Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জয়নাব খুনের নেপথ্যে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্র

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৪:২৪ পিএম, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮

ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানে সাত বছর বয়সী শিশু জয়নাবকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আটক মোহাম্মদ ইমরান আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির আদালত। পাকিস্তানের টিভি উপস্থাপক ড. শহিদ মাসুদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত পাঞ্জাব পুলিশকে এ আদেশ দেয়। ড. শহিদের দাবি অনুযায়ী জয়নাব হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ইমরান পাকিস্তানের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী এক গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট। ছড়িয়ে পড়া এক হোয়াটস অ্যাপ মেসেজেও দাবি করা হচ্ছে, স্থানীয় একজন পার্লামেন্ট সদস্য কাসুর পর্নো ইন্ডাস্ট্রির মূল হোতা। ড. শহিদের আশঙ্কা, পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই ইমরানকে হত্যা করা হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার আদালত ইমরানের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ৪ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কোরআন ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে পাঞ্জাবের কাসুর শহর থেকে সাত বছরের শিশু জয়নাবকে অপহরণ করা হয়। ৯ জানুয়ারি এক পুলিশ সদস্য শাহবাজ খান রোডে আবর্জনার স্তূপ থেকে জয়নাবের লাশ উদ্ধার করেন। জয়নাব কাসুরে এক বছরের মধ্যে যৌন নিপীড়নের শিকার ১২তম শিশু। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ও তার আগে যৌন নির্যাতন করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের টিভি উপস্থাপক ড. শহিদ মাসুদ তার অনুষ্ঠানে দাবি করেন, জয়নাবের সন্দেহভাজন হত্যাকারী একটি আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং তার ৩৭টি ফরেন কারেন্সি একাউন্ট রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শহিদ মাসুদের বক্তব্যটিকে আমলে নেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি মিঞা সাকিব নিসারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ পাঞ্জাব পুলিশকে এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ইমরান আসলেই শিশু নিপীড়নে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রের হয়ে কাজ করছে কিনা, শিশুদের যৌন নিপীড়নের ভিডিও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের হাতে তুলে দিচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কাসুরের শিশু জয়নাবকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শুরু থেকেই পাঞ্জাব সরকার এবং সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দুই দফায় লাহোর হাইকোর্ট এবং সবশেষ সর্বোচ্চ আদালত থেকে আসামি গ্রেফতারে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া ৩ দিনের সময়সীমা পার হওয়ার একদিন আগে ইমরানকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। তবে বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে জয়নাবের বাবা-মাসহ সেখানকার অভিভাবকদের আস্থার অভাব রয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানির সময় টিভি উপস্থাপক ড. মাসুদও বিচারপতিদের ওই বেঞ্চের সামনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘অপ্রত্যাশিতভাবে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের মাতাল আর হতাশাগ্রস্ত মানুষ ইন্টারনেটে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের চিত্র দেখে বিকৃত আনন্দ পায়।’ তাদের জন্য শিশু পর্নোগ্রাফি নির্মাণ করা হয়। ইমরানের দাবি, অভিযুক্ত ইমরান মানসিকভাবে অসুস্থ নয়, সে একটি চক্রের সদস্য। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী লোকজন সন্দেহভাজন ইমরানকে সমর্থন যুগিয়ে গেছে। আদালত মাসুদের কাছে এ অপরাধে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম জানতে চায়। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামগুলো গোপন রাখা হবে বলেও জানায় আদালত। মাসুদ আদালতের কাছে অন্য সন্দেহভাজনদের নামের একটি তালিকা হস্তান্তর করেছেন। অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে ‘চরম পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে যারা মাসুদকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তাদেরই নাম উপস্থাপন করা হয়েছে। ইমরানকে পুলিশি হেফাজতে হত্যা করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মাসুদ। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘টিভি উপস্থাপকের দাবি সত্য হলে মূল সন্দেহভাজনের নিরাপত্তাও একটি উদ্বেগের বিষয়।’ নিরাপত্তা হেফাজতে সন্দেহভাজনের নিরাপত্তা রক্ষার দায় পাঞ্জাবের আইজির। আদালত জানায়, হেফাজতে থাকা অবস্থায় সন্দেহভাজনের কোনও ধরনের ক্ষতি হলে এজন্য পাঞ্জাব পুলিশকে দায়ী করা হবে। এর আগে পাঞ্জাবের এডিশনাল এডভোকেট জেনারেল আসমা হামিদ আদালতকে জানান, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ উপস্থাপক মাসুদের বক্তব্যের সত্যতা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাজ শরিফ নিজেও। তিনি লিখেছেন, ‘জয়নাবকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছি। এ ইস্যুতে তদন্তের জন্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি এবং ফরেনসিক সায়েন্স এজেন্সির ডিজিকে সহযোগিতা করার জন্য যৌথ তদন্ত দলকে দায়িত্ব দিয়েছি।’ এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, স্কাই নিউজ, ডেইলি পাকিস্তান, শামা টেলিভিশন, ডন।



 

Show all comments
  • সেলিম উদ্দিন ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৫৩ এএম says : 0
    সারা বিশ্বব্যাপী ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিশু

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ