নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শেহান মাদুশঙ্কার অভিষেক হ্যাটট্রিকে এবারও শিরোপা স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেল বাংলাদেশের। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে ৭৯ রানে হেরে গেছে মাশরাফির দল। আগে ব্যাট করা লঙ্কানদের দেয়া ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৪১.১ ওভারে ১৪২ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।
বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা এবং তারই স্বদেশি ওয়ানিদু হাসরাঙ্গার পর চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে এই ম্যাচে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করলেন মাদুশঙ্কা। শেষ দুই বলে মাশরাফি ও রুবেলকে ফিরিয়ে কাজটা এগিয়ে রেখেছিলেন ৩৯তম ওভারেই। এক ওভার পর বল হাতে নিয়েই থিতু হয়ে বসা মাহমুদউল্লাহকে প্রথম বলে ফিরিয়েই হ্যাটট্রিকে রাঙালেন নিজের আন্তর্জাতিক অভিষেক। ম্যাচ শেষে তার বোলিং ফিগার ৬.১-১-২৬-৩। সঙ্গে উপহার হিসেবে প্রথম ম্যাচেই ট্রফিতে চুমু খাবার অভিজ্ঞতা। রাজসিক অভিষেক বুঝি একেই বলে!
ইতিহাস গড়ার লক্ষ্য ছিল মাত্র ২২২। তবুও আগের ম্যাচে ব্যাটিংধসের কথা ভেবেই কিনা সতর্ক শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ মিঠুন। তবে শেষ রক্ষায় হয়নি। দলীয় মাত্র ২২ রানে তামিম (৩), মিঠুন (১০), সাব্বিরকে (২) হারিয়ে শুরু থেকেই চাপে বাংলাদেশ। সেই চাপ সামলাতে প্রয়োজন ছিল একটি বড় জুটির। সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে সেটিও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আগের বলেই একটি রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে অল্পে বেঁচেছেন। ২৩তম ওভারের ৪র্থ বলে আর শেষ রক্ষা হয়নি মুশফিকের। ২২ রানে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান থারাঙ্গার তালুবন্দী হয়েছেনে ধনঞ্জয়ার বলে।
এরপর মিরাজ এসেই ফিরে যান মাত্র ৫ রান করে। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তুলে নেন ফিফটি। দলও পৌঁছেছে একশ’র কোটায়। ৭০ বল আর ১০৪ মিনিটের ধৈর্যশীল ইনিংসে এসেছে ওয়ানডেতে নিজের ১৮তম ফিফটি। সাকিব না থাকায় শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭৬ রানে আউট হবার সময় নামের পাশে ৯২ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কার ঝলমলে ইনিংস।
ত্রিদেশীয় সিরিজে আগের চার ম্যাচেই টস জিতেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে ফাইনালে ফাইনালে এসে শ্রীলংকা অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালের কাছে হেরে গেলেন তিনি। এতে প্রথমে ফিল্ডিং করতে হয়েছে টাইগারদের। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৮ রানে সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ওপেনার গুনাথিলাকাকে তামিমের ক্যাচে পরিণত করে ও খানিক বাদে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা কুসল মেন্ডিসকে (৯ বলে ২৯) মাশরাফি ফেরালেও দ্রুত নিজেদের গুছিয়ে নেয় লঙ্কানরা। লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে থারাঙ্গা-চান্দিমালদের ব্যাটে। বলতে গেলে শেষ দিকে বাংলাদেশী বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং খুব বড় হতে দেয়নি লক্ষ্য। ৩ উইকেটে ১৫৮ রানের পরও তাই মাত্র ২২১ রানে আটকে যায় সফরকারীদের ইনিংস। সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন থারাঙ্গা। দুটি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেন ডিকভেলা (৪২) ও অধিনায়ক চান্দিমাল (৪৫)। ১০ ওভারে ৪৬ রানে ৪ উইকেট নেন রুবেল হোসেন। ২৯ রানে ২টি নেন মুস্তাফিজ। একটি করে শিকার মাশরাফি, মিরাজ, সাইফউদ্দিনের।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন নিয়েও হয়নি বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন। অফ ফর্মে থাকা এনামুল হক বিজয় ও নাসির হোসেন বাদ দিয়ে তাদের জায়গায় খেলেছেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। পরিবর্তন ছিল পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জায়গাতেও। শ্রীলংকার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে আশাব্যঞ্জক পারফর্ম করতে পারেননি আবুল হাসান রাজু। তার জায়গায় গতকাল ফিরেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
২০১৪ সালে দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচের পর এই প্রথম ওয়ানডে খেলবেন মিঠুন। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তৃতীয় ওয়ানডেতে শেষবার এই সংস্করণে খেলেছিলেন মিরাজ। ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন সাইফ।
ফাইনালে লড়াইয়ে শ্রীলংকা দলে এসেছে একটি পরিবর্তন। লক্ষণ সান্দাকানের জায়গায় একাদশে ঢুকেছেন নতুন মুখ শেহান মাদুশানাকা।
তিনটি ফাইনাল। তিনবার হৃদয় ভাঙার গল্প। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে এরকম একটি ত্রিদেশীয় সিরিজেই প্রথমবারের মতো মিরপুরে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ১৫২ রানের পুঁজি নিয়েও শ্রীলঙ্কার ৬ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবু কুমার সাঙ্গাকারার ফিফটি আর শেষ দিকে মুত্তিয়া মুরালিধরনের ঝড়ো ইনিংসে ২ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।
এরপর ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানে কাছে ২ রানে হারের বেদনা। এ হারের পর সাকিব-মুশফিকদের কান্নার দৃশ্য এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতির মণিকোঠায় দাগ কেটে যায়। ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে ভারতের কাছে হার ৮ উইকেটে। তিনটি ম্যাচেই ছিলেন মাশরাফি। শেষটায় ছিলেন অধিনায়ক। আরেকটি ফাইনালকে অধিনায়ক মনে করেন আরও একটি সুযোগ।
এই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই গত ৯ বছরে তিনটি ফাইনাল হেরেছে বাংলাদেশ। অধরা থেকে গেছে একটি ট্রফি জয়ের স্বপ্ন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই অপূর্ণতা ঘোচাতে চেয়েছিলেন মাশরাফি। আগের গুলোয় তো নিদেনপক্ষে লড়াই করে হেরেছে তবে এবারও তিক্ততায় ভরা এক ফাইনালই উপহার দিল বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।