Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপ্সরা

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


বা সা র তা সা উ ফ
দ্বিধান্বিত গোধূলি...
আজ ৫ ফেব্রæয়ারি, আমার জন্মদিন। নাম আমার গোধূলি।
মায়ের কাছে শুনেছি, ঠিক গোধূলির সময় আমার জন্ম হয়েছে বলে এ নামটি রাখা হয়েছে। আসলে দিনের কোন্ সময়টাকে গোধূলি বলে! শেষ হয়ে যাওয়া বিকেলের আলো আর শুরু হতে যাওয়া রাতের আঁধার আমাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। এ রকম দ্বিধান্বিত সময়ে জন্ম হয়েছে বলেই বোধহয় আমার নাম রাখা হয়েছে গোধূলি। দ্বিধাটা আসলে কিসের? দিনের রোদমাখা আলো শেষে যখন রাতের আঁধারে নিজেকে হাতরে খুঁজে ফিরিÑতখন আমি কেমন বিষণœ হয়ে যাই। আমার জন্মের আগেও কি আমার বাবা-মায়ের মনে দ্বিধা ছিল? আমার আরও তিনটি বোন থাকা সত্তে¡ও ভাইহীন চার বোনের সংসারে আমাকে গর্ভধারণ করেছে বলে মাকে প্রায় জিজ্ঞেস করি, ‘আমার জন্মের পর যখন দেখতে পেলে আরও একটি মেয়ের জন্ম হয়েছেÑতখন তোমার অনুভূতি কেমন ছিল? একজন পুত্রসন্তানের আকাক্সক্ষা কি ছিল না তোমার মনে?’
কোনো সময় মেলেনি উত্তর। মা বারবার এড়িয়ে গেছে।
সন্ধ্যা হচ্ছে এখন। ফুরিয়ে যাওয়া দিন আর সূচিত রাতের এ সময়টাকেই গোধূলি বলে বোধহয়।
শুভ জন্মদিন...
আজ আমি প্রায় সারাদিনই আমার ঘরে ছিলাম। সকালে কেক, মোমবাতি আর কিছু ফুল কিনতে দোকানে গিয়েছিলাম, সেই সময়টা বাদে। দিনের আলো কমে গেছে। ঘরেও আলো জ্বালিনি। গহীন আঁধারে ছেয়ে আছে ঘরের ভেতরটা, আর সবকিছু অগোছালো। নিবিড় ও শব্দহীন পায়ে হেঁটে ভেতরে এসে বন্ধ করে দিয়েছি ঘরের দরজা। দিনের আলো যত রাতের আঁধারে মিলিয়ে যাচ্ছেÑঘরের ভেতরে ততই অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে। টেবিলের ওপরে মোম জ্বেলে তারই পাশে রেখেছি কেকটা। গোলাপ, গাঁদাসহ আরও হরেক রকম ফুল এবং রঙ বেরঙের বেলুন ফুলিয়ে দিনভর ঘরটা সাজিয়েছি। মোমের নরম আলো আর নানা রঙের বেলুনের সমাহারে দেখছি একটা টিকটিকি, খুব চঞ্চল পায়ে দৌড়াদৌড়ি করছে দেয়ালের ওপরে। এককোণে একটা মাকড়সা, কী নিপুন এক দক্ষ কারিগরের মতো জাল বুনে চলেছে, তাও দেখছি আর ভাবছিÑআজ আমার জন্মদিন। এ উপলক্ষে পার্টি হচ্ছেÑঅথচ ফুল কিংবা উপহার হাতে কোনো অতিথি আসেনি, আসবেও না। কারণÑদিনটি কেবল আমার জন্য। তাই আমি কাউকে আমন্ত্রণ করিনি। আজ আমিই আমার অতিথি এবং আমিই আমার শুভাকাক্সক্ষী।
আমি এখন কেক কাটছি আর মোবাইলে বাজছে সদ্য রেকর্ড করা আমারই কন্ঠে, ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু গোধূলি, হ্যাপি বার্থ ডে টু...।’
রাতের আঁধার আরও গাঢ় হচ্ছে...।
রাত্রি নিঝুম...
এখন মধ্যরাত। ইলেক্ট্রিসিটি নেই, ছিল একটু আগে। এখন রাত বেশ অন্ধকার ও নিঝুম। চারপাশ নিসাড়, নিস্তব্ধ। শুধু নৈঃশব্দ্যের শব্দ শোনা যায়, দেখা যায় না। খোলা জানালার ধারে থামের মতো নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা আমগাছের আড়ালে বাঁদুড়ের চেঁচামেচি অথবা তক্ষকের ডাক শোনে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। এখন আর না ঘুমিয়ে একাকী বসে আছি। কোথাও কেউ নেই, আমি ছাড়া। হাত বাড়িয়ে রাত্রির নীরবতার রহস্য ছুঁই। হাহাকারগুলো, কাতরতাগুলো বুকে মাখি। রাত যত বাড়ে নীরবতা তত বেড়ে যায়। চারপাশের এ সুনসান নীরবতা মনে হচ্ছে প্রগল্ভ।
উপমা নয়, উদাহরণ চাই...
উপমা দিতে গিয়ে কেউ কেউ আস্ত একটা পাহাড় আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।
আমি তো অত মৌন নই! আকাশটা তুলে ধরেছে মাথার ওপরে। আমি কি এতই বিশাল! আমার মাথার ঘন কালো চুল আর মায়াবী চোখের চাহনি বানিয়েছে কবি অনেককে। তারা নয়, আমিই নাকি তাদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছি ভালোবাসার গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা। কেউ আমাকে বলেছে, গ্রিকের দেবী ভেনাস, মিশরের রানী ক্লিওপেট্রা, লিওনার্দো ভিঞ্চির মোনালিসা কিংবা বাংলার কিংবদন্তি নায়িকা সূচিত্রা সেন! কেউ বলছে, স্বর্গের অপ্সরা। কিন্তু কারো উপমাই আমাকে আকৃষ্ট করেনি। আমি তো উপমা চাই না! আমি চাই উদাহরণ হতে।
অন্তর্গত শূন্যতা...
শৈশব-কৈশোর থেকেই চেয়েছি চোখের তারায় ভরে রাখেতে মেঘ, কপোলের ভাজে রোদ্দুর আর হাতের তালুতে ফেনিল জল। এখন নিজের অন্তর্গত শূন্যতাগুলো ডুবে থাকে আশ্চর্য এক স্থৈর্য্যরে অতল দিঘির মধ্যে। যেখানে মন্থর গতিতে চলে আমার জীবননৌকো। অনুভূতির সেই তীক্ষèতা ও প্রগাঢ় উন্মত্ততা যেন ভোতা হয়ে গেছে। কৈশোরের ঝোড়ো স্বভাবটা যেন স্থিমিত Ñযেন সমতা পেরিয়ে অসমতায় এসে পড়েছি। ঝর্ণা থেকে নদী হয়েছি গতি হারিয়ে আর মেয়ে থেকে হয়েছি নারী। চেয়েছিলাম জীবনটাকে মুহূর্তের কোষে কোষে ভাগ করে ভরে তোলব একটা মধু-সিক্ত মৌচাকের মতো। কিছু মুহূর্ত দেব কবিতা পাঠের মুগ্ধতায়। কিছু মুহূর্ত কেটে যাবে নক্ষত্রের রাতে শুকতারা দেখে। প্রজাপতির পাখায় লেগে থাকা পুষ্প রেণুকে উজ্জ্বল করে দিয়ে রিনরিন করে বাজতে থাকা রোদ্দুরের রঙে মেঘের খেয়ায় মিতালি করে কেটে যাবে কিছু মুহূর্ত আর কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে দেব চারপাশের প্রত্যেকটি মানুষকে সুখে শান্তিতে বাস করতে দেখা বুকভরানো তৃপ্তিতে। কিন্তু জীবন কি ঘড়ায় তোলা জল যে, পছন্দ মতো গেলাসে গেলাসে ঢেলে নেব!
সমাপ্তিতে সূচনা...
রাতের নীরবতা ও আঁধার পেরিয়ে রৌদ্র ঝলমল কোলাহল মুখর দিন শুরু হয়েছে। একটি দিনের সমাপ্তিতে সূচনা হয়েছে আরও একটি দিনের। এভাবে দিন ফুরিয়ে অশেষ হয়ে বারবার ফিরে আসুক অজ¯্র দিন এ জীবনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন