পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা অস্থির হয়ে ওঠে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরাজ করতে থাকে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ও অবক্ষয়, অবাধ লুটপাট, সন্ত্রাস, রাহাজানি, গুম, খুন, হাইজ্যাক প্রভৃতি সমাজকে বিষিয়ে তোলে। সমাজের সর্বত্র এক বিভিষিকাময় অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোন নিশ্চয়তা ছিল না। ঘর থেকে বের হয়ে ঘরে ফেরার কোন নিশ্চয়তা না থাকায় মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত ও উদ্বিগ্নতার মধ্যে দিনযাপন করছিল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খেদোক্তি করে বলেন, ‘মানুষ পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি।’ কতটা অসহনীয় অবস্থায় পড়লে একজন রাষ্ট্রনায়ক এরূপ খেদোক্তি করতে পারেন তা সহজেই অনুমেয়। দেশের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যাতে তিনি ঐরকম বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। দেশ পরিণত হয় অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অনিয়ম বিশৃঙ্খলার মধ্যে দেশ হয়ে ওঠে বসবাসের অযোগ্য। সরকারী দল ও বিরোধীদল একে অপরের শত্রæতে পরিণত হয়। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছিল না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করার ব্রত নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে দমনের প্রতিযোগিতা শুরু করে। সার্বিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাবার আকাঙ্খায় মানুষ প্রার্থনা করতে থাকে। সংবিধানে ৪র্থ সংশোধনী এনে ’৭৪ সালে জরুরি আইন জারি করা হয় ও সকল দল বাতিল করে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হয়। বাকশালী ব্যবস্থা প্রবর্তন করে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনের বদলে একদলীয় শাসন এদেশের মানুষের বুকে জগদ্দল পাথড়ের মত চেপে বসে। সংবাদপত্রের সাথে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়। চারটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র বাদে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন। এমনিতেই নতুন রাষ্ট্র বেকার সমস্যায় জর্জরিত ছিল, তার উপর নতুন করে অসংখ্য বেকার সৃষ্টি হওয়ায় দেশ সমস্যা-সংকটে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকে। জনগণের মৌলিক অধিকার বাতিল করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বে নেয়া হয়। দেশের চরম দুঃসময়ে ও সংকটকালে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটে মর্মান্তিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন।
১৫ আগস্টের দুঃখজনক ঘটনার পর খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করেন ও সামরিক আইন জারি করেন। ৩ নভেম্বর খালেদ মোশারফ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। খন্দকার মোশতাককে পদত্যাগ করিয়ে বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন। এ সময় বাংলাদেশ এক বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর অবস্থায় নিপতিত হয়। খালেদ মোশারফ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে পারেন নি। ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলেও সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হন। দেশ চলছিল প্রকৃতির রাজ্যের মত। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অনুপস্থিতিতে মানুষ হয়ে পড়ে দিশেহারা ও স্বাধীনতা হারা। সামরিক আইন মানুষের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সামরিক বাহিনী-পুলিশ বাহিনী প্রভৃতির শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে ও প্রশাসন যন্ত্র স্থবির হয়ে পড়ে। জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। খালেদ মোশারফের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে সিপাহী-জনতা মুক্ত করে এ দেশের শাসনভার তাঁর কাঁধে অর্পণ করে। তিনি দেশের শাসন ক্ষমতার সাথে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পান। জিয়াউর রহমানের সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতা তাকে সেনাবাহিনীর মধ্যে খুবই জনপ্রিয় করে তোলে। সিপাহী-জনতা তাকে ভালোবেসে ক্ষমতার মসনদে বসান। এটি ছিল তাঁর প্রতি এদেশের মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার নিদর্শন। তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সাথে পালন করেছেন। সার্বিক অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খল অবস্থায় দেশের শাসন ভার গ্রহণ করে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি সামলে নেন। সমস্ত রকম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকে কঠোর হাতে দমন করে সর্বক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। কর্নেল শাফায়াত জামিল সে সময়ের একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তরধ ংধাবফ ঃযব হধঃরড়হ ভড়ৎস ঃড়ঃধষ ধহধৎপযু ধহফ ধ ঢ়ড়ংংরনষব ধঃঃধপশ ভৎড়স ওহফরধ ড়হ ৭ ঘড়াবসনবৎ.
জিয়া সারাজীবন জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। ব্যক্তি স্বার্থ, পারিবারিক স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের ঊর্র্ধ্বে উঠে নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসাবে দেশ মাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৮ সালে বিএনপির জন্ম। দেশ ও জাতির দুঃসময়ে তিনি জাতি গঠনের কাজে লেগে যান। তিনি বিরামহীনভাবে জাতির পুনর্গঠনের কাজ করে গেছেন। নির্লোভ, নিরহংকার ও সৎ এই দেশপ্রেমিক মানুষটি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দেশমাতৃকাকে উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রসিডেন্ট জিয়া সেনাবাহিনী থেকে আগত হয়েও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকেননি। মানুষের মৌলিক অধিকার, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। সংবাদপত্রের উপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অবারিত করেন। দেশে অসংখ্য সংবাদপত্র প্রকাশ হতে থাকে। সংবাদকর্মীরা প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগেরও পুনঃজন্ম হয়। সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক অস্থিরতা দূরীভূত হয়ে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করতে থাকে। হেনরী কিসিঞ্জারের তলাহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে দেশ রক্ষা পায়। অর্থনৈতিক অগ্রগতি শুরু হয়। উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। জিয়া দেশীয় রাজনীতি ও অর্থনীতিকে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির সাথে সংযুক্ত করে নব দিগন্তের সূচনা করেন। ফিলিস্তিনের সাথে সংহতি প্রকাশ, ইরাক-ইরান যুদ্ধে অসামান্য অবদান জিয়াকে মুসলিম বিশ্বে স্মরণীয় বরণীয় করে রেখেছে। ভাতৃঘাতি যুদ্ধে তাঁর অবদান ভুলবার নয়। মুসলমানদের মধ্যে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালান ও মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিক পাঠানোর কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আরাফাতের ময়দানে তাঁর নিমগাছ লাগানোর কথা সর্বজনবিদিত। এবার হজ্জে গিয়ে নিজ চোখে তাঁর লাগানো নিম গাছ দেখে মুগ্ধ হলাম। ধুধু মরুভূমির মধ্যে জিয়াবৃক্ষগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের ভাতৃপ্রতীম সম্পর্কের। তিনি মুসলিম বিশ্বের সাথে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সাথে আঞ্চলিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার তাগিদ অনুভব করেন। প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এ বোধ থেকে প্রেসিডেন্ট জিয়া দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ নিয়ে ‘সার্ক’ গঠনের প্রচেষ্টা চালান। ১৯৮৫ সালে ‘সার্ক’ গঠনের সময় জিয়া বেঁচে ছিলেন না সত্য, তবে মানুষ তাকেই সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা মনে করেন। বর্তমানে সার্ক খুব বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। জিয়া বেঁচে থাকলে যেকোন মূল্যে সার্ককে গতিশীল ও কার্যকর সংগঠনে পরিণত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেন একথা জোর দিয়ে বলা যায়। অতি অল্প সময়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া বিশ্ব রাজনীতিতে পাকাপোক্ত আসন লাভ করেন। ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যান। তাঁর সম্মানে দেয়া ভোজসভায় ভারতের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট নিলম সঞ্জিব রেড্ডি তাঁকে বাংলাদেশের এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দেন। সে সময় ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়। এ চুক্তির ফলে পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তার সাথে দেশীয় স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। জাতির মহান ও নিস্বার্থ প্রাণ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৮১ সালের ৩০ মে শাহাদাৎ বরণ করেন।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রচলন জিয়ার অমর কীর্তি। আমি আমার বিভিন্ন লেখায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিশ্বে শুধু ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভাষার সাথে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, লোকাচার, বিশ্বাস, ঐতিহ্য প্রভৃতির সংশ্লেষিত রূপ হলো জাতীয়তাবাদ। আরব বিশ্বের ভাষা আরবী হলেও দেশীয় জাতীয়তাবাদ চালু রয়েছে। যেমন ইরাকী, ইরানী, ইয়েমেনী, সৌদি আরবীয়, কুয়েতি প্রভৃতি জাতীয়তা স্বীকৃত ও প্রচলিত। পশ্চিম বঙ্গে অসংখ্য বাঙ্গালী রয়েছে। তাদের নৃতাত্তি¡ক পরিচিতি বাঙ্গালী হলেও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ধারণ করে আছেন। জিয়াউর রহমান বাঙ্গালীদের সাথে অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীকে যেমন- চাকমা, মারমা, গারো, মনিপুরী, খাসিয়া, সাঁওতাল, উরাঁও, মুন্ডা, পাহাড়ী, মাহালী, পাহান, রাজবংশী প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করে বাংলাদেশী পরিচিতি নিশ্চিত করেন। তাদের নিজেদের ধর্ম, বিশ্বাস, সমাজ-সংস্কৃতি প্রভৃতি বজায় রেখে বাংলাদেশীর স্বীকৃতি লাভ করায় নিজেদের পরিচিতি অক্ষুণœ থাকে। চাপিয়ে দেওয়া বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ মুক্ত হয়ে মানবেন্দ্র লারমাদের সাথে ২৯টি নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠী খুশী হন। কাউকে আহত না করে নিজেদের নৃতাত্তি¡ক পরিচিতি অক্ষুণœ রেখে রাষ্ট্রীয় পরিচয় দান জিয়ার অমর কীর্তি।
জিয়ার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা তাঁকে কালজয়ী বীরের স্বীকৃতি দিয়েছে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা, মনীষা ও দূরদর্শিতার আলোকে তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন, বিভেদে নয়, ঐক্যের মধ্যে রয়েছে মানুষের সার্বিক মঙ্গল ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। খন্ডিত জাতীয়তা দিয়ে মানুষের সার্বিক মুক্তি, অগ্রগতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় একথা উপলব্ধি করে জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সংবিধানে সংযোজন করেন। ধর্ম নিরপেক্ষতার বদলে মহান আল্লাহর নাম সংযোজন করে সংবিধান সংশোধন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হল সার্বিক জাতীয়তাবাদ। আমাদের আছে জাতিগত গৌরব, রয়েছে সমৃদ্ধশালী ভাষা এবং আছে ধর্মীয় ঐতিহ্য। ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা। আমাদের আছে নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার স্বপ্ন। আর এসব রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় অবগাহিত। ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি অনুরক্ত থাকা বাংলাদেশী জাতির এক মহান ও চিরঞ্জীব বৈশিষ্ট্য এ জাতীয়তাবাদ প্রত্যেকের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মীয় অধিকারকে নিশ্চিত করে। আজ বাংলাদেশে চলছে অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতি। সরকারি দল ও বিরোধীদলের মধ্যে নেই কোন সহযোগিতা ও সহমর্মীতা। রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে সমস্যা-সংকট ও সর্বগ্রাসী অনিয়ম, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। দুর্নীতি, দুঃশাসন, গুম, খুন, লুটপাট, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, মারামারি, কাটাকাটি প্রভৃতি কর্মকান্ড সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল কাঠামোকে ধ্বংস করতে বসেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐক্য অত্যাবশ্যক। শহীদ জিয়া সংলাপ, সমঝোতা, সহযোগিতা ও সহমর্মীতার যে রাজনীতি শুরু করেছিলেন সেই ঐক্যের রাজনীতি আজ খুবই প্রয়োজন। সরকারি দল ও বিরোধী দল উভয়ের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে দেশের রাজনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত। গণতন্ত্রহীনতার সুযোগ অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য, অর্থনৈতিক ও আত্মস্বার্থ ও গোষ্ঠী স্বার্থকেন্দ্রিক কর্মকান্ড চলছে বাধাহীনভাবে। সুবচন ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি নির্বাসনে। দেশকে অঘোষিত বাকশাল মুক্ত করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে। শহীদ জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসুরী বেগম খালেদা জিয়া নিরলসভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে বেগম জিয়া জনতার শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন আশা করা যায়। শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার মহানব্রত নিয়ে তিনি সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। একাজে তাঁকে সমর্থন ও সহযোগিতা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের নৈতিক কর্তব্য। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি উদাত্ত আহŸান জানাচ্ছি, আপনারা নিজেদের মধ্যে বিভেদ-অনৈক্য দূরীভূত করে ঐক্য ও সমঝোতার রাজনীতি চালু করুন। আপনাদের কর্মকান্ডের উপর নির্ভর করছে আগামী দিনের রাজনীতি ও অর্থনীতি। রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দারুণভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। ষোলকোটি বাংলাদেশীর জীবন ও জীবিকার প্রতি প্রচন্ড ধাক্কা লাগবে। আপনারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে এদেশের মানুষের প্রয়োজন ও প্রত্যাশার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্যে পৌঁছান। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বজায় রেখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে অগ্রসর হওয়া অনুচিত ও অনাকাঙ্খিত। রাজনৈতিক সমঝোতা অত্যাবশ্যক। অতি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। কবরের নিস্তব্ধতাকে স্থিতিশীলতা ভেবে শাসকগোষ্ঠী সমঝোতায় এগুতে চাচ্ছে না। সত্যিকার স্থিতিশীলতা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গেলে ৫ জানুয়ারির অবস্থা ফিরে আসতে বাধ্য। আর তাতে আবার রাজনৈতিক সহিংসতা, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা ফিরে আসবে। শত শত বাংলাদেশী আহত ও নিহত হবেন। রাজনীতিকদের লোভের শিকার হতে মানুষ চায় না। নিজেদের কল্যাণ চিন্তা বর্জন করে জনগণের কল্যাণ চিন্তা করে রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করুন। মানুষকে শান্তিতে থাকতে সহযোগিতা করা রাজনীতিকদের কর্তব্য। আমরা আশা করব, রাজনৈতিক অঙ্গনে যে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে রাজনীতিকরা আলাপ-আলোচনা, সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে তা দূরীভূত করবেন।
লেখক: প্রফেসর, দর্শন বিভাগ ও সাবেক ডিন, কলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।