পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ইসলামী মূল্যবোধের চেতনার ভিত্তিতেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন বলেছেন, আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ইসলামী চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। ঈমান আকিদা ও ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন ইসলামী সমাজব্যবস্থা এদেশে গড়ে উঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিনি বলেন, আজকে ইসলামী জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে আলেম ওলামাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের আলেম সমাজ সকল উগ্রবাদিতার বিরুদ্ধে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মসজিদে বয়ান থেকে শুরু করে ইসলামী জলসা, মাহফিলের আলোচনায় বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আর এক শ্রেণির লোকজন শুদ্ধতা শিক্ষার নামে অপকর্ম করছে। আর আমাদের আলেম ওলামায়েগণ অনাচার, মাদক, অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে মৌকারা দরবার শরীফের ইসালে সওয়াব মাহফিলের শেষদিন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ধর্মীয় আলোচনায় আমন্ত্রিত মেহমানের বক্তৃতায় দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এসব কথা বলেন। ধর্মীয় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন মৌকারা দরবারের পীর ছাহেব কিবলা বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লার সভাপতি আমীরুস সালেকীন আলহাজ্ব শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দীন ওয়ালিউল্লাহী। মাহফিলে আমন্ত্রিত মেহমানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা লাকসাম আসনের এমপি মো. তাজুল ইসলাম, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সাইয়েদ আহসান উল্লাহ।
সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন আরও বলেন, আমাদের সমাজব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করতে হবে। আজকের যুবক ও তরুণরা আদব-কায়দা, নীতি নৈতিকতার শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। তরুণ ও যুব সমাজ মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে মাদক ও অনৈতিক পথে ধাবিত হচ্ছে। আজকে ঘরে ঘরে এসব কারণে অশান্তি বিরাজ করছে। মা-বাবা নিজেদের সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রতিবেশিদের ঘিরে যে বন্ধন তাও নষ্ট হচ্ছে। তরুণ সমাজ আজকে ইন্টারনেট, ফেসবুকসহ নানারকম ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ভালো দিকটা কম ব্যবহার করছে। মন্দের প্রভাবের দিকেই বেশি ধাবিত হচ্ছে। আমাদের আলেম ওলামায়েগণ এতো দুরাবস্থার মধ্যেও সমাজের সার্বিক দিক স্থিতিশীল থাকুক, সর্বত্র ইসলামী চিন্তা, ধ্যান-ধারণার প্রসার ঘটুক, প্রতিটি মুসলমান মনের ভেতর ইসলামী মূল্যবোধের চেতনা লালন করুক, ধারণ করুক এমন ভূমিকাই রেখে চলেছেন। মাদরাসা শিক্ষা প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা অনেক ব্যতিক্রম। মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা নেশা করে না, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অনৈতিক কাজের ধারে কাছেও নেই। তারা টেন্ডারবাজি করে না। চালচলন, পোশাক-আশাকে শালিনতা বজায় রাখে। তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষকরাই এদেশে ইসলামী ভাবধারা সমুন্নত রেখে চলেছেন। মৌকারা দরবার ও এখানকার মাদরাসা প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, এ দরবারের মরহুম পীর ছাহেব ছিলেন ইসলামী জগতের আধ্যাত্মিক সাধক। তিনি মানুষকে হেদায়েতের পথে, সুন্নিয়াতের পথে আসার দিশা দিয়েছিলেন। আর মৌকারা দারুসসুন্নাত নেছারিয়া কামিল মাদরাসা আল্লাহর একজন অলির হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বীনি ও সঠিক নৈতিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে সৎ আদর্শবান মানুষ।
মাহফিলের ধর্মীয় আলোচনার শুরুতে মৌকারা দরবারের পীর ছাহেব কিবলা বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লার সভাপতি, আমীরুস সালেকীন আলহাজ্ব শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দীন ওয়ালিউল্লাহী তার গুরুত্বপূর্ণ বয়ানে বলেন, জীবনের প্রতিটি স্তরে সুন্নিয়াতের আদর্শকে লালন করতে হবে। ত্বরিকা চর্চা করতে হবে। ত্বরিকতের মাধ্যমে ওলি-আউলিয়াগণের ফয়েজ ও বরকত অর্জন সম্ভব। ইসলামের হকধারা প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুলে করীম (সা:) এর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য ঈমান মজবুত রেখে সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)এর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজ থেকে সকল অশান্তি, বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে যাবে। মৌকারা পীর ছাহেব কিবলা আমল ও ত্বরিকা চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ওলী আউলিয়ার এদেশে দ্বীনের খেদমতের মধ্যদিয়ে ইসলামের আলোয় সমাজকে আলোকিত করুন। আর এজন্য আল্লাহর খাঁটি মোমিন বান্দাদের এগিয়ে আসতে হবে। খাঁটি মোমিন হওয়ার জন্য আল্লাহর বিধি-বিধান, কুরআন সুন্নাহর আইন, নবী মুহাম্মদ (সা:)-এর আদর্শ মেনে চলা, ত্বরিকা চর্চা ও সৎ চিন্তা-চেতনাকে মনের গভীরে জায়গা করে নিতে হবে। ওলী আউলিয়াদের দরবার হচ্ছে আশেকে রাসুলের দরবার। এসব দরবারে বেশি বেশি যাতায়াত করুন এবং পরকালে শান্তির জন্য আমলী জিন্দেগী গড়ে তুলুন।
ধর্মীয় আলোচনায় কুমিল্লার লাকসাম আসনের এমপি তাজুল ইসলাম বলেন, মৌকারার মরহুম পীর ছাহেব কিবলা একজন উঁচুস্তরের আল্লাহর অলী ছিলেন। ওনার সামগ্রিক খিদমাতগুলোকে জারি রাখার জন্য আমাদেরকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সাইয়েদ আহসান উল্লাহ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপারে অনেক আন্তরিক। আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে সত্যিকারের দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আমাদের সন্তানরা প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠে। প্রকৃত দ্বীনি শিক্ষা অর্জনকারি আজকের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আগামীদিনের ওলি-আউলিয়া, বুজুর্গানেদ্বীন লুকিয়ে আছে। তাই তাদেরকে সেইরকম শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে।
মাহফিলের দ্বিতীয়দিনে বিষয়ভিত্তিক বয়ান করেন- মাওলানা শফিকুল ইসলাম ফতেহবাদী, মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ ছালেহউদ্দিন, মাওলানা সৈয়দ ছালেহ আহমদ মামুন আল হুসাইনী, মুফতি মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ ছালেহউদ্দীন, অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, মাওলানা মির্জা সায়েমুর রহমান বেগ, মাওলানা সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমদ আল হুসাইনী, মুফতি মাওলানা এইচ এম আনোয়ার মোল্লা, মাওলানা মোহাম্মদ হুজ্জাতুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা আহসানুল করীম আল আযহারি, মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইমাম উদ্দিন, মাওলানা মুহাম্মদ মোশতাক আহমদ, মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মিয়াজী, মাওলানা মো. একরামুল হক, মাওলানা আবু হানিফ আনোয়ারি ও মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন সিদ্দিকী প্রমুখ। মাহফিলের সার্বিক তত্ত¡াবধানে ছিলেন মৌকারার শাহছাহেব বাংলাদেশ ছাত্র সালেকীনের কেন্দ্রিয় সভাপতি আলহাজ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ মাসউদ। মাহফিলের শেষ দিনে লাখো ভক্ত আশেকান মুরিদানের অভূতপূর্ব সম্মিলনের দৃশ্য ফুটে উঠেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জনপদের অন্যতম পূণ্যভূমি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মৌকারা দরবারের। আধ্যাত্মিক সাধক শাহ সুফি আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ অলিউল্যাহ (রহ.) স্মরণে দুই দিনব্যাপী ইসালে ছওয়াব মাহফিলের শেষ দিন আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ আর মুসল্লিয়ানদের মিলনমেলা ও জিকিরের আওয়াজে সৃষ্টি হয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ। আজ সকালে অনুষ্ঠিত হবে আখেরী মুনাজাত। মৌকারা পীর ছাহেব কিবলা আমীরুস সালেকীন শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দীন ওয়ালিউল্লাহী মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, দেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি কামনা করে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।