মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : নেপালের নতুন কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী ‘সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে’ ভারতের সাথে সম্পর্ককে ‘হালনাগাদ’ করতে চান। তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নেপালি সৈন্যদের দায়িত্ব পালনের বিধানসহ ইন্দো-নেপাল সম্পর্কের সব বিশেষ ধারা পর্যালোচনা করারও কথাও বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, চীনের প্রস্তাবিত ২.৫ বিলিয়ন ডলারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি আবার চালু করবেন। ভারতপন্থী বিবেচিত আগের সরকার ওই প্রকল্পটি বাতিল করেছিল। নতুন প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রতি তার দেশের নির্ভরশীলতা কমাতে চীনের সাথে অবকাঠামো কানেকটিভিটি বাড়াতে চান বলেও জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের (ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) নেতা খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পর তিনি ‘দিস উইক ইন এশিয়া’কে বিশেষ এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন। ওলি বলেন, ‘রাজনৈতিক পূর্ব-ধারণা বা প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে চাপের কারণে হয়তো প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কাছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিই গুরুত্ব পাচ্ছে। আমরা বুধি গান্ধকি প্রকল্পটি আবার চালু করব। গত জুন মাসে কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের (মাওয়িস্ট সেন্টার) প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল চীনের গেজউবা গ্রুপকে ওই চুক্তিটি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই তা নিয়ে নেপালে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর আগের মাসে নেপাল যোগ দিয়েছিল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে। দহল পদত্যাগ করার পর নেপালি কংগ্রেস দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হন শের বাহাদুর দেউবা। দৃশ্যত ভারতের কাছ থেকে চাপের কারণে তিনি প্রকল্পটি বাতিল করে দেন। ওলির ইউএমএল ও মাওয়িস্ট সেন্টার সা¤প্রতিক নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়। হিমালয়ের দেশটিকে ফেডারেল প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রণীত নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর এটিই ছিল নেপালের প্রথম নির্বাচন। দুই কমিউনিস্ট পার্টি এখন একীভূত হওয়ার দিকে এগুচ্ছে। চীন এর সমর্থক। ওলি বলেন, আমাদের পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার বাড়ছে। তবে আমাদের এর পুরোটাই আমদানি করতে হয়। পেট্রোলিয়ামের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে আমাদেরকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। নেপালের চাহিদার প্রায় পুরো পেট্রোলিয়াম আসে ভারত থেকে। গত ৫ বছরে এর জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে তিনগুণ। এছাড়া ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতিও বিপুলভাবে বাড়ছে। গত অর্থবছরে (২০১৬ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত) তা ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। নেপালের সার্বিক ঘাটতির ৮০ ভাগই এই ঘাটতি। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দুই আঞ্চলিক পরাশক্তি চীন ও ভারতের মধ্যেকার লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ভারতের জিএমআর ও এসজেভিএনকে দুটি ড্যাম প্রকল্প এবং চীনের থ্রি জর্জেস করপোরেশনকে একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। নয়া দিল্লির সাথে ওলির সম্পর্কে সা¤প্রতিক সময়ে আরো অবনতি ঘটেছে। তিনি মনে করেন, ২০১৬ সালের আগস্টে তার সরকারের পতনের পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল ভারত। ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নেপালের নতুন সংবিধান প্রশ্নে ভারতের সাথে তার তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল। ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাধেশিদের প্রতি নতুন সংবিধানে বৈষম্য প্রদর্শন করা হয়েছে বলে নয়া দিল্লি অভিযোগ করছিল। ওলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারত ভূবেষ্টিত নেপালের ওপর অবরোধ আরোপ করে। তিনি তখন এই সঙ্কট থেকে উতরাতে চীনের দ্বারস্থ হন এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেন। তিনি পরে নেপালের রাষ্ট্রপতির ভারত সফর বাতিল করেন, রাষ্ট্রদূতকে নেপালে ডেকে আনেন। বিপুল শক্তির প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে এ ধরনের সাহসিকতা প্রদর্শন বিরল ব্যাপার। এবারের নির্বাচনে ওলি তার ভারতবিরোধী ভাবাবেগকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন। নেপালি জাতীয়তাবাদ উস্কে দেওয়ার জ্বালাময়ী কথা বলে ২৭৫ আসনবিশিষ্ট পার্লামেন্টে তার দল ১২১টিতে জয়ী হয়। তবে ক্ষমতায় আসার পর তিনি বেশ সতর্কভাবে কথা বলছেন। তিনি বলেন, ভারতের সাথে আমাদের সবসময়ই চমৎকার সম্পর্ক ছিল। ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টে থাকা কিছু উপাদান কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করেছিল। তবে ভারতীয় নেতারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে হস্তক্ষেপ করবেন না, আমরা একে অন্যের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আগের ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করছেন। ওলি জয়লাভ করার পর তিনবার তিনি তাকে ফোন করেছেন, সহযোগিতার বার্তা দিয়ে তিনি তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে পাঠিয়েছেন। নেপালে ক্রমবর্ধমান চীনা স্বার্থের ব্যাপারে দিল্লি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। মালদ্বীপে এখন এমন এক ব্যক্তি দেশ চালাচ্ছেন, যিনি পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভর করে আছেন। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে আবার শ্রীলংকায় চীনা বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে ভারতের সাথে শান্তি ও শুভেচ্ছার সতর্ক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ সত্তে¡ও দিল্লির কাছ থেকে আরো বেশি সুবিধা বাগিয়ে নিতে চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওলি। তিনি বলেন, ভারতের সাথে আমাদের বিপুল কানেকটিভিটি রয়েছে। রয়েছে উন্মুক্ত সীমান্ত। আমরা কানেকটিভিটি আরো বাড়াব। তবে আমরা ভুলব না যে আমাদের রয়েছে দুই প্রতিবেশী। আমরা মাত্র এক দেশের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে থাকব না। তিনি বলেন, চীনের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়নকে বিবেচনা করছেন। ভৌগোলিক জটিলতার কারণেই চীনের সাথে নেপালের সম্পর্ক ভারতের চেয়ে কিছুটা সমস্যাসঙ্কুল। তিনি বলেন, প্রযুক্তি এখন দূরত্ব কমিয়ে আনছে। ১৯৭০ সালে কি কল্পনা করা যেত যে কাঠমান্ডু থেকে পূর্ব নেপালে আমার বাড়ি দু’দিনে যাওয়া যেতে পারে? তিনি বলেন, চীন যদি তাদের রেল নেটওয়ার্ক শিগাটসে পর্যন্ত এবং তারপর তিব্বতের কিরঙ পর্যন্ত নিয়ে আসে, তবে তা নেপাল পর্যন্ত স¤প্রসারণ করা খুবই সহজ হবে। তাছাড়া চীন ও নেপালকে সংযুক্ত করার জন্য তিনটি রাস্তা নির্মাণের কাজও চলছে। কয়েক বছরের মধ্যে এসবের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এতে চীন-ভারত ব্যবসাও বাড়বে। নেপাল থাকবে মাঝখানে। ২০২০ সাল নাগাদ কিঙঝাই-তিব্বত রেলওয়ে স¤প্রসারণ করার ব্যাপারে আশাবাদী চীন। তারা কাঠমান্ডু পর্যন্ত তা স¤প্রসারণ করতে চায়। অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতা ছাড়াও সাইবার কানেকটিভিটির প্রতিও আগ্রহ রয়েছে ওলির। ভারতের মনোপলির অবসান ঘটিয়ে গত মাসে নেপালে চীন ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান শুরু করে। কাইরঙ ও রাসুওবাঘাধির মধ্যে ফাইবার ক্যাবেল সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একসময় নেপালের বাজার ছিল পুরোপুরি ভারতের নিয়ন্ত্রণে। এখন সেখানে তারা চীনের কাছ থেকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। ভারত ও নেপালের মধ্যে সই হওয়া ১৯৫০ সালের শান্তি ও মৈত্রী চুক্তিকে নেপালি জাতীয়তাবাদরিা নেপালের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আপস হিসেবে দেখছে। ওই চুক্তির ফলে নেপাল অনেক দিক থেকেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। স্বাধীন প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে সমস্যায় পড়ছে নেপাল। অবশ্য সা¤প্রতিক মতপার্থক্য সত্তে¡ও ভারত ও নেপালের মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। সীমান্ত উন্মুক্ত থাকায় লাখ লাখ নেপালি অবাধে ভারতে গিয়ে কাজ করতে পারছে, ভ্রমণ করতে পারছে। ২৫ হাজারের বেশি নেপালি কাজ করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। এছাড়া আারো ২০ হাজার নেপালি ভারতের আধা সামরিক ও পুলিশ বাহিনীতে কাজ করছে। ওলি বলেন, ১৯৫০ সালের চুক্তিটি নিয়ে প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণভাবে ও পারস্পরিকভাবে আলোচনা করা উচিত। আমরা নতুন বিশ্বে বাস করি। নেপাল নতুন সফর শুরু করেছে। যাকিছু হালনাগাদ করা দরকার হবে, আমরা হালনাগাদ করে নেব। যা সেকেলে বিবেচনা করব, সেগুলো আধুনিক সময়ের আলোকে পরিমার্জনা করে নেব। এসএএম, এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।