Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার হলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না উৎস

অক্ষত বড় ভাইদের ভান্ডার

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : প্রকাশ্যে রাস্তায় পুলিশকে গুলি করার ১৫ দিন পরও অস্ত্রটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত ১০ জনের মধ্যে ছয়জনকে পাকড়াও করা হয়। তারা স্বীকার করেছে অস্ত্রটি তাদের এক বড় ভাইয়ের। তারা আদালতে জবানবন্দিতে ওই বড় ভাইয়ের নাম ঠিকানা প্রকাশ করার পরও তাকে ধরেনি পুলিশ, উদ্ধার হয়নি পিস্তলটি। এভাবে চট্টগ্রামে বড় ভাইদের অস্ত্রভান্ডার অক্ষতই থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি নগরীতে খুনসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেলেও অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। ফলে এসব অস্ত্রধারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিতে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। রাজনৈতিক সংঘাতেও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। সীমান্ত পথে অস্ত্র আসছে, পাহাড়েও তৈরী হচ্ছে দেশি অস্ত্র। অবৈধ অস্ত্রের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় র‌্যাব পুলিশের অভিযানেও প্রায়ই ধরা পড়ছে অস্ত্র গোলাবারুদ। তবে রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তান তথা বড় ভাইদের অস্ত্রভান্ডারে হাত না পড়ায় নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। এদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হলেও এসব অস্ত্রের উৎস বন্ধ করা যাচ্ছে না। কালো অস্ত্রের কালোবাজারির সাথে জড়িতরাও থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
র‌্যাবের অভিযানে গত ১৪ মাসে ৩৫৭টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। একই সময়ে ৪৯টি ম্যাগজিন এবং ৫ হাজার ৫৩৯ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজ উদ্ধার হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ গত এক বছরে কত অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে এক বছরে নগরীর ১৬টি থানায় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৩১টি। র‌্যাব পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অস্ত্র ধরা পড়ছে। এর অর্থ হলো অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে অস্ত্র উদ্ধারে দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে এবং জেলায় কোন বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। নিয়মিত অভিযানে অস্ত্র গোলাবারুদ ধরা পড়ছে।
জানা যায়, নগরীতে সরকারী দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের কতিপয় নেতার নেতৃত্বে অপরাধীদের গ্রæপ গড়ে উঠেছে। তাদের হাতে আছে বৈধ-অবৈধ অস্ত্র। এসব অস্ত্র নানা ঘটনায় ব্যবহার করা হচ্ছে। তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী হয়েও এদের অনেকে বৈধ অস্ত্রের মালিক হয়েছেন। অবৈধ কাজে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা গ্রæপ ভারি করতে নগরীর স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দলে ভিড়িয়ে বিপদগামী করছে। তুচ্ছ ঘটনায় এসব উঠতি যুবক ও কিশোরেরা নিজেদের মধ্যে অস্ত্র নিয়ে হানাহানিতে মেতে উঠছে। গত ১৬ ফেব্রæয়ারি দলবেঁধে এক কিশোরকে শায়েস্তা করতে যাওয়ার পথে রাস্তায় হঠাৎ তল্লাশির মুখে পড়ে পুলিশকে গুলি করে বসে এমন একটি গ্রæপ। নগরীর ষোলশহরের ২ নম্বর গেট এলাকার ব্যস্ত সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ দশজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। গ্রেফতার করা হয় ছয়জনকে। তবে ওই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা যায়নি এখনও। অস্ত্রটি এক যুবলীগ নেতার। তাকেও ধরতে পারেনি পুলিশ। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এএসআই আবদুল মালেক এখনও হাসপাতালে।
এর আগে ১৬ জানুয়ারি নগরীর জামালখানে দিনদুপুরে কয়েকজন কিশোর প্রকাশ্যে খুন করে নগরীর কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে। এই ঘটনায় তাদের অস্ত্র দেন যুবলীগের এক নেতা। ওই অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি, ধরা পড়েনি অস্ত্রদাতা। নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায় ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। ধরা পড়েনি অস্ত্রদাতা বড় ভাইও। এর আগে রেলের টেন্ডারবাজি নিয়ে সিআরবিতে জোড়া খুনের ঘটনায় একাধিক ভারী অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পায় পুলিশ। দুই দফায় তদন্ত শেষে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৬২ জনকে আসামী করে চাজর্শিট দেওয়া হলেও ওই ঘটনায় ব্যবহৃত কোন অস্ত্রই উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার হয়নি ছাত্রলীগ নেতা প্রিমিয়ার ভার্সিটির ছাত্র সোহেল, বায়েজিদ এলাকায় যুবলীগ নেতা মেহেদী হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রও। চট্টগ্রাম কলেজ মহসীন কলেজসহ নগরী বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে ছাত্রলীগ প্রায়ই অস্ত্র প্রদর্শন করছে। এসব অস্ত্রও থেকে যাচ্ছে অক্ষত। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার আবদুল ওয়ারিশ বলেন, অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলছে। এসব অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, অপরাধীরাও ধরা পড়ছে।
এদিকে পার্বত্য জেলায় অস্ত্রবাজির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সেখানে প্রতিনিয়ত খুনের ঘটনা ঘটছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং চাঁদাবাজির ঘটনাও বেড়েছে। পাহাড়ে অশান্তির মূলে রয়েছে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের অস্ত্রবাজি। গত ১৫ ফেব্রæয়ারী রাতে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই হাজার ৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার হয়। ওই অভিযানে পাকড়াও করা হয়েছে চার পাহাড়ী সন্ত্রাসীকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আলীকদম জোন ও এলিট বাহনী র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম বৃহস্পতিবার রাতে এ যৌথঅভিযান পরিচালনা করে। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ছিল ১৪টি এসবিবিএল ও ১১ টি ওয়ানশুটার গান। গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে দুই হাজার রাউন্ড পয়েন্ট ২২ রোবের গুলি ও ৩৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি। সীমান্তপথে বিদেশি অস্ত্র আসছে। দেশেও তৈরি হচ্ছে অস্ত্র। মহেশখালী, চকরিয়া ও বাঁশখালীর পাহাড়ে বিভিন্ন সময় র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় অস্ত্রের কারখানা। মহেশখালীর দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এখনও অনেক কারখানা অক্ষত রয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, মহেষখালীসহ সন্দেহভাজন এলাকায় র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অস্ত্র উদ্ধার

৬ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ