Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানির হিস্যা নিয়ে সোচ্চার হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

একদিকে তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে ভারতের টালবাহানা অন্যদিকে গঙ্গার পানিচুক্তির পরও পদ্মায় পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। গত চারদশকের বেশি সময় ধরে যৌথ নদীর উপর ভারতের একতরফা নিয়ন্ত্রণ ও পানি প্রত্যাহারের কারণে এখন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা-যমুনার পানি প্রবাহ কমতে কমতে কোথাও কোথাও তা মরাগাঙ্গে পরিণত হয়েছে। নদীতে বিশাল বিশাল চর জেগেছে। পদ্মা-যমুনার শত শত শাখানদী ও উপনদী শুকিয়ে বিলীন হয়ে গেছে। পানির অভাবে দেশের বড় বড় সেচ প্রকল্পগুলো অকেজো হয়ে পড়তে শুরু করেছে। নদীতে পানি না থাকায় সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার কারণে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। সেই সাথে আর্সেনিক দূষণে মারাত্মক বিষযুক্ত হয়ে পড়ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি। এহেন বাস্তবতায় দেশের কৃষিব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্য সম্পর্কিত ভবিষ্যত নিয়ে দেশের মানুষ শঙ্কিত। কৃষক সমাজ, পরিবেশবাদি ও সাধারণ মানুষ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও দেশের সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের যেন এ নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। যৌথ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাদের কণ্ঠ খুবই দুর্বল, ক্ষীণ ও অস্পষ্ট।
বরাবরের মতো শুষ্ক মৌসুমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর মরণদশা দেখা যাচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, আত্রাইসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্তত ৩৪টি নদীর পানি প্রবাহ কমতে কমতে এখন মরণদশায় উপনীত। নদীগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে বিদ্যমান ক্ষীণপ্রবাহ আগামী চৈত্র মাসের শেষে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গজলডোবা ব্যারাজ দিয়ে তিস্তার পানি আটকে দেয়া এবং ভারতের সাথে চুক্তি অনুসারে গঙ্গার পানির হিস্যা না পাওয়ার কারণেই মূলত নদীগুলোর এই মরণদশা বলে নদী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ত্রিশ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানিচুক্তি ইতোমধ্যে ২২ বছর অতিক্রম করলেও মূলত বাংলাদেশ কখনোই চুক্তি অনুসারে পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি। ভারতের অনীহার কারণে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত ও মূল্যায়ণের জন্য গঠিত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) কোন দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। বছরের পর বছর ধরে জেআরসির কোন বৈঠক হয় না। হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীবাহিত পলি দিয়ে গঠিত বিশ্বের বৃহত্তম গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে নদীগুলোর অস্তিত্ব নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। যৌথ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পাশাপাশি নদীগুলোর নাব্য রক্ষা ও দূষণমুক্ত রাখার কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক নেতারা ভারতকে অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র বলে দাবি করলেও যৌথনদীর পানি নিয়ে ভারতীয়দের টালবাহানার বিষয়ে তারা সর্বদাই নীরব। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও যৌথনদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ অগ্রাহ্য করে বন্ধুত্বের দাবিতে ভারতকে নানা রকম সুবিধা দিলেও বছরের পর বছর ধরে ধর্ণা দিয়েও ভারতের সাথে তিস্তার পানিচুক্তি এবং গঙ্গাচুক্তি অনুসারে পানির হিস্যা নিশ্চিত করার কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় টিকে থাকতে অথবা ক্ষমতা লাভের জন্য ভারতীয় শাসকদের তুষ্ট রাখতেই যেন তারা বেশি ব্যস্ত। প্রতিবছর দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে নানা বিষয়ে যাতায়াত ও তথ্যের আদান-প্রদান ঘটতে দেখা গেলেও বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু পানির হিস্যা নিয়ে তাদের কোনো কথা বা তাকিদ নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই অনালোচিত ও আড়াল করে রাখার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরেও যৌথ নদীর পানি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে জানা যায়। সরকার উন্নয়নের নানা রকম ফিরিস্তি তুলে ধরলেও দেশের নদীগুলোর মরণদশা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার প্রসঙ্গ তোলা হয়নি। নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে প্রধান মানদন্ডই হচ্ছে দুই দেশের যৌথনদীর পানিবণ্টন এবং সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের ভূমিকা। বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাক, এসব বিষয়ে অনড় ও আপসহীন ভূমিকা পালন ব্যতিরেকে দেশের টেকসই উন্নয়ন বা নিরাপত্তার কোন স্বার্থরক্ষা সম্ভব নয়। ভারত-বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফরের আলোচ্যসূচিতে যৌথনদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি অপরিহার্য ও অগ্রাধিকার ইস্যু হিসেবে রাখতেই হবে। সেই সাথে নদীগুলোকে দূষণ, দখল ও নাব্য রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানির হিস্যা
আরও পড়ুন