পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে দেশি-বিদেশি যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি নতুন নয়। সীমাহীন দুর্ভোগ মোকাবেলা করেই তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিমানবন্দরের ভেতরের নানা ঝক্কি-ঝামেলা সামলিয়ে বের হওয়ার পর যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নতুন ভোগান্তিতে। বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে অসহনীয় যানজটের কারণে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। এই যানজটে পড়ে প্রতিদিন গড়ে বিদেশগামী ২০০ যাত্রী ফ্লাইট মিস করছেন। এ তালিকায় সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে ভিআইপি, সিআইপি ও বিদেশি যাত্রী রয়েছেন। ফ্লাইট মিস করা যাত্রীদের অভিযোগ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। সম্প্রতি ফ্লাইট মিস করায় দুই বিমানবন্দর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দুই কানাডীয় নাগরিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারা ক্ষতিপূরণ দাবী করে মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী অনেক সাধারণ যাত্রীও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স ও বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। এয়ার লাইন্সগুলো জানিয়েছে, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। ফলে এ নিয়ে টানাপড়েন চললেও মূল সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
একটি দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির প্রতীক। বিমানবন্দরের চেহারা এবং এর সেবার মান দেখে যাত্রীরা বিশেষ করে বিদেশিরা দেশটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন। যে কোনো দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। একে বলা হয়, দেশের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক ও পর্যটকরা এই গেটওয়ে দিয়ে প্রবেশ করেন। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় বিমানবন্দরে তাদের যাতায়াত স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ ব্যবস্থায় মসৃণ করা হয়। তবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ভাবমর্যাদা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রীদের আসা-যাওয়ার বিষয়টিও মসৃণ রাখা হয়। এদিক থেকে আমাদের শাহজালাল বিমানবন্দরের চিত্র একেবারে বিপরীত। এ বিমানবন্দর নিয়ে দেশি-বিদেশি যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এর পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে নিরাপত্তাহীনতার অভিাযোগে গত বছর যুক্তরাজ্যসহ অন্য কয়েকটি দেশ সরাসরি কার্গো যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থগিত করে। দেশগুলোর এ সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে আগত দেশি-বিদেশি যাত্রীদের প্রতিনিয়ত নানা হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ অনেকটা নিয়মিত হয়ে উঠেছে। বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য ভোগান্তি শেষে যাত্রীরা যে স্বস্তিতে বের হবে, তারও কোনো উপায় নেই। বের হয়েই চাঁদাবাজদের উৎপাতের শিকার হতে হয়। রেন্ট-এ-কার ড্রাইভারদের লাগেজ নিয়ে টানাটানি কিংবা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে মহা হট্টগোলের মধ্যে যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ে। অনেক সময় যাত্রীদের গায়ে হাততোলা থেকে শুরু করে অপমান-অপদস্তের মাধ্যমে নাজেহাল করা হয়। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে গোলচক্করের ট্র্যাফিক সিগন্যালেও আরেক দফা হয়রানির মুখে পড়তে হয়। একে তো দীর্ঘসময় ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকতে হয়, অন্যদিকে কিছু অসাধু ট্র্যাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীদের গাড়ি আটকিয়ে একশ্রেণীর ট্র্যাফিক পুলিশ তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে। যাত্রীদের যানজটে পড়ার অন্যতম কারণও এটি। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিমানবন্দরের সামনে গোলচক্করে ট্র্যাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রীদের অসহনীয় পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ট্র্যাফিক উত্তর, বিমানবন্দর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতি ৫ মিনিট পরপর টঙ্গী-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ করে ২ মিনিটের জন্য বিমানবন্দর সড়কটি চালু রাখা হবে। অথচ সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। উল্টো বিমানবন্দর এলাকায় যান চলাচলে ট্র্যাফিক বিভাগের বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিদিন গড়ে দু’বার পুরো বিমানবন্দর যানবাহনে স্থবির হয়ে যায়। এ সময় যাত্রীদের লাগেজ মাথায় নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করা ছাড়া উপায় থাকে না। অন্যদিকে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যানজটের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়। এই ট্র্যাফিক অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিমানবন্দরের সামনে বেসরকারিভাবে বহুতল ভবনে মার্কেট ও হোটেল গড়ে তোলা হচ্ছে। বিশ্বের কোনো বিমানবন্দরের সামনে এ ধরনের বহুতল ভবন গড়ে তোলার নজির নেই। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই ভবন চালু হলে পুরো বিমানবন্দর এলাকা অচল হয়ে পড়বে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে দেশি-বিদেশি যাত্রীদের দুর্ভোগ ও হয়রানির বিষয়টি বছরের পর বছর ধরে চলছে। এতে এ বিমানবন্দর সম্পর্কে বিশ্বে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণে যে ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একধরনের উদাসীনতা বলবৎ রয়েছে। বিমানবন্দরের সামনে গোলচক্করের যানজটের কারণে যে বিদেশি যাত্রীদের পাশাপাশি দেশি যাত্রীরা ফ্লাইট মিস এবং ক্ষতিপূরণ দাবী করছে, এতে বিমানবন্দরের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। শুধুমাত্র পরিকল্পিত ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বিমান যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দরকে যদি আক্ষরিক অর্থে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে বিবেচনা করা হয়, তবে এতে গমন ও নির্গমনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরকে করতে হবে সভ্য ও আরামদায়ক ভ্রমনের কেন্দ্র। যাত্রীদের যদি ঢুকতে এবং বের হতে অসহনীয় পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, তবে তা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া কিছু নয়। আমরা মনে করি, শুধু নামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বললে হবে না, এর সার্বিক ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা অপরিহার্য। বিমানবন্দরের সামনে যে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং বিদ্যমান যে ট্র্যাফিক সিস্টেম রয়েছে, তা পুরোপুরি বদলাতে হবে। সাধারণ ট্র্যাফিক ব্যবস্থার চিন্তা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কীভাবে বিমানবন্দরে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ মসৃণ রাখা যায়, এজন্য পরিকল্পিত উপায়ে বিশেষ ট্র্যাফিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।