Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বালকদের ক্ষুদ্র পুরুষাঙ্গ

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অনেক পিতা-মাতা তাদের পুত্র সন্তানের ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গ দৃষ্টিগোচর হবার কারণে শিশুবিশেষজ্ঞ ও হরমোন বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হয়ে থাকেন। তাঁরা আসলে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এ বিষয়টি নিয়ে।
এটি আসলে কোন কোন সময় একটি শরীর গাঠনিক সমস্যা; অনেক সময় হরমোন জনিত সমস্যা। কিন্তু শুরুতেই এটি আসলেই ছোট কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিৎ হয়ে যাওয়া জরুরী। হরমোন বিশেষজ্ঞগণ নির্দিষ্ট পদ্ধতিমতে অঙ্গটি মাপেন এবং বয়স ভিত্তিক একজন বালকের পুরুষাঙ্গের আকৃতির সাথে এর তুলনা করেন। যদি পুরুষাঙ্গটির আকার (যেটি সাধারণত: নির্দিষ্ট চাপে টেনে ধরে ফিতার সাহায্যে মাপা হয়) ঐ বয়সি একটি বালকের পুরুষাঙ্গের আকারের আদর্শমানের ২.৫ মান কম না হয়, তাহলে তাকে ক্ষুদ্রাকার পুরুষাঙ্গ (গরপৎড়ঢ়বহরং) বলা হয় না। এক্ষেত্রে আরো অন্য কোন সমস্যা থাকতে পারে। যেমন- দৈহিক স্থুলতার কারণে আশেপাশের চর্বিতে ডুবন্ত পুরুষাঙ্গ (ইঁৎরবফ চবহরং)- এটি প্রধান কারণ হতে পারে। এছাড়া পুরুষাঙ্গের নীচের অংশ অন্ডথলির চামড়ার সাথে সংযুক্ত থাকলেও এরকম মনে হতে পারে। খাত্নার সময় লিঙ্গটির আশেপাশের ত্বকে ঢাকা পড়ে যেতে পারে।
কারণসমূহ:
১। টেস্টেস্টেরন হরমোন উৎপাদনের ঘাটতি:
ক) অন্ডকোষের সমস্যাজনিত কারণে
খ) অ্যান্ড্রেনালগ্রন্থি, পিটুইটারিগ্রন্থি ইত্যাদির অকার্যকারীতা
২। টেস্টেস্টেরন হরমোনের কার্যকারীতার সমস্যা:
ক) গ্রোথহরমোন, আইজিএফ-১ ঘাটতি, অ্যান্ড্রোজেনের অকার্যকারীতা ইত্যাদি কারণে টেস্টেস্টেরনের কার্যকারীতায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
রোগ নিরুপন ঃ
যে সমস্ত ছেলেদের ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গের কারণে নিয়ে আশা হবে, তাদের জন্মের পর হতে অধিকাংশ রোগের তথ্যমূল্যায়ন জরুরী। এর মধ্যে নবজাতকের জন্ডিস, হাইপোগøাইসেমিয়া, ব্রিচ ডেলিভারী জন্ম পরবর্তী সময়ে শ্বাসকষ্ট, অতিধীরগতির দৈহিক বৃদ্ধি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস দেখা জরুরী। ছেলেটির ঘ্রান শক্তি ঠিক আছে কিনা, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। দৈহিক আকৃতির অস্বাভাবিকতা জিনগত ত্রæটির নমুনা বহন করে। সেক্ষেত্রে হাতের আঙ্গুলগুলো ঠিক আছে কিনা, হাতের তালু, পায়ের তালু স্বাভাবিক কিনা, শরীরের উপরের ও নীচের অংশের অনুপাত: কেমন, মুখের আকৃতি অস্বাভাবিক কিনা অথবা স্তন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা এগুলো দেখা জরুরী। ছেলেটির অন্ডথলিতে যদি অন্ডকোষ অনুপস্থিথ থাকে, তাহলে এটি উপরে পেটের কোন অংশে আটকিয়ে আছে ধরে নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে টেস্টেস্টেরণের ঘাটতিজনিত সমস্যা প্রকট হবে, আরো অন্য সমস্যাগুলোর সাথে ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গ হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা:
প্রথমেই ছেলেটির টেস্টেস্টেরণ হরমোন, এলএইচ, এফএসএইচ, ডিএইচটি ইত্যাদি হরমোনের রক্তের মাত্রা পরিমাপ করতে হবে। এর যে কোন একটি বা একাধিক হরমোনের ঘাটতি থাকার সম্ভাবনা বেশি।
এইচসিজি দিয়ে একটা উদ্দিপক পরীক্ষা করা হয়।
থায়রয়েডহরমোনের মাত্রা নিরুপন করা জরুরী।
পেটের নীচের অংশের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়।
কারো কারো ক্ষেত্রে পেটের এমআরআই করার প্রয়োজন পড়ে।
জেনেটিক টেষ্টঃ ক্যারিও টাইপিং ও কোন কোন সময় জেনেটিক এনালাইসিস করার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা:
যদি টেস্টেস্টেরণের ঘাটতি থাকে (হাইপোগোনাডিজম) , তবে বাইরে থেকে টেস্টেস্টেরণ দিয়ে চিকিৎসা করাটা অনেক সহজ পদ্ধতি। টেস্টেস্টেরণ ইনজেকশন মাংসপেশির গভীরে তিন সপ্তাহ পর পর সাধারণত দেয়া হয়। তবে সেটি চার সপ্তাহ পর পর বা কোন সময় দুই সপ্তাহ পর পর ও দেয়া হয়। এই ইনজেকশনের ফলাফল বেশ দ্রæতই পাওয়া যায়, তবে মনে রাখতে হবে যে, এটি দীর্ঘ দিন ব্যবহারের জন্য কখনোই দেওয়া হয় না; তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। যাদের অন্ডকোষটি উপরে পেটের কোন জায়গায় আটকিয়ে ছিল, এই টেস্টেস্টেরণ ইনজেকশনের ফলে তা অন্ডথলিতে নেমে আশার সম্ভাবনা থাকে। তবে সকল ক্ষেত্রে টেস্টেস্টেরণ দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যাবে এমন ভাবার সুযোগ নেই। জিনগত ত্রæটিতে সাধারণত: কিছুই করার সুযোগ থাকে না।
একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, যতজন ছেলেকে ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গের জন্যে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই দৈহিক স্থ’ুলতার কারণে আপাত:দৃষ্টিতে ক্ষুদ্রাকৃতির পুরুষাঙ্গ স্বদৃশ্য সমস্যাই আক্রান্ত। সেক্ষেত্রে ছেলেটির দৈহিক উচ্চতা ও বয়স সাপেক্ষে কাঙ্খিত দৈহিক ওজন অর্জনের দিকে পিতা-মাতাকে অধিক মনযোগ দিতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও শারীরিক শ্রমের কাঠামো সেক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হবে।

ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার
১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা।
ফোন ঃ ৮১২৪৯৯০, ৮১২৯৬৬৭, ০১৭৩১৯৫৬০৩৩

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন