Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চান্দিনায় মৌসুমী ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল: কুমিল্লার চান্দিনায় মৌসুমী ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথাইলিন ও ইথরিল স্প্রে দিয়ে পাকানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফল। চান্দিনার বাজারে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ফলগুলোর অধিকাংশই কৃত্রিমভাবে পাকানো। বাণিজ্যিকভাবে কলাসহ সব ধরনের ফল পাকানোর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনারস ১২-১৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। কিন্তু ৫০০ পিপিএম এনএনএ বা ১০০ পিপিএম জিএ-৩ দ্বারা শোধন করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৪১ দিন পর্যন্ত আনারসকে সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে সব ফলই স্বাভাবিক সময়ের আগেই পাকানো হচ্ছে। মূলত ইথাইলিন জাতীয় গ্যাস ও ইথরিল (এক ধরনের হরমোন) স্প্রে করে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে ফলমূল পাকানো হয়। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এসব ফল দুই-তিন দিনের বেশি রাখা যায় না, পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চান্দিনা, মাধাইয়া, দোল্লাই নবাবপুর, বাড়েরা, মহিচাইল, বদরপুর, কাদুটি বাজারগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথাইলিন, ইথরিল ¯েপ্র দিয়ে পাকানো ফল। এখন আপেল, আঙ্গুর, কলা, আম, নাশপাতি, কমলা লেবুসহ দেশের বাইরে থেকে আসা বেশির ভাগ ফলই ঘরে রাখলে সহজে নষ্ট বা পচন ধরে না। এর কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে জানা যায় আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি, কমলালেবুসহ দেশের বাইরে থেকে আসা বেশির ভাগ ফলে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। আর দেশে উৎপাদিত অপরিপক্ক ফল পাকানো জন্য কার্বাইড কিংবা দেয়া হয় আগুনের তাপ। এ কারণে ফলের আসল স্বাদ যেমন পাওয়া যায় না তেমন উপকারের বদলে দেখা দেয় মারাত্মক রোগব্যাধি।
চান্দিনার ফল ব্যবসায়ী কাইয়ুম জানান, এক গ্রাম ফরমালিন মিশ্রিত পানির মধ্যে ১০ থেকে ১২ কেজি আঙ্গুর বা নাশপাতি ভেজানো হয় আর আপেল ও কমলা লেবুতে দেয়া হয় ছিটিয়ে। যে কারণে তিন-চার সপ্তাহ রাখলেও পচে না বা এতে মাছি বসে না। তবে ফরমালিনের ক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে গেলে ওই ফল তাড়াতাড়ি পচে যায়। মাধাইয়ার ফল ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, আঙ্গুর ও নাশপাতি খোলা রাখলে তা দুই থেকে তিন দিন ভালো থাকে। আর আপেল ভালো থাকে পাঁচ দিন। অথচ পাইকারি বাজার থেকে ফল এনে বিক্রি করতে কখনো কখনো এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায়। এ সময় এতে ফরমালিন না দিলে ফল ভালো রাখা যায় না। যে কারণে ফলে ফরমালিন দিতে হয়। তবে দু’এক দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেলে তাতে ফরমালিন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারীদের মতে, বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ এবং বিশুদ্ধ খাদ্য সংক্রান্ত বিধি যুগোপযোগী করা উচিত। কারণ, পুরনো আইন অনুযায়ী ভেজালের দায়ে ২০০ টাকা জরিমানা অথবা তিন মাসের কারাদÐ দেয়া যাবে। ফলে খাদ্যে ভেজালের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করা হলে ২০০ টাকা জরিমানা দিয়ে সে পার পেয়ে যায়। এ আইন ভেজাল প্রতিরোধে ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। সাময়িক জরিমানার বিধানের চেয়ে স্থায়ী ও বড় ধরনের সাজার ব্যবস্থা থাকলে এ বিষয়ে ফলপ্রসূ কোনো কিছু আশা করা যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পি কে মজুমদার মোবাইলে জানান, ফরমালিনযুক্ত ফল আর্সেনিকের চেয়েও ক্ষতিকারক। এতে লিভারের সমস্যাসহ ক্যান্সার হওয়ার অধিক ঝুঁকি থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসায়নিক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ