২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ব্রঙ্কিয়াল সমস্যাকে আমরা প্রথমে তেমন গুরুত্ব দিতে চাই না। বুকে কোনও সমস্যা হলে নিজেরাই নিজেদের অসুস্থতার চিকিৎসা করি। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগ জটিল আকার ধারণ করে।
ইদানিং ছোটখাটো ব্যাপারে চিকিৎসকের কাছে না যাওয়াটাও একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে শরীর খারাপ হলে প্রথমেই অনেকে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে পছন্দসই কয়েকটি ট্যাবলেট ও সিরাপ কিনে খেতে শুরু করেন। এভাবে ওষুধ খাওয়ার ফলে রোগ সারার পরিবর্তে রোগ আরও বেড়ে যায়। কারণ, রোগ সারাতে গেলে প্রথমে রোগ নির্ণয় এবং পরে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ দুটো কাজ করা অসম্ভব ব্যাপার। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। রোগীর কষ্ট ও ভোগান্তি দুটোই বেড়ে যায়।
তাই রোগ নিয়ে ছেলেখেলা না করাই উত্তম। শুধু ব্রঙ্কিয়াল সমস্যা নয়, কোনও রোগকেই কখনও অবহেলা করা উচিত নয়। কারুর ব্রঙ্কাইটিস হলে ইচ্ছেমতো ঔষধ খেয়ে রোগটাকে আরও জটিল না করাই ভাল। ব্রঙ্কাইটিস ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে পরিণত হয়। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস যে শত চিকিৎসা করেও সারানো যায় না এটা আমরা অনেকেই জানি না। মনে রাখতে হবে ব্রঙ্কাইটিস নিউমোনিয়ার থেকেও খারাপ অসুখ। দু-তিন সপ্তাহ ঠিকভাবে চিকিৎসা করলে নিউমোনিয়া সেরে যায়। কিন্তু ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের জন্য জীবনভর ভুগতে হয়।
বর্তমানে দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধুমপায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ দূষণ ও ধূমপানের জন্য মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মূলত জীবাণু ও ভাইরাসের কারণে বুকের রোগ বা ব্রঙ্কিয়াল সমস্যা হয়। কিন্তু এখন দূষণ ও ধূমপান ব্রঙ্কাসে জীবাণু ও ভাইরাস সৃষ্টির মতো পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই জানি তামাকে এমন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে সেগুলো শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। যেমন টার, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, নিকোটিন ও পলোনিয়াম ২১০ ইত্যাদি। তামাক পাতাকে পোকার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পলোনিয়াম ২১০ ব্যবহার করা হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন কী ভয়ঙ্কর বিষ ধূমপায়ীদের শরীরে প্রবেশ করে।
আমাদের ব্রঙ্কাসে সূ² চুলের মত রোঁয়া বা সিলিয়া থাকে। এ সিলিয়া থাকার জন্যই আমাদের বুকের ভিতরে ধূলো, ময়লা জমতে পারে না। কিন্তু ধূমপান ও দূষণের জন্য সিলিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিলিয়া খসে পড়ে বা ছোট হয়ে যায়। ফলে ধূলো ময়লা ঠিকভাবে পরিস্কার হয় না। এ জমে থাকা ধূলো ময়লা জীবাণু সৃষ্টির মতো পরিবেশ তৈরি করে। এছাড়া ধূমপানের ফলে অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ টার-ও ওখানে জমতে থাকে। দেখা দেয় বহুবিধ সমস্যা। এ টার এর জন্য ব্রঙ্কিয়াল ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। মানবদেহের ব্রঙ্কাসের ভেতরে কতকগুলো গø্যান্ড থাকে যাকে আমরা মিউকাস গø্যান্ড বলি। ভাইরাস ও জীবাণু সংক্রমণের ফলে এ গø্যান্ডগুলো আকারে বেড়ে যায়। তখন ওই গø্যান্ড থেকে অনেক বেশি পরিমাণে মিউকাস ক্ষয়িত হয়। এ মিউকাস জীবাণুর পুষ্টিসাধন করে। ফলে খুব সহজেই জীবাণুগুলো বাড়তে পারে। এর ফলে প্রথমে হয় অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস, তারপরে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানির থেকেও বহুগুণ বাজে একটি রোগ হতে পারে। রোগটির নাম এমফাইসিমা। এ রোগটি সহজে ভালো হয় না। ব্রঙ্কাইটিসের জন্য রোগীর কাশি হয়। কাশতে কাশতে রোগীর ফুসফুসের বায়ু থলিগুলো বড় হয়ে যায়। এদিকে, থলির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার দরুন জমা বায়ু বাইরে বেরোতে পারে না। এমফাইসিমা অত্যন্ত জটিল রোগ।
বংশগত কি না ঃ বাবা বা মার ব্রঙ্কিয়াল সমস্যা থাকলেই যে ছেলে বা মেয়ের ব্রঙ্কিয়াল সমস্যা হবে তা নয়। কিন্তু কোনও পরিবারের গৃহকর্তা যদি স্ত্রী ও শিশু সন্তানের সামনে ধূমপান করেন তাহলে স্ত্রী ও শিশুসন্তান হল প্যাসিভ স্মোকার। এর ফলে ওই শিশুটির পরবর্তীকালে ব্রঙ্কিয়াল সমস্যা হতেই পারে বা হবেই। প্রথমদিকে প্যাসিভ স্মোকারের ছোটখাটো সমস্যা পরবর্তীকালে বড় আকার ধারণ করে। এখন যদি সে ছেলেটি বা মেয়েটির বাবার একই রোগ থাকে তাহলে অনেকেই ভেবে বসেন এটা বংশগত রোগ। আসলে এটা বংশগত নয়, এটা ধূমপানজনিত রোগ।
উপযুক্ত ঋতু ঃ শীত এবং বর্ষাকালে ব্রঙ্কিয়াল সমস্যা বাড়ে। তাই এ সময় প্রত্যেকের একটু সাবধানে থাকা উচিত। বিশেষ করে সাবধানে থাকবেন দুর্বল ব্যক্তিরা, যারা ঘন ঘন এ রোগে আক্রান্ত হন। তাদের অবশ্য সারা বছরই সাবধানে থাকা উচিত।
আগেই বলা হয়েছে, নানা কারণে এ সমস্যা বাড়ে তাই আগে যারা অসুস্থ হয়েছেন তাদের বিশেষভাবে সাবধানে থাকতে হবে। তাদের প্রথমেই ধূমপান ছাড়তে হবে। ধোঁয়া, ধূলো এড়িয়ে চলার জন্য মাস্ক পরুন। এ মাস্ক বাড়িতেই তোয়ালে কেটে তৈরি করা যায়। তোয়ালে কেটে তাতে ইলাস্টিক লাগিয়ে নিলেই হয়। অনেকটা সার্জনরা যেমন পরেন ঠিক সেরকম দেখতে। তবে ব্যবহার করার আগে মাস্কটি ভিজিয়ে, নিংড়ে নিয়ে পরতে হবে। এর ফলে ধুলো, ময়লা মাস্কে আটকে থাকবে। সরাসরি নাকে ঢুকতে পারবে না। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে তাদের রাতে খুব কম খাওয়া উচিত। কারণ, পেটভরে খেলে শ্বাসকষ্ট আরও বাড়বে। তাই খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটু সংযমী হতেই হবে।
হাঁপানি ও টিবি ঃ ব্রঙ্কিয়াল সমস্যা থাকলেই হাঁপানি হবে কিনা বলা মুশকিল। তবে এমফাইসিমা হতে পারে, শ্বাসকষ্ট থাকবে। তাই বারে বারে যারা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন তাদের একটু সাবধানে থাকতেই হবে। ধোঁয়া, ধূলো এড়িয়ে ধূমপান অবশ্যই ছাড়তে হবে।
তবে একবার যাদের টিবি হয়েছে তাদের যদি বার বার ইনফেকশন হয় তাহলে আবার টিবি রিল্যাপস করতে পারে। তাই এসব মানুষদেরও সাবধানে থাকা উচিত। কারণ কাশির দমকে ক্যাপিলারি ছিঁড়ে দু-এক ফোঁটা রক্ত বেরোতে পারে।
ঠান্ডা ও গরম ঃ অসুস্থ বা যাদের ঘন ঘন ন্যাজাল অ্যালার্জি বা ইনফেকশন হয় তাদের ঠান্ডা, গরমে সমস্যা হবে। কিন্তু যারা এয়ার কন্ডিশন গাড়িতে চেপে অফিস যান এবং আবার ওইভাবে ফিরে আসেন অর্থাৎ যাদের গরমে থাকতেই হয় না তাদের তেমন সমস্যা হবে না।
সমস্যা হয় সাধারণ মানুষের। তাই ঠান্ডা থেকে বাইরে বেরোবার বা ঢুকবার সময় একটু অপেক্ষা করে তবেই বেরোবেন বা ঢুকবেন। গায়ে ঘাম থাকলে বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর এয়ার কন্ডিশন রুমে ঢুকতে হবে, তা না হলে ন্যাজল অ্যালার্জি বা ইনফেকশন হতে পারে।
গোসল ঃ সুস্থ মানুষ যে ভাবে জীবনযাপন করেন ঠিক সে ভাবেই অসুস্থ বা দুর্বল ব্যক্তিদের চলাফেরা করা উচিত নয়। এসব রোগীকে সবসময় ঠান্ডা পানিকে এড়িয়ে চলা উচিত। তাদেরকে উষ্ণ পানিতে গোসল করে জামা পরে বাথরুম থেকে বেরোতে হবে। বারো মাস তাদের এভাবেই চলতে হবে।
প্রতিরোধ ঃ ধুলো, ধোঁয়া এড়িয়ে চলতে হবে। যারা কলকারখানায় কাজ করেন তাদের কাজের সময় পানি ভেজানো মাস্ক পরা উচিত। এর ফলে পুরোটা না হলেও ৯০ শতাংশ ধুলো আটকানো যাবে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সে অভ্যেস পরিত্যাগ করতে হবে। ¬ যাদের অ্যালার্জি আছে প্রয়োজন হলে তাঁরা অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। ¬ অ্যাজমার রোগীদের বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। ¬ উত্তেজনা, ধোঁয়া, ধুলো এড়িয়ে চলতে হবে। ¬ ঠান্ডা লাগানো চলবে না। ¬ প্রচন্ড পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ¬ কেউ ধূমপান করলে সে স্থান পরিত্যাগ করতে হবে। ¬ আমি নিজে যেহেতু আইসক্রিম খেতে ভালোবাসি তাই রোগীদের আমি আইসক্রিম খেতে বারণ করি না। একটু আধটু আইসক্রিম খেতে পারেন।
একটি টোটকা - প্রথমেই কফ সিরাপ খাবেন কেন? বুকে সর্দি জমে আছে, খুব কাশিও হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আইসক্রীম না খাওয়াই ভাল। এক্ষেত্রে এ টোটকাটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন-
এককাপ গরম পানিতে, এক চামচ মধু, একটু লবণ ও সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে দিনকতক পান করলে সঙ্গে সঙ্গে ফল পাবেন। ঘন ঘন সর্দি-কাশি হবে না। এখন যদি বুকে কফ জমে থাকে তাহলে সে কফ শুকাবে না এবং খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাবে।
তবে বøাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস থাকলে এ টোটকাটি খাওয়া চলবেনা। এটি শুধু বড় নয় শিশুদেরও খাওয়াতে পারেন। কদিন ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন বাজারে চলতি দামী দামী কফ সিরাপের থেকে এটি কোনও অংশে খারাপ নয় বরং বহু গুণে ভালো।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।