পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে রয়টার্সের অনুসন্ধান প্রকাশের পর স্বাধীন তদন্ত আহবান
ইনকিলাব ডেস্ক : তাদেরকে একসঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। বসে বসে তারা বৌদ্ধ প্রতিবেশীদের অগভীর কবর খোঁড়া দেখছিলেন। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর, ১০ রোহিঙ্গাকে সেই কবরেই মাটিচাপা দেয়া হলো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ইন দিন গ্রামে। গণকবরটিতে যখন মাটি ফেলা হচ্ছিল তখনও দেহে প্রাণ ছিল কয়েকজনের। তারা কাতরাচ্ছিল। ওই গণকবর খুঁড়েছিল এবং হত্যাকান্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন ইন দিন গ্রামের এমন বৃদ্ধ ও আধাসামরিক বাহিনীর কয়েকজনের সদস্যের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েই গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তারের শিকার হন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। এদিকে, রাখাইনে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ নিয়ে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঘটনাটি নিয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি উঠেছে। ব্রিটিশ এমপি জানান, আন্তর্জাতিক তদন্তের পাশাপাশি বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নেওয়া উচিত। জাতিসংঘের মুক্ত মত ও মতপ্রকাশ বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ডেভিড কাইয়ি এক টুইটে বলেন, এই প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করার সময় রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে গ্রেফতার করে মিয়ানমার পুলিশ। তাদেরকে এখনও কারাগারে রাখা হয়েছে। অবশ্যই তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক তদন্তকারী ইয়াংহি লিও ইন দিন নিধনযজ্ঞের স্বতন্ত্র, গ্রহণযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হত্যাযজ্ঞ নিয়ে গ্রহণযোগ্য তদন্ত ও প্রতিবেদনটি তৈরিকারী মিয়ানমারের কারাগারে থাকা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, ইন দিন গ্রামে সেই দিন কবর খুঁড়তে সাহায্য করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ৫৫ বছরের সোয়ে চে। রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, দু’জনকে গ্রামবাসী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। বাকীদের গুলি করে হত্যা করে সেনারা। প্রত্যেককে দুই থেকে তিনবার গুলি করা হয়। তিনি বলেন, ‘১০ জনের জন্য একটি কবর। তাদেরকে যখন কবর দেয়া হচ্ছিল, তখনও কয়েকজনের দেহ থেকে গোঙানির শব্দ বের হচ্ছিল। অন্যরা ততক্ষণে মারা গেছে।’ এতোদিন ধরে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে খবর বের হয়েছে। প্রথমবারের মতো রয়টার্স সেসব গ্রামবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের সংবাদ পরিবেশন করেছে যারা রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের হত্যা করেছে ও লাশ মাটিচাপা দিয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় গ্রাম ইন দিনে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও এতে সেনা সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে মিয়ানমারের আধা-সামারিক বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। বিবরণ অনুযায়ী, গ্রামটি থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে সেনা সদস্যরা। ইন দিনে নিহত ওই ১০ ব্যক্তির ছবি দেখে তাদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে আশ্রয় নেওয়া স্বজনরা। তারা জানিয়েছে, এদের মধ্যে দুই কিশোর শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যরা পেশায় জেলে, মুদি দোকানি ও ধর্মীয় শিক্ষাগুরু। নিহত ১০ জনের তিনটি ছবি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সরবরাহ করেছে গ্রামটির এক জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ। ১ সেপ্টেম্বর ধারণ করা প্রথম ছবিটিতে দেখা গেছে, ১০ বন্দীকে এক সারিতে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পরের দিন ধারণ করা দ্বিতীয় ছবিটিতে দেখা গেছে, সকাল ১০টার কিছু পরে ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তৃতীয় ও শেষ ছবিটিতে দেখা গেছে, নিহতের লাশ স্তুপের মতো অগভীর কবরটিতে পড়ে আছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিতে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক পুলিশ ইন দিন ও কাছের আরও দুটি গ্রামের বৌদ্ধদের সংগঠিত করে বলে বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা নিশ্চিত করেছেন। আধাসামরিক পুলিশের তিন কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক রাজধানী সিটুই-র গোয়েন্দা বিভাগের এক পুলিশ কর্মকর্তা ইন দিনের রোহিঙ্গা পল্লী ‘নিশ্চিহ্ন’ করার আদেশ সেনাবাহিনীর ওপর মহল থেকে নিচের দিকে এসেছিল বলে জানিয়েছেন। ইন দিনের বৌদ্ধ প্রশাসক ও আধাসামরিক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আধাসামরিক পুলিশের কিছু সদস্য রোহিঙ্গাদের গরু ও মোটর সাইকেল লুট করে পরে সেগুলো বিক্রি করেন। সেপ্টেম্বরের ১ তারিখের মধ্যে কয়েকশ রোহিঙ্গা নিকটবর্তী সমুদ্রসৈকতে আশ্রয় নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাদের মধ্যে পরে হত্যাকান্ডের শিকার ১০ জনও ছিলেন। রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।