চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মহান আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এই জন্য যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত -৫৬)। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার’ (সূরা বাকারা: আয়াত-২১)। সেই ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহপাক একটি শর্ত যুক্ত করেছেন। সেই শর্তটি হচ্ছে ইলিম বা জ্ঞান। ইলম বা জ্ঞান ব্যতীত কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। এজন্য ইবাদত করার পূর্বে এ সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করা সকলের উপর ফরজ। শিক্ষা লাভ করা থেকে নর-নারী কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। কেউ বিরত থাকতে পারবে না। আল্লাহপাক পুরুষকে যেমন শিক্ষা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন তেমন নারীকেও শিক্ষা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর বিধানে শিক্ষা অর্জন করা নর-নারীর সমান অধিকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পবিত্র কোরআন নাজিল করে মহান আল্লাহপাক সর্ব প্রথম যে নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশটাই হচ্ছে নর-নারীর জন্য শিক্ষা বিষয়ক। ইরশাদ হচ্ছে-‘পড় তোমার প্রভুর নামে” (সূরা আলাক: আয়াত-১)। শিক্ষা ছাড়া আল্লাহকে জানা বুঝা যাবে না বিধায় শিক্ষা অর্জন করা প্রথম ও প্রধান ফরজ। এই ফরজ কাজ থেকে বিরত থাকা মানেই সকল ক্ষেত্রে ধ্বংস ডেকে আনা। মানবতার ইহ-পরকালীন শান্তির একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা। আর এই শিক্ষা নর-নারী উভয় কেই অর্জন করতে হবে। ইলম অর্জন করা সকল নর-নারীর উপর ফরজ ঘোষণা করে হযরত আনাস রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. ইরশাদ করেন- ‘ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ’ (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)।
ইসলামে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে নারীশিক্ষার বিকল্প নেই। বিশেষ করে একটি পরিবারকে সুশিক্ষিত করে তুলতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোরআন হাদীস যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব, নবী সা. সর্ব প্রথম নারীদেরকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এই শিক্ষার বিধান সর্ব প্রথম বাস্তবায়ন করার সুবর্ণ সুযোগ পান রাসুলে পাক সা. এর প্রিয় সহধর্মিণী হযরত খাদীজাতুল কুবরা রা.। কাজেই নারী শিক্ষার বিষয়টাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অগণিত হাদীস দ্বারা এটাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত- নবী সা. নিজেই নারীদেরকে শিক্ষাদান করতেন, নারীদেরকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করতেন। সাহাবায়ে কেরামের নিকট থেকে নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করতেন এমনকি বড় বড় সাহবীগণও নারীদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। হযরত জুবায়ের ইবনে মুতইম রা. বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘একবার এক মহিলা রাসূল সা. এর দরবারে এসে কিছু বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করলো। বিদায় নিয়ে যাবার সময় রাসূল সা. তাকে বললেন আর জানার মত কিছু থাকলে অন্য সময় জেনে নিও। মহিলাটি আরজ করলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনাকে না পাই অর্থাৎ যদি আপনি দুনিয়াতে না থাকেন তখন কি হবে? রাসূল সা. বললেন- আবু বকর রা. এর নিকট তখন শিক্ষা গ্রহণ করিও’ (বুখারী ও মুসলিম, তিরমিজী)। উক্ত হাদীস দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত- নবী সা. স্বয়ং নিজে নারীদেরকে শিক্ষা দিতেন এবং তার অনুপস্থিতিতে অন্য জনের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য নারীদেরকে উৎসাহিত করতেন। রাসূল সা. এর যুগে এবং পরবর্তী সময়ে অগণিত মহিয়সী মুসলিম নারী শিক্ষাদান করেছেন এবং তারা শিক্ষকতা করে নিরক্ষরতা দূর করেছেন। মহিলা সাহাবীদের মধ্যে অনেকে ছিলেন অগাধ পাÐিত্যের অধিকারী। হযরত আয়শা রা. ছিলেন হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের এক মহান পÐিত। চার খলিফা সহ বড় বড় সাহাবীরা তার নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। হযরত আবু মুসা আশআরী রা. বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন- “আমরা রাসূল সা. এর সাহাবীরা যখনই কোন মাসআলার ব্যাপারে সন্দেহ বা সমস্যায় পড়তাম তখনই আমরা হযরত আয়শা রা. এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম এবং সঠিক সমাধান পেয়ে যেতাম (তিরমিজী, মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা-৫৭৪)। পুরুষ সাহাবীগণ মহিলা সাহাবীদের নিকট মাসআলা শিক্ষার জন্য যেতেন যা উক্ত হাদীসে উল্লেখ আছে। এর দ্বারা প্রমাণ হলো- মহিলাদের জন্য শিক্ষকতা করা বা মহিলাদের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে ইসলামের কোনো বাধা নেই। তবে শর্ত হলো সর্বদা পর্দা রক্ষা করতে হবে। কেউ যদি পর্দাহীন হয় তাহলে সে তার চরিত্র ও নৈতিকতা হারিয়ে ফেলবে। আর চরিত্র নষ্ট হলে তো শিক্ষা লাভ করেও লাভ নেই। সাহাবায়ে কেরামগণ (নারী-পুরুষ) শিক্ষার জন্য পরস্পর সাক্ষাৎ করতেন, ইলম ব্যাপারে পরস্পর আলোচনা করতেন সত্য কিন্তু এতে পর্দার কোন ব্যাঘাত ঘটতো না। তারা সর্বদা পর্দা রক্ষা করেই চলতেন।
নারীদের জন্য শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয়, বরং উচ্চ শিক্ষা লাভ করতেও ইসলামের কোনো বাধা নেই। যদি নারীরা পর্দা রক্ষা করে চলতে পারে। কারণ শিক্ষা অর্জন করা একটি ফরজ কাজ এবং এর চেয়ে বড় ফরজ হল পর্দা রক্ষা করা। পুরুষের মত নারীরাও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে, শিক্ষকতা করবে এবং শিক্ষার প্রসার করবে এ সম্পর্কিত নির্দেশ পবিত্র কোরআনেই রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে নবী পরিবার! তোমাদের গৃহে যে আল্লাহর বাণী পাঠ করা হয় এবং হিকমত পরিবেশন করা হয় তা তোমরা স্মরণ কর এবং প্রচার কর’ (সূরা আহযাব: আয়াত-৩৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।