২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
যদি আপনি দিনের পর দিন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকেন এবং এ অবস্থা ছয় মাস বা তার অধিক সময়ব্যাপী স্থায়ী হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনি সার্বিক দুশ্চিন্তাযুক্ত ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। এক কথায় আপনি দুশ্চিন্তাযুক্ত অচলাবস্থার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনার মুখের অভ্যন্তরে প্রদাহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটি কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, দুশ্চিন্তা যেন আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ না করে। আর যদি করে তবে মুখের অসুখ কেন, কোনো অসুখই আপনার সহজে ভালো হবে না। এটাই স্বাভাবিক।
দুশ্চিন্তা ক্রমাগত চলতে থাকলে আপনি এক সময় বিষন্নতায় আক্রান্ত হবেন। বিষন্নতাগ্রস্থ রোগীদের সচরাচর যে সমস্যায় ভুগতে হয় তা হল শুষ্ক মুখ। সাধারণত ট্রাইসাইক্লিক বিষন্নতানাশক ওষুধ সেবনের কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ওরাল ক্যান্ডিডোসিস হতে পারে এবং দন্তক্ষয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। শুষ্ক মুখের কারণে লালার প্রবাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকার কারণে দন্তক্ষয় থেকে শুরু করে মুখের নানাবিধ রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে বিষণœতানাশক ওষুধ সেবনের কারণে খাবারের স্বাদ গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটে এবং রোগীরা তাদের খাবারে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চায়। এ অবস্থায় অনেক সময় বিষন্নতানাশক ওষুধ পরিবর্তন করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিষন্নতায় মুখে যে সব সমস্যা হয় সেগুলো হল: (ক) ব্যতিক্রমধর্মী মুখের ব্যথা। (খ) বার্নিং মাউথ সিনড্রোম- এক্ষেত্রে রোগী মুখে ও জিহ্বায় জ্বালাপোড়ার অভিযোগ করে থাকেন। (গ) টেস্পেরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট বা চোয়ালে ব্যথা হতে পারে। যারা অনবরত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাদের শরীরে কর্টিসল এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার কারণে মাড়ি ও শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আর মাড়ি রোগ বেশি পরিমাণে হলে আপনার হৃদযন্ত্রেও সহজেই সংক্রমণ বিস্তার লাভ করতে পারে। তাই এ বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। মানসিক চাপ বা বিষণœতার কারণে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মানুষ ঠিকভাবে বা নিয়মিতভাবে দাঁত ব্রাশ বা ফ্লস করে না। বিষণœতা, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে শরীর ও মুখের যতœ ঠিক ভাবে নেওয়া সম্ভব হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিষণœতাগ্রস্থ রোগীদের মাঝে ধূমপান, অ্যালকোহল সেবনের মত বদঅভ্যাস গড়ে ওঠে। এছাড়া মানসিক চাপ বা বিষণœতাগ্রস্থ রোগীদের কেউ কেউ নিজের অজান্তেই দাঁত কিড়মিড় করতে পারে, যা ব্রæকসিজম নামে পরিচিত। অনবরত মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অবদমিত বা অকার্যকর করে বা করার চেষ্টা করে থাকে। পাশাপাশি ক্রমাগত মানসিক চাপে বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। মানসিক চাপে ক্যাটেকোলামাইন নামক হরমোন বৃদ্ধি পায়। মানসিক চাপের কারণে সাপ্রেসর টি সেল এর লেভেল বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অবদমিত করে থাকে বা ব্যহত করে। যখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এ অংশটি বা শাখাটি অকার্যকর হয় তখন মানুষের শরীরে ভাইরাস জনিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় যেমন ঠান্ডা এবং ফ্লু দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপের কারণে রক্তে হিস্টামিন নিঃসরিত হয়ে থাকে যার কারণে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ক্রমাগত বিষণœতা বা দুশ্চিন্তায় আপনার মুখের অভ্যন্তরে জ্বালাপোড়া ভাব অনুভ‚ত হতে পারে, যা বার্নিং মাউথ সিনড্রোম নামে পরিচিত। বার্নিং মাউথ সিনড্রোম বা মুখের জ্বালাপোড়া অনেক সময় মাসের পর মাস চলতে পারে।
তাই বর্তমান অস্থির সমাজে সকল বাধা অতিক্রম করে আমাদের অবশ্যই দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবনযাপন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন একটি দুশ্চিন্তা সমাধান করতে যেয়ে আরেকটি দুশ্চিন্তায় জড়িয়ে না পরি। আর সমাজে কেউ বিষণœতায় আক্রান্ত হলে তাকে যেন কেউ কোনো বিদ্রুপ না করে এবং সহযোগিতার হাত বাড়ায়। অন্যথায় বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীর অবস্থার আরো অবনতি ঘটে থাকে। মুখের অভ্যন্তরে যেসব আলসার সহজে ভালো হয় না সেসব ক্ষেত্রে রোগীর প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে। সবাই সবার দিকে একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে একদিকে যেমন অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব, আর অন্যদিকে সুস্থ সুন্দর একটি জীবন সমাজকে সামনের দিকে ও প্রগতির দিকে অগ্রসর করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
-ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল: ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইল: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।