Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগের মুখে গণতন্ত্র অন্তরে বাকশাল রিজভী

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও অন্তরে বাকশাল কর্তৃত্ববাদী মধ্যযুগীয় অন্ধকার শাসনের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কখনোই টিকেনি। শেখ হাসিনারও দুঃশাসনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জনগণ মেনে নেয়নি নিবেও না। আইনের শাসনকে উপেক্ষা করে বেআইনিভাবে পুলিশ, প্রশাসন এরা যদি চেষ্টা করে কিছুদিন মনে হবে যে, সব শক্তি তাদের মধ্যে চলে এসেছে। কিন্তু অন্যায় এখানে চিরস্থায়ী হয় না, ভবিষ্যতে হবেও না। গতকাল (সোমবার) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন শান্তিপূর্ণ কর্মসুচি ঘরে করেন বাইরে কেন? তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব কী আওয়ামী লীগের সম্পাদকের পাশাপাশি জোনাল সামরিক শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ গণতন্ত্রে তো এ ধরণের ভাষা নেই। এখন হাসিনাতন্ত্র চলছে বলেই গণতন্ত্রহীন ভাষা প্রয়োগ করতে পারছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। আমরা যে কর্মসুচি পালন করছি তা গণতন্ত্রে স্বীকৃত কর্মসুচি। গণতন্ত্র মানে ঘরোয়া সভা করা নয়, বরং উন্মুক্ত স্থানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা। ওবায়দুল কাদের সাহেবদের ঐতিহ্যই হচ্ছে মানুষের গলায় ফাঁসির দড়ি দিয়ে কণ্ঠরোধ করা। জনসম্মতিহীন সরকারের প্রধান কাজই হচ্ছে মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া। সেটি ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, জনসমাবেশ, প্রতিবাদ সভা, মিছিল করা ইত্যাদি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষের অধিকার পুলিশের বিধি-নিষেধের ওপর নির্ভর করে না। এ অধিকারগুলো মানুষের জন্মগত। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে সমাবেশের অধিকার এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সমাবেশের জন্য পুলিশি অনুমতি নিতে হয় এমন নজিরতো পৃথিবীর কোন দেশে নেই। অপরাধ দমনের জন্য জনগণের টাকায় পুলিশ পালিত হয়, আর সেই পুলিশ অপরাধ দমন না করে রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিষ্পিষ্ট করছে বুটের তলায়। পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে এমন নজির দেখাতে পারবে না যেখানে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া হয়। শুধুমাত্র যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে কিংবা যেসব দেশে কুশাসন জারি আছে সেসব দেশে সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ থাকে। তাহলে বাংলাদেশে কেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা সমাবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে? তিনি বলেন, আইনকে ব্যক্তি স্বার্থ বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয় রাজনৈতিকভাবে। আইন, বিচার সবারই শেষ কথা হলো জনমত। বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করতে যা করাচ্ছে সেটি জনমতের বিরুদ্ধে বেআইনী কাজ।
খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাল, ঘষা-মাজা নথির ওপর ভিত্তি করে হয়রানীমূলক মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া প্রধানমন্ত্রীর জিঘাংসা চরিতার্থ করার এক ঘৃন্য দৃষ্টান্ত। যা বিশ্বে উদাহরণহীন। মামলাটি হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই জনমতের সাথে আদালতের দেয়া রায় খাপ খায়নি। দেশের জনসম্মতিতে বেগম খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনর একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তাঁর প্রতি প্রধানমন্ত্রী বারবার ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন নির্দয়ভাবে। দেশনেত্রী বেগম জিয়ার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ী কেড়ে নিয়ে এবং তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের প্রতি অব্যাহত নির্যাতন চালিয়েও প্রধানমন্ত্রীর ক্রোধ মিটছে না। জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কোন সংশ্লিষ্টতা নাই।
সরকারি খরচে আওয়ামী লীগের সভা ও নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতা বলেন, সরকারি খরচে মন্ত্রীরা বিদেশ গিয়ে সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে নির্বাচনী বক্তৃতা ও সাংগঠনিক সভা করছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনগণের টাকায় শেখ হাসিনা হাসিনা সরকারি সফরে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রী করতে পারেন না, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে এটার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতো। কিন্তু দুদক কী এ বিষয়ে কোন তৎপরতা দেখাতে পারবে? দুদক চেয়ারম্যান নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন দেশে সুশাসন না থাকায় দুর্নীতি রোধ করা যাচ্ছে না। দুদক চেয়ারম্যানের কথায় প্রমাণ হয় তিনি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহসী নন। অবৈধ ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রীরা অনিয়ম ও সর্বব্যাপী দুর্নীতির জন্য এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুদক সরকারের টিকিটিও ছুঁতে পারবে না।
আগাম নির্বাচন নিয়ে এরশাদের বক্তব্যের বিষয়ে রিজভী বলেন, কয়েকদিন আগে সরকারের সহযোগী হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন দেশে আগাম নির্বাচন হতে পারে। গত রোববার ২২ জন ডিসি ও ২৯ জন এসপি নিয়োগ ও বদলী করা হয়েছে। এটা আগাম নির্বাচনের আলামত কী না সেটা নিয়ে মানুষের মধ্যে ধু¤্রজাল তৈরী হয়েছে। আপনারা নিজেদের মতো করে যতোই নির্বাচনী মাঠ সাজান না কেন তাতে কোন কাজ হবে না। কারণ বিএনপি ও বেগম জিয়া ছাড়া দেশে অংশগ্রহণমূলক কোন নির্বাচন হবে না, জনগণই এধরণের নির্বাচন হতে দেবে না। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:১০ পিএম says : 0
    " সময় " একদিনে মাস নয়, আরো ২৯দিন বাকী আছে; সুযোগ পেয়ে বনের বানর, মাথার উপর নাচে।সকল আশা মিটিয়ে নাও, সময় তোমাদের শেষ;নিরহ জনতা জেগে উঠেছে, রক্ষা করতে দেশ।অনেক করিয়াছ গলাবাজী,পেয়ে অস্ত্রের বল, এবার নৌকা পড়ছে শুকনায়,নদীতে নাই জল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ