শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
২০১৭ সালের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কথাসাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরোর একটি সাক্ষাৎকার প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দ্য প্যারিস রিভিউ’ পত্রিকার ১৮৪ সংখ্যায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজানাহ হানওয়েল (ঝঁংধহহধয ঐঁহহববিষষ)। এর চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল- লোকমান তাজ।
সুজানাহ হানওয়েল: শুরু থেকেই আপনার ফিকশনগুলো দারুণ সফলতা পেয়েছে। কিন্তু আপনার তরুণ বয়সের এমন কোনো লেখা কী আছে যা প্রকাশিত হয়নি?
কাজুও ইশিগুরো: বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে যখন পশ্চিম লন্ডনের হোমলেস মানুষদের সাথে কাজ করছিলাম, তখন আমি রেডিওর জন্য আধা ঘণ্টার একটি নাটক লিখে বিবিসি’তে পাঠিয়েছিলাম। সেটা বাতিল হয়েছিল, কিন্তু আমি উৎসাহ ব্যঞ্জক উত্তর পেয়েছিলাম। ব্যাপারটা বিস্বাদ, কিন্তু সেটা ছিল তরুণ বয়সের প্রথম লেখা, যা মানুষকে দেখাতে মোটেও লজ্জাবোধ করি না। এর নাম ছিল ‘পোটাটোস অ্যান্ড লাভারস’। যখন পাÐুলিপি জমা দেই তখন পোটাটোস বানান ভুল করে লিখেছিলাম। এটা ছিল ফিস-অ্যান্ড-চিপস ক্যাফেতে কাজ করা দুজন তরুণকে নিয়ে। দুজনেই অস্বাভাবিক রকমের ট্যারা এবং তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু কিছুতেই স্বীকার করে না যে তারা ট্যারা। এমনকি তারা এটা নিয়ে কথাও বলে না। গল্পের শেষে তারা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্ণনাকারীর আজব এক স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে গল্পটি শেষ হয় যেখানে সে সমুদ্রপাড়ের বাঁধ ধরে একটা পরিবারকে তার দিকে হেঁটে আসতে দেখে। পরিবারটির বাবা-মা ট্যারা, বাচ্চারা ট্যারা এবং কুকুরটিও ট্যারা। এই স্বপ্ন দেখে সে বলে, ‘ঠিক আছে, আমরা বিয়ে করছি না।’
সুজানাহ হানওয়েল: কী মনে করে আপনি সেই গল্পটি লিখেছিলেন?
কাজুও ইশিগুরো: এটা সেই সময়ের কথা যখন আমার কর্মজীবন কী হবে সেসব নিয়ে আমি ভাবছিলাম। সঙ্গীতজগতে আমি কিছু করতে পারিনি। এজেন্ট এবং রেকর্ডিংয়ের অনেকের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছিল। দুই সেকেন্ডের মাথায় তারা বলতো, ‘ভাই, তোমার দ্বারা এটা হবে না’। তাই আমি রেডিও নাটকের দিকে চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
সুজানাহ হানওয়েল: ইস্ট অ্যাংলিয়াতে থাকার বছরটাতেই কি আপনি প্রথম জাপান নিয়ে লেখেন?
কাজুও ইশিগুরো: হ্যাঁ। তখন আমি আবিষ্কার করলাম যে, বর্তমান চারপাশ থেকে দূরে গেলে আমার কল্পনাগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। যখন কোনো গল্প শুরু করার চেষ্টা করতাম: ‘ক্যামডেন শহরের টিউব স্টেশন থেকে বের হয়ে আমি ম্যাকডোনাল্ডসে ঢুকলাম, আর সেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু হ্যারিকে পেয়ে গেলাম,’ -এরপর লেখার মতো আর কিছু খুঁজে পেতাম না। অপরদিকে আমি যখন জাপান নিয়ে লিখে ফেললাম, তখন মনে হলো যেন কোনো বন্ধ তালা খুলে গেল। ক্লাসে একটা গল্প উপস্থাপন করেছিলাম যার কেন্দ্র নাগাসাকি শহর, ঠিক বোমা পরার সময়টাতে; আর এক তরুণীর চোখ দিয়ে সে ঘটনা দেখার চেষ্টা ছিল। গল্পটার জন্য আমার সহপাঠীদের কাছ থেকে ব্যাপক উৎসাহ পেয়েছিলাম। তারা সবাই বলেছিল, জাপানের বিষয়গুলো বেশ উত্তেজনাকর, এবং তুমি ভিন্ন ভিন্ন জায়গা দেখছো। তারপর ফাবের’র কাছ থেকে চিঠি পেলাম। তাতে লেখা ছিল যে, তাদের ইন্ট্রোডাকটরি সিরিজের জন্য আমার তিনটা গল্প বাছাই করেছে, আর এই সিরিজটার বেশ সুনামও ছিল। আমি এটাও জানতাম যে, টম স্টপার্ড এবং টেড হিউজেসকে মানুষ এভাবেই চিনেছিল।
সুজানাহ হানওয়েল: এটা কি সেই সময় যখন আপনি ‘এ পেল ভিউ অফ হিলস’ লেখা শুরু করেছিলেন?
কাজুও ইশিগুরো: হ্যাঁ। আর ফাবের’র রবার্ট ম্যাকক্রাম আমাকে আমার জীবনের প্রথম অগ্রিম টাকা দিয়েছিল যাতে করে আমি ওটা শেষ করতে পারি। করনিশ শহরকে কেন্দ্র করে আমি একটা গল্প লিখতে শুরু করেছিলাম। সেটা ছিল এক তরুণী ও তার অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে। সেই তরুণীটির ছিল আবার এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীত। মনে মনে আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, এই মেয়েটি দুটো দ্ব›েদ্বর মধ্যে দিয়ে যাবে। এক, বাচ্চাটির প্রতি আমি আমার সমস্ত মনোযোগ দেব; আর দুই, আমি এই মানুষটির প্রেমে পড়েছি, আর বাচ্চাটা একটা ঝামেলা। হোমলেস মানুষদের সাথে কাজ করার সময় আমি এরকম অনেক মানুষের দেখা পেয়েছি। কিন্তু ক্লাসমেটদের কাছ থেকে যখন জাপানিজ ছোট গল্পগুলোর বিষয়ে অভাবনীয় সাড়া পেলাম, তখন কর্নওয়ালকে কেন্দ্র করে লেখা গল্পটি নিয়ে আবার ভাবলাম। আর আমি বুঝতে পারলাম যে, এই গল্পটাকে যদি জাপানের প্রেক্ষাপট থেকে বলি তাহলে গল্পের সকল সংকীর্ণতাগুলো কেটে যাবে এবং ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিধ্বনিত হবে।
সুজানাহ হানওয়েল: পাঁচ বছর বয়স থেকে আপনি আর জাপানে যাননি, কিন্তু আপনার বাবা-মা কি অন্য জাপানিজদের মতোই ছিল?
কাজুও ইশিগুরো: আমার মা তাঁর সময়ের অন্যদের মতোই একজন জাপানিজ মহিলা ছিলেন। তাঁর কিছু কিছু বিশেষ ব্যাপার ছিল- আজকের দিনের মাপে যাকে প্রি-ফেমিনিস্ট বলা যায়। পুরনো দিনের জাপানিজ সিনেমা দেখার সময় অনেক মহিলাকে দেখতে পাই যারা একদম আমার মায়ের মতো কথা বলছে বা আচরণ করছে। ঐতিহ্যগতভাবে জাপানিজ মহিলারা পুরুষদের জন্য জাপানিজ ভাষার আলাদা এক ধরনের সাধু রূপ ব্যবহার করতেন যা আজকাল আর তেমন একটা দেখতে পাওয়া যায় না। আশির দশকে আমার মা যখন জাপানে বেড়াতে যেতেন, ফিরে এসে তিনি বলতেন যে, জাপানিজ তরুণীদের পুরুষদের ভাষায় কথা বলতে দেখে তিনি অবাক হয়েছেন।
সুজানাহ হানওয়েল: আপনার পরিবার ইংল্যান্ডে কেন এলো?
কাজুও ইশিগুরো: শুরুতে এটা ছোট্ট একটা ভ্রমণের মতো হওয়ার কথা ছিল। আমার বাবা ছিলেন একজন সমুদ্রবিদ। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওসেনোগ্রাফির প্রধান ঝড়-তরঙ্গের গতি প্রকৃতি বিষয়ক তাঁর আবিষ্কার বিষয়ে কাজ করার জন্য আমার বাবাকে আমন্ত্রণ জানান। আমি আসলে কখনো বিষয়টা বুঝতে পারিনি। স্নায়ু-যুদ্ধের সময় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওসেনোগ্রাফি গড়ে তোলা হয়, এবং এর গোপনীয়তা নিয়ে বাতাসে গুঞ্জনও ছিলো। আমার বাবা বন-জঙ্গলের ভিতর সেই অফিসে কাজ করতে যেতেন। মাত্র একবার আমি সেখানে গিয়েছিলাম।
সুজানাহ হানওয়েল: জাপান থেকে ইংল্যান্ডে যাওয়ার বিষয়ে আপনার অনুভ‚তি কেমন ছিল?
কাজুও ইশিগুরো: আমার মনে হয় না যে আমি এই চলে যাওয়ার কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু বুঝি। নাগাসাকির একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দাদুর সাথে আমি চমৎকার একটা খেলনা কিনতে গিয়েছিলাম -একটা মুরগির ছবি এবং সাথে বন্দুক আছে, আর আপনি মুরগিটাকে গুলি করছেন। ঠিক জায়গায় নিশানা লাগাতে পারলে একটা ডিম বের হয়ে আসবে। কিন্তু আমাকে সেই খেলনাটা কিনে দেয়া হয়নি। আর আমি সেটা নিয়েই বেশি হতাশ ছিলাম। বিওএসি জেটে চড়ে সেটা ছিল তিন দিনের ভ্রমণ। জ্বালানি নেবার জন্য প্লেনটা যখন থামছিল, একটা চেয়ারে আমি ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। আর তখন মানুষগুলো আঙুরফল নিয়ে এসে আমাকে জাগিয়ে তুলেছিল। তারপর উনিশ বছরে পা দেয়ার আগে আমার আর প্লেনে চড়া হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।