Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন ও ভারতের সম্পর্ক মেরামত প্রক্রিয়া শুরু

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। সাউথ বøক থেকে তার পূর্বসূরীর অবসরে যাওয়ার পর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করছেন না। শুরু হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় চীনা নীতি পরিত্যাগের কাজ যেটা গত তিন বছর ধরে চলে আসছে। এই নীতিগুলোর মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের ব্যাপার রয়েছে, বাস্তবতা উপলব্ধির ব্যাপার নেই। এতে করে দুই দেশই প্রায় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিরে তাকালে মনে হয়, এই নীতিগুলো চটকদার ছিল, তবে আসলে বন্ধ্যা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে উল্টা ফলদায়ক। একমাত্র ব্যতিক্রম হয়তো চীনের সাথে সমস্যাটা ‘আমেরিকা প্রথম’ যুগে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে ভূমকি রেখেছে।
স্পষ্টতই, ভারত-চীন সম্পর্কের উষরভূমিকে রাতারাতি উর্বর করা যাবে না। জাতীয় অগ্রাধিকার তালিকায় বহু বিকৃতি রয়েছে। এরপরও, নতুন পররাষ্ট্র সচিব গোখলে সাউথ বøকের দায়িত্ব গ্রহণের ২৫ দিনের মধ্যে যে বেইজিং মিশনের পরিকল্পনা নিয়েছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে আবর্জনা পরিস্কারের জন্য দেরি না করার ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চীনের কিংডাওতে আগামী জুনে সাংহাই কোঅপারেশান সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে যে বৈঠকের কথা রয়েছে, সেই বৈঠক থেকে গঠনমূলক সুফল পেতে হলে খুব বেশি সময়ও অবশ্য হাতে নেই। ‘চীনা হাত’ এবং ভারতীয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এমনকি সমস্যাপূর্ণ সময়েও বেইজিংয়ে যে সুনাম রয়েছে গোখলের, স্পষ্টতই তার উপর ভরসা করছেন ভারতীয় নেতারা।
গত ২৩-২৪ ফেব্রsয়ারি সিনিয়র চীনা কর্মকর্তাদের সাথে গোখলের আলোচনা নিয়ে যে প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে, সেখানেও ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। আগামী মাসগুলোতে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের সময়সূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং কি ভারত সফর করবেন? কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার পলিটব্যুরোর দ্বিতীয় র‌্যাংকের সদস্য ছাড়াও চীনের অর্থনৈতিক নীতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তিনি। আর ভারত-চীন সম্পর্কের যে কোন ধরনের উত্তরণ হতে হলে সেটা হতে হবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে। সা¤প্রতিক বছরগুলোর শত্রুতার পরিবর্তে যেখানে উভয়েরই লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে।
আরও খুশির খবর হলো চীনের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে নয়াদিল্লীতে স্বাগত জানানো হয়েছে। তিনি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন। জিনের সফরে উচ্চমাত্রায় মনোযোগ দিচ্ছে মোদি সরকার। কারণ ভারত জানে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক ও ব্যাংকার যার আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে (বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এআইআইবি এবং সিল্ক রোড তহবিল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পকে বড় ধরনের সহায়তা করছে। ২০১৫ সালের শুরুতে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’র বার্ষিক সম্মেলনে বিআরআই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ এক বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট শি বলেছিলেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং আঞ্চলিক সংহতির জন্য এআইআইবি সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শি আরও বলেন, সিল্ক রোড তহবিল এবং এআইআইবি অর্থনৈতিক সংযোগ এবং নতুন ধরনের শিল্পায়নে (এশিয়া প্রশান্ত এলাকায়), এবং সব দেশের জন্য উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখবে, যাতে জনগণ এই উন্নয়নের ফল ভোগ করতে পারে।
ভারত সরকার জিনের জন্য নয়াদিল্লীতে উচ্চ পর্যায়ের সরকারী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে আগামী মঙ্গলবার। সেখানে ভারতের অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারক, শিল্প ও ব্যবসায়ীয়ের সাথে “নিউ ফিনান্সিং প্যারাডাইম ফর সাসটেইনেবল ইনফ্রাস্ট্রাকচার” বিষয়ে মতবিনিময় করবেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে মোদির মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্য উপস্থিত থাকবেন- অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি, সড়ক পরিবহন এবং হাইওয়ে ও শিপিং মন্ত্রী নিতিন গাদকার এবং হাউজিং ও আরবান অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হারদিপ সিং পুরি। এছাড়া সাউথ ও নর্থ বøকের শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারকরা তো থাকছেনই।
আমার বিবেচনায় এই পদক্ষেপ সময়োপযোগী এবং বিশাল গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যায়, বিআরআইয়ের মতো বিষয়ে আস্থা অর্জনের ব্যাপারে রাজনৈতিক সাহস দেখাতে পারবে সরকার। মূল বিষয় হলো, এআইআইবি বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে। বিভিন্ন চীনা বিবৃতিতে বারবার জোর দিয়ে বলা হচ্ছে যে, বিআরআই প্রকল্পে তৃতীয় পক্ষের অর্থায়নকে স্বাগত জানাবে বেইজিং।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গোখলেকে বেইজিংয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এতে ভারতের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া এবং উভয়ের সুফল নিশ্চিত করার জন্য চীনের আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ