Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোটা বনাম মেধা

চি ঠি প ত্র

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়েই চলেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। সরকারি হিসেবে দেশে এখন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ। এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কোটা ব্যবস্থার কারণে সাধারণ প্রার্থীদের চাকরি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। দেশের সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা- স্বায়ত্তশাসিত চাকরির শতকরা ৫৬ ভাগই দখল হয়ে যায় কোটাধারীদের দ্বারা। বর্তমানে বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার হালচাল হলো, ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০% নারী কোটা, ১০ % জেলা কোটা, ৫% ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ১% প্রতিবন্ধী কোটা। সংবিধানের ১৯ (১) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ বাস্তবিক দিক দিয়ে দেখলে বর্তমান কোটা পদ্ধতি ত্রæটিযুক্ত। এ ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।
মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য রাষ্ট্রকর্র্তৃক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। তাহলে আবার তাঁদের সন্তানদের জন্য কোটার প্রাধান্য কেন? সরকারি ১ম ও ২য় শ্রেণিসহ অধিকাংশ চাকরির নিয়োগের শেষ পর্যায়ে এসে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার বেশিরভাগ পদ উপযুক্ত প্রার্থীর অভাবে খালি পড়ে থাকে। এই খালি পদগুলোতে সাধারণ প্রার্থীকেও নিয়োগ দেওয়া হয় না। মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়েদের সাথে এবার যুক্ত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার ‘নাতি-নাতনির কোটা’। বংশ পরম্পরায় এ ব্যবস্থা রাখার কোনো যুক্তি আছে কি? মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য শুধু এককভাবে বিভিন্ন বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা যেমন বিসিএস (৩২, ২৩তম বিশেষ বিসিএস), ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে (বিভিন্ন মন্ত্রণালয়) পরীক্ষা হয়ে থাকে। এর ফলে সাধারণ চাকরি প্রার্থীরা আজ দরখাস্ত করার সুযোগটুকুও হারাতে বসেছে।
যেখানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে বসে আছে। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে বৈকি কমছে না। এসব মেধাবীকে বঞ্চিত করে নাতি- নাতনিদেরও কোটা সুবিধা দেওয়া কতটা যৌক্তিক? এই অযৌক্তিক কোটা ব্যবস্থা সাধারণ চাকরি প্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। কোটা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে অধিকতর কম মেধাবীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছে। নারীরা ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়ে আসা শুরু করেছে। এখন সরকারের নীতিনির্ধারকদের মুখেও শোনা যায় নারীরা আর পিছিয়ে নেই। এখন তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জেলা কোটাও সংস্কার করা জরুরি। কিসের ভিত্তিতে জেলা অনগ্রসর বিবেচনা করা হচ্ছে? ধরে নিলাম, অনগ্রসর জেলা রয়েছে। তাহলে সরকার তা দূর করার ব্যবস্থা কতটুকু নিচ্ছে?
কতকাল যাবৎ চলবে এই কোটা ব্যবস্থা? মেধাবীরা কি তার চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন একজনকে তার উপরে দেখতে চাইবে? এদেশে মেধার মূল্যায়ন না করার কারণে মেধা বিদেশে চলে যাচ্ছে। ন্যায়পরায়ণতা ও বাস্তবতার স্বার্থে এই কোটা ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁদের ‘দিনবদলের সনদ’ নামক নির্বাচনী কর্মসূচিতে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে গুরুত্ব দেওয়ার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করেছিল। ২০১২ সালের সরকারের শুদ্ধাচার কৌশলপত্রে তাঁরা এ অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করেছে। এগুলো কি তাহলে শুধু কথার কথা?
সাধন সরকার
ছাত্র, প্রথম ব্যাচ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা

২৩ ডিসেম্বর, ২০২১
১৭ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন