে যতটুকু জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন, অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি। এতে শুধু জমির মালিকই ক্ষতিগ্রস্ত হন নাÑ চাপ পড়ে দেশের বিরল ভূসম্পদের ওপর।
২০১৭ সালে প্রণীত অধিগ্রহণ আইন অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জমির মালিকদের কিঞ্চিৎ স্বস্তি দিলেও উদঘাটিত হচ্ছে নানা ফাঁক-ফোকর। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে জমির মালিকরা যথা সময়ে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। এলএ শাখা থেকে রেকর্ডীয় মালিকের কাছে নোটিশ পাঠিয়ে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিকে জটিল করে তোলা হয়। অধিকাংশ জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী দালাল চক্র। চক্রের সদস্যরা নানা খুঁত ধরে হয়রানিতে ফেলে ক্ষতিগ্রস্তদের। জালিয়াতচক্রের সদস্যরা জমির মালিক না হয়েও প্রকৃত জমির মালিকের বিরুদ্ধে এলএ শাখায় আপত্তি দিয়ে রাখেন। এতে আটকে যায় ক্ষতিপূরণের টাকা। সৃষ্টি করা হয় ঘুষের ক্ষেত্র।

বিধান মতে, নোটিশ জারির সময় সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির বাজার মূল্য নির্ধারণের সময় সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির পারিপার্শ্বিক এলাকার সমশ্রেণির, সমান সুবিধাযুক্ত স্থাবর সম্পত্তির নোটিশ জারির আগের ১ বছরের গড় মূল্য হিসাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিচেনায় রাখা হয় ৮টি বিষয়। (১) জমির ওপর বিদ্যমান যে কোনো ফসল বা বৃক্ষের জন্য ভুক্তভোগী ব্যক্তির ক্ষতি (২) অধিগ্রহণ জনিত স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদ্যমান অপর স্থাবর সম্পত্তি থেকে প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি বিভাজনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি (৩) ওই ব্যক্তির অন্যান্য স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা উপার্জনের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি (৪) ওই ব্যক্তির আবাসস্থল বা ব্যবসাকেন্দ্র স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হলে উক্তরূপ স্থানান্তরের জন্য যুক্তিসংগত খরচাদি। (৫) সরকারি কোনো প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বাজার দরের ওপর অতিরিক্ত শতকরা ২ শত ভাগ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি টাকা হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ৪ কোটি টাকা দেয়া হবে। (৬) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে উক্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে বাজারদরের ওপর অতিরিক্ত ৩০০ ভাগ। অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি টাকা হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি পাবেন ৬ কোটি টাকা। (৭) অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হচ্ছে বাজারদরের ওপর শতকরা ১০০ ভাগ। অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি টাকা হলে ক্ষতিগ্রস্তকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। (৮) উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ পরিশোধ ছাড়া নির্ধারিত পদ্ধতিতে, অধিগ্রহণের কারণে বাস্তুচ্যুত পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ভুক্তভোগীর প্রতারণা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। ঘুষ-দুর্নীতি ও হয়রানি লাঘবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় চালু হয় ‘অটোমেটিক কমপানসেশন পেমেন্ট সিস্টেম’ (এসিপিএস)। এতে জেলাটির অধীন কিছু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে আশা জাগালেও অন্যান্য জেলাগুলোর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সামগ্রিক চিত্র ভিন্ন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বগুড়া সাড়ে ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ শুরু হয় ২০০৪ সালে। ১৮ বছরে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১৫ গুণ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ১৮ বছরে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০৮ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথকে জমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়। ৬টি অর্থবছর গত হলেও অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ ১৬১ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে ১৪৮ জন জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতিপূরণের দাবিতে এখন মামলা চলছে।

অধিগ্রহণের পর ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাননিÑ এমন বহু নজির রয়েছে ঢাকা, রংপুর, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে। নানা অজুহাতে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা আংশিক ক্ষতিপূরণ আটকে রেখেছে বলে জানা গেছে। সিরাজগঞ্জ জেলার সড়ক উন্নয়নে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রয়োজন ছিল ১৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা পেয়েছেন মাত্র ৬৭ কোটি। শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক উন্নয়নে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ৮৫৬ কোটি টাকা ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯৫.৮৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ ৪৩১ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের পরিশোধ করা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণে ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এতে সড়কের উভয়পাশে ৮৩২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও টাকা পাননি বলে জানা গেছে।

অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা মহানগরীর পরিস্থিতিও কম ভয়াবহ নয়। ঢাকা নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন, অবৈধ দখল থেকে লেক উদ্ধারসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১০ সালে শুরু হয় গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু তা হয়নি। খরচ বাড়ানো ছাড়াই প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৪ বার। তবুও প্রকল্প শেষ হয়নি। পঞ্চমবারের মতো মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। অধিগ্রহণ প্রত্যাশী সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)র অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ৮২ দশমিক ৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এখনও কেউ টাকা পাননি। এ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মো: লেহাজউদ্দিন জানান, রাজউক জমি অধিগ্রহণের পর ৯ বছর চলে গেলেও ঢাকা জেলা প্রশাসন ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করেনি। ডিসি অফিস এলএ কেস প্রক্রিয়ায় আমাদের ৩, ৫ ও ৭ ধারায় নোটিশ করে রেখেছে। অথচ আমরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছি না। অন্যদিকে বাকি জমির খাজনা-খারিজ, বিক্রি, বন্ধকও দিতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, অধিগ্রহণকালে জমির মূল্য ছিল তুলনামূলক কম। গত ৯ বছরে জমির মূল্য বেড়েছে বহুগুণ। আমাদের দাবি, ক্ষতিপূরণের টাকা আমাদের যখন পরিশোধ করা হবে তখনকার বাজার দর অনুযায়ী টাকা দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে রাজউক, ডিসি অফিসে বার বার ধর্না দিয়েও কোনো ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা রিট করেছি। লেহাজউদ্দিন বলেন, ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পরিশোধে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন টাকা প্রদানে গড়িমসি করছে। শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয়া হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছি না। এটি এক ধরনের ভূমি সন্ত্রাস।

ভূমি অধিগ্রহণ এবং ভূমি আইন বিষয়ে বহু গ্রন্থের প্রণেতা অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক বলেন, অধিগ্রহণের শিকার ভূমি মালিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়, সেটি একধরনের অপরাধ। মান্ধাতা আমলের অধিগ্রহণ পদ্ধতি জিইয়ে রেখে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধকে জটিল করে রাখা হয়েছে। এটির অবসান হওয়া দরকার।

তিনি বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমির রেকর্ডীয় মালিককে নোটিশ পাঠানো হয়। দেখা গেল রেকর্ডীয় মালিকের পর জমিটি হয়তো সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে কয়েক হাত বদল হয়েছে। কিন্তু নোটিশটা যাচ্ছে রেকর্ডীয় মালিকদের নামে। এর ফলে রেকর্ডীয় মালিক ওই জমির ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তিনি একটি আপত্তি দিয়ে রাখেন। এতে ক্রয়সূত্রে জমির মালিক ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ভয়াবহ জটিলতার মধ্যে পড়ছেন। এখন জমি হুকুম দখল হলেও ক্ষতিপূরণ পেতে লেগে যাচ্ছে দশকের পর দশক। অনেকে ক্ষতিপূরণের টাকার আশায় বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছেন। এটি আমাদের ভূমি অধিগ্রহণের অমানবিক বাস্তবতা।

অধিগ্রহণে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ঢাকার জেলা প্রশাসক মো: মমিনুর রহমানের সঙ্গে। টেলিফোনে তিনি বলেন, আমি মাত্র যোগদান করেছি। এখন সব বুঝে উঠতে পারিনি। এক সপ্তাহ পরে এলে ভালো হয়।

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জমি কেনাবেচা বন্ধ হচ্ছে
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া জমি কেনাবেচা বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে প্রতিরোধ হবে ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি। এজন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন যৌথ-মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের’ (আরজেএসসি) একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ স্মারক সই হয়। গতকাল সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, আরজেএসসি নিবন্ধক শেখ শোয়েবুল আলম ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. জাহিদ হোসেন পনির সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এ সমঝোতার ফলে ভূমিসেবা সিস্টেম ও আরজেএসসি সিস্টেমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ এবং সমলয় স্থাপন হবে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, কাগজে কিংবা ভুয়া যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্ম দেখিয়ে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে বেআইনি কাজ করার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এছাড়া অনেকে সময় দেখা যায়, ‘বাণিজ্যিক কিংবা শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমি’ ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে দলিলাদিতে ‘আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমি’ দেখিয়ে তাতে লাভজনক বৃহৎ ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। এর ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। বিভিন্ন ভূমিসেবা যেমন ই-নামজারি কিংবা ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনায় আরজেএসসি এখতিয়ারভুক্ত কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রযোজ্য তথ্য যাচাইয়ের সুযোগের ফলে এখন ভুয়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে। ফলে সরকারের কোষাগারে ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ অতিরিক্ত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা হবে।

এছাড়া ভূমি ও আরজেএসসি সিস্টেমের স্বয়ংক্রিয় আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থার কারণে ই-নামজারি করার সময় করণিক ভুল হবে না, কেননা আরজেএসসি সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য যাচাই করা হবে সংশ্লিষ্ট নামজারির আগে।



 

Show all comments
  • Mozammel Hossin ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
    সব চোর দালাল বরে গেছে দেশটা আর এই টাকার বাঘ পায় খোদ ভূমি মন্ত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • Md Monir ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
    কি আর করার, দেশটা এখন এইভাবেই চলে, সবখানে দুর্নীতি....? যাকে দিয়ে ভূত ছাড়ানো হবে তাকেই ধরেছে ভূতে....?
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sobuj Dhali ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
    অসংখ্য ধন্যবাদ সাংবাদিককে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Alomgir Hosen ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১৯ এএম says : 0
    গাজীপুর সাফারি পার্কে রাস্তায় দালাল ছাড়া কিছুই হয় না আর মালিকানা থাকলেও বিল পাওয়া যায় না
    Total Reply(0) Reply
  • Nurul Islam Rana ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১৯ এএম says : 0
    দেশে আইন আছে? যে যেভাবে পারছে, হাতিয়ে নিচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Billal Miah ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২০ এএম says : 0
    সবজাগায় দুর্নীতি দুর্নীতি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidul Islam ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২১ এএম says : 0
    এইগুলি সবাই জানে বুঝে ।ইচ্চা করলে ধরতেও পারে ঘঠনা একটাই এখানে চোরের সংখ্যা বেশী এবং ক্ষমতাবান সরকারী চোরই বেশী
    Total Reply(0) Reply
  • Kapil Uddin ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২১ এএম says : 0
    বাংলা দেশ স্বাধীন হয়েচে চুর বাটপার দুর্নীতি বাজদের জন্য বাংলা দেশ একন আর বাংলাদেশ নাই চুরের দেশ হয়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Shaharia Sajeeb ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:২১ এএম says : 0
    এগুলো কি একটা দেশের নিয়ম হতে পারে কি বলবো দেশের সার্বিক সংস্কারে প্রয়োজন, এমন কোন জায়গা নাই যে সাধারণ মানুষকে জিমে করে রাখে কি বলবো খুবই দুঃখ লাগে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অধিগ্রহণে ভূমি অপরাধ

২০ ডিসেম্বর, ২০২২
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ