Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বন্ধ সেই কনভেনশন সেন্টার : তদন্ত শুরু

চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে পদদলন

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে পদদলিত হয়ে ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় রীমা কনভেনশন সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। পদপিষ্ট হয়ে আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। মর্মান্তিক এই ঘটনায় গতকাল (মঙ্গলবার) শোক দিবস পালন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। শোকাতুর পরিবেশে নিহতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কুলখানির মেজবানে সোমবার দুপুরে রীমা কনভেনশন সেন্টারে পদপিষ্ট হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন।
এ ঘটনায় নগরজুড়ে শোকের পাশাপাশি নানামুখী আলোচনা চলছে। জানা গেছে, পিতার কুলখানিতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিব্রত আগামী নির্বাচনে নগরীর কোতোয়ালী আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পুত্র ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান নওফেল। কনভেনশন সেন্টার কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার সমান্তরালে আয়োজক তথা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আয়োজন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এবং পুলিশ সদস্যরা তৎপর থাকলে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। ১০ জন মানুষের মৃত্যুর দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না।
দুর্ঘটনার পর রাতেই জেলা প্রশাসনের পরামর্শে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল দিনভর রীমার প্রধান গেইট বন্ধ রেখে ভেতরে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘটনার পর থেকে রীমা কনভেনশন সেন্টারের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই কনভেনশন সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আরও ১২টি কমিউনিটি সেন্টারে একই সময়ে মেজবান অনুষ্ঠিত হলেও সেগুলোতে কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেন এখানে ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, অসাবধানতাবশত এ ঘটনা ঘটেছে কি না, তা আমরা জানতে চাই। এর আগেও আমাদের বাসায় এবং বিভিন্ন স্থানে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে, কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। রীমাতে আগেও বহু মেজবান হয়েছে, তখনও কিছু হয়নি। নওফেল বলেন, অসাবধানতাবশত অপেক্ষমানদের মধ্যে থেকে কেউ রীমার গেইটের লক খুলে দিয়েছিল কি না- তা দেখতে হবে। সেটা সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে। তদন্ত হলে জানা যাবে আসলে কী ঘটেছিল। রীমা কনভেনশন সেন্টারের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মান্নান তাদের প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, সোমবার রাতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থাকলেও সেটি হয়নি, অন্যসব বুকিংও বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে মেজবানে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনার কারণ উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে পাঁচ সদসস্যের তদন্ত কমিটি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্য তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীরকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোঃ হুমায়ুন কবির, সিএমপির চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা, গণপূর্ত উপ-বিভাগের প্রকৌশলী এসএম শাহরিয়ার নেওয়াজ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে। নগরীর চকবাজার থানায় নিহত ঝন্টু দাসের ভাই অরুণ দাস মামলাটি দায়ের করেন। পদদলনে আহতদের মধ্যে ১৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে সুনীল কান্তি নাথ নামে একজনের অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন বলে গতকাল জানান আইসিইউ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, অর্পণ বিশ্বাস (২২) ও প্রিয়জিৎ বরণ বৈদ্য (৪৬) নামে বাকি দুইজনের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। আহত বাকিদের মধ্যে সাতজন চট্টগ্রাম মেডিকেলের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ও দুইজন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন বলে জানান হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শীলব্রত বড়ুয়া। এছাড়া অপর একজন নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
নিহতের মধ্যে নয়জনের দাহ সম্পন্ন হয়েছে। লাশ সৎকারের তত্ত¡াবধানে থাকা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানান, নয়জনের দাহ সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসনের অনুমতিতে তাদের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাহ করা হয়। তিনজনকে নগরীর বলুয়াদীঘি মহাশ্মশানে দাহ করা হয়। আর বাকি ছয়জনকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দাহ করা হয়েছে। বলুয়াদীঘি শ্মশানে সোমবার গভীর রাতে পদদলনে নিহত তিনজনের লাশ দাহ করার সময় মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনসহ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ