পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ সহ বাম ছাত্রসংগঠনের জোট প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সেক্রেটারী মোতাহার হোসেন প্রিন্স এর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলশাখার নেতাকর্মীরা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এই ব্যানারে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করে ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এসময় তারা গত মঙ্গলবারের আন্দোলনের ঘটনায় বাম নেতাকর্মীদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে লাঞ্ছিত করার সাথে জড়িতদের বহিষ্কার সহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে। তাদের ৫ দফা দাবি হলো; ভিসির উপর হামলাকারী ও ভিসির কার্যালয় অবরোধসহ ভাঙচুরকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ওপর হামলাকারী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, তানভীর আহমেদ মুঈন, বেনজীর, তুহিন কান্তি, সাদিক রেজা, তমা, সুদীপ্ত, সালমান, ইভা, তমা শাকিল, ইরা, সোহেল রিফাত, সিদ্দীকী, জামিল, মিথিলাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেফতার করতে হবে। প্রক্টর অফিস ভাঙচুরকারী এবং প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলাকারীদের বহিষ্কার করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ক্যামেরা ভাঙচুরকারী এবং ক্যামেরাম্যান ও উপাচার্য অফিসের কর্মচারীদের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশকে যারা নষ্ট করতে চায় তাদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আজ সকাল ১১টায় একটি মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে এই ঘটনার শাস্তির দাবিতে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারী মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ) সকাল ১১টায় মানববন্ধন কর্মসুচী করবো এবং সেখান থেকে আমাদের দাবির ব্যাপার আল্টিমেটাম ঘোষনা করবো।
এদিকে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করে সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোট’ এর নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন দ্বারা আন্দোলন দমনের চেষ্টা করাকে প্রচন্ড অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী বলে উল্লেখ করে। একই সাথে তারা মঙ্গলবারের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা ৪টি দাবি পেশ করে।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের দাবিগুলো হলো; মঙ্গলবারের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলাকারীদের দ্রæত গ্রেফতার ও বিচার। উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে গত ১৫ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে এবং নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের যুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা তাদের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষনা করে। এগুলো হলো; ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় রাজুভাষ্কর্যের পাদদেশে সংহতি সমাবেশ। ২৮ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ এবং ২৯ জানুয়ারি সারাদেশ সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
অপরদিকে মধুর ক্যান্টিনে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সংবাদ সম্মেলন শেষেই আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃৃন্দ। এসময় তারা বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত করার যে অভিযোগটি করা হয়েছে তা হাস্যকর। মাত্র শ’দুয়েক আন্দোলনকারীকে হাজার খানেক ছাত্রলীগকর্মী রড, লাঠি নিয়ে আক্রমন করে। কিল-ঘুসি, চর-চাপর, লাথি, ধাক্কা, টানা-হেচড়া, জামা কাপড় ছিড়ে ফেলার অসংখ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। গুরুতর অপরাধকারী সর্বদা যার বা যাদের উপর অপরাধ করা হয়েছে তাদেরকে নানা ভাবে কালপ্রিট প্রমাণের চেষ্টা করবে তার নিজের অপরাধটাকে ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। আর এই কারনেই ছাত্রলীগ এখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর মঙ্গলবারের ঘটনায় হামলার দাবি তুলেছে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে ঐদিনের ঘটনায় আহতরা নিজেদের উপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ২৯ তারিখের সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং সে ধর্মঘটে অংশ নেয়ার কথাও উল্লেখ করে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তারাও একটি বিক্ষোভ মিছিল করে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবারে আন্দোলনকারীদের দ্বারা ভিসি লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় এবং ভিসির কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনকে আহŸায়ক করে অন্য সদস্যরা হলেন; অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল-প্রভোস্ট,সূর্যসেন হল, অধ্যাপক নীলিমা আক্তার-সিন্ডিকেট সদস্য, অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী-সাবেক প্রক্টর এবং জনাব বাহলুল মজনুন চুন্নু-সিনেট সদস্য। তদন্ত কমিটিকে যত দ্রæত সম্ভব প্রতিবেদন প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাবি অধিভূক্ত সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করলে সেখানে ছাত্রলীগ আন্দোলন দমনে গিয়ে ছাত্রীদের হয়রানী করে। ১৫ তারিখ ছাত্রী হয়রানীর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রলীগ সেখানে তাদের বেধড়ক মারধর করে। মঙ্গলবারের ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীদের দ্বারা একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
চবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের মিছিলে
ছাত্রলীগের হামলা আহত ১০
চবি সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রগতিশীল ছাত্র জোটের মিছিলে হামলা করেছে চবি ছাত্রলীগের একাংশের নেতা কর্মীরা। এতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা কর্মীসহ ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে এ ঘটনা ঘটে। চবি মেডিক্যাল সেন্টারে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা কর্মীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র জোট চাকসুর সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে আসলে ছাত্রলীগের একাংশের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। এসময় ছাত্র ফন্টের আহবায়ক ফজলে রাব্বী, সমাজত্মাতিক ছাত্রফন্টের সভাপতি সৈয়দ আইরিন সুলতানা, ছাত্র ফেডারেশন এর সহ সভাপতি সায়মা আক্তার মিশু, ছাত্রফন্টের কর্মী রিজো সহ আরো কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্তি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ডি ফারুকের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত বলে জানা যায়।
ছাত্র ফেডারেশন এর সভাপতি হাসান কামরুল অভিযোগ করে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে চাকসুর সামনে থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে দিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলাম। সেই সময় ছাত্রলীগের ৪০-৫০ জন কর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমদের উপর হামলা চালায়। এতে আমদের অনেক নেতা কর্মী আহত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মুক্ত চিন্তার জায়গা সেখানে কেন আমদের উপরে হামলা করা হবে। আমরা কি যুক্তিক বিষয় নিয়ে মিছিল বের করতে পারবো না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কেন আমাদের উপর বার বার হামলা করবে। সে বিষয়ে বিচার চাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। এছাড়াও ঢাবিতে আমাদের উপর যে হামলা হয়েছে সেই বিষয়ে সরকারের কাছে বিচার চাই।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের অভিযোগ, তাদের সংগঠনের নামে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কুটুক্তিমূলক মিছিল দিয়েছিল প্রগোতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। আমরা তাদেরকে মিছিল বন্ধ করতে বলেছি। আমরা তাদের উপর কোন ধরনের হামলা চালায়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালযের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, আমরা চাইবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার রেশ ধরে আমদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনে বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। এর জন্য কোন সংগঠনকে উল্লেখ করে কোন মিছিল না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। তবে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উপর হামলার প্রতিবাদে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হামলাকারীরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংঙ্খলা নষ্ট করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।