পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শোকে স্তব্ধ সমগ্র বাংলাদেশ। শোকের ছায়া দেখা গেল গতকাল ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার। এই দিন ঢাকা মহানগরীতে সপ্তাহের শেষ দিন। অন্যান্য বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরীতে থাকে প্রচ- যানজট। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরীতে যান চলাচল ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বুধবার রাতের ক্রিকেট ম্যাচে বাংলাদেশ ভারতের কাছে মাত্র ১ রানে হেরে গেছে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। সমগ্র ম্যাচটি হাতের মুঠোয় নিয়ে শেষ ওভারের শেষ ৩টি বলে ম্যাচটি বাংলাদেশের হাত থেকে বের হয়ে যায়। সেইসাথে নেমে আসে সারাদেশে শোকের ছায়া। এই অপ্রত্যাশিত পরাজয়ে সারাদেশ শোকে পাথর হয়ে গেলেও এর মধ্যে অন্য কোনো কারণ আবিষ্কারের চেষ্টা করা উচিত নয়। কারণ ঈৎরপশবঃ রং ধ মধসব ড়ভ মষড়ৎরড়ঁং ঁহপবৎঃধরহরঃরবং. গত বুধবারে এই খেলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম তথা সমগ্র দেশবাসী হোঁচট খেয়েছে ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি একথাও সত্যি যে, এক অনন্য উচ্চতায় উঠে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। চলতি টি-টুয়েনটি টুর্নামেন্টে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। সেই ভারতকে গত বুধবারের ম্যাচে সুনিশ্চিতভাবে হারাতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। বস্তুত খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বিভাগেই দারুণ প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছিল বাংলাদেশ। বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নতি করেছে। তাই দেখা যায়, ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকেও বাংলাদেশ গত বুধবার ১৪৬ রানের মধ্যে বেঁধে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের বোলিংয়ের কাছে ভারত তার সেই শক্তিমত্তা দেখাতে পারেনি ভারতের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং লাইন। তাই দেখা যায়, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলী, যুবরাজ সিং এবং সুরেশ রায়নার মত ব্যাটিং স্টলওয়ার্ট কেউই হাফ সেঞ্চুরী করতে পারেনি। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, কোন একটি ম্যাচে একজন বা দুইজন ব্যাটসম্যান জ্বলে উঠলে ম্যাচটি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান টীমটিতে সত্যিকার অর্থে রয়েছে টীমওয়ার্ক। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ টীমের তিন বিভাগেই, অর্থাৎ বোলিং, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ে রয়েছে পূর্ণ ভারসাম্য। তাই বাংলাদেশের বর্তমান ক্রিকেট দলকে বলা যায় একটি ব্যালান্সড টীম।
গত বুধবারের খেলা সম্পর্কে বলা যায়, সারা ঘর লেপে এসে দরজায় যেন কাদা ছিটে গেল। সমগ্র খেলাটির মোড় ঘুরিয়ে দিল শেষের তিনটি বল। ১৯তম ওভার পর্যন্ত খেলার পর বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১ রান। হাতে ছিল ১ ওভার অর্থাৎ ৬টি বল। ২০তম ওভারের শুরুতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একটি রান নেন। পরের ২ বলে মুশফিকুর রহিম পরপর ২টি চার মারলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২ রান। হাতে ছিল ৩টি বল। এই ক্ষেত্রে চিকি সিংগলস্্ নিলেই বাংলাদেশ জিতে জেতো। এখানে বিগ হিটের কোনো প্রয়োজনই ছিলো না। অথচ পর পর দুটি বিগ হিট করতে গিয়ে অভিজ্ঞ, ইনফরম এবং সেট ব্যাট্্স্ম্যান মাহমুদুল্লাহ এবং মুশফিকুর রহিম কট আউট হন। তাদের বিদায়ের ফলে ব্যাট হাতে নামেন দুই অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শুভাগত হোম এবং ২০ বছর বয়সী তরুণ বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজ রান আউট হন এবং সেই সাথে সারা বাংলাদেশে নেমে আসে শোকের ছায়া
বস্তুত ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে যেয়ে প্রমাণ করে যে, তারা ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম সারিতে আসন করে নিয়েছে। ওই বিশ্বকাপের মেলবোর্ন ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত যদি চক্রান্ত না করতো তাহলে সেখানেই সেমি ফাইনালে গিয়ে বাংলাদেশ হয়তো একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারতো। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে জনগণের প্রত্যাশা হয়েছে এখন আকাশচুম্বী। তাই গত বুধবার রাত ৮টায় খেলা শুরুর অনেক আগেই ঢাকা মহানগরী প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষ টেলিভিশন সেটের সামনে বসে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রস্তুতি ছিলো, যদি এই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জয় লাভ করত তাহলে ঢাকা মহানগরী তথা সারাদেশে ওই রাতেই উৎসবের বন্যা বয়ে যেতো। কিন্তুু শেষ বলে বাংলাদেশ যখন দুঃখজনকভাবে হেরে গেলো তখন মুহূর্তের মধ্যেই ঢাকা তথা সারা দেশ নির্বাক হয়ে যায়। সাম্প্রতিকালে যখনই বাংলাদেশের সাথে ভারত, পাকিস্তান বা অন্য কোনো ক্রিকেট পরাশক্তির খেলা হয়েছে তখন বাংলাদেশের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ টীমের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। আজ বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে বহুধা বিভক্ত। সামাজিকভাবেও বিভক্তিতে ক্ষতবিক্ষত। বিভাজনের এই বিষ ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে উকিল, ডাক্তার, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, লেখক বুদ্ধিজীবী সকলের মাঝে আজ স্পষ্ট বিভক্তি। ক্রিকেটই একমাত্র ক্ষেত্র যেখানে কোনো বিভক্তি নেই। বরং এই ক্রিকেটই জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম ও ঐক্যর বীজ বপন করেছে, যা আজ প্রতিটি খেলায় দৃশ্যমান হচ্ছে। এই ক্রিকেটই সমগ্র জাতিকে এক মোহনায় নিয়ে এসেছে। সুতরাং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আসুন, আজ আমরা সকলেই সব রকম দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে ক্রিকেটকে বলিষ্ঠভাবে সমর্থন করি। আসুন, আমাদের এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফলে আগামী দিনে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ছিনিয়ে আনুক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।