শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বড় মামা সব শুনলো খুব মন দিয়ে।
মা তাহলে বড় মামাকে বল। আমাদের এই বাড়ীটা কিনে দিতে।
মেঝ মামা চীরকালে গোয়ার গোবিন্দ।
- কাউকেই কিনে দিতে হবে না । আমার মায়ের পাওনা অংশের টাকা দিলেই হবে।
সবাই যখন বাড়ী কেনার গভীর আনন্দে মেতে আছে তখন সুরাইয়া নানীজানকে জড়িয়ে ধরে। মনে হচ্ছে নানীজানকে আর বাড়ীওয়ালার বকা খেতে হবেনা। এর ওর কাছে ধার চাইতে হবেনা। চুপি চুপি কাদঁতে হবেনা। একটা বাড়ী ওদের হলে এতো কিছুর সমাধান হয়ে যাবে।
সুরাইয়ার বাাবাকে খবর দিয়ে আনা হয়। অভাবী অসুখী বাড়ীটার প্রতি সন্ধ্যায় উঠোনে পাটি পেতে আলোচনা সভা বসে।
সবার প্রস্তাব অনুযায়ী নানী তার বড় ভাইয়ের কাছে যায়। কথাটা ওঠাতে পারে না, সঠিক জায়গায়। ফিরে আসে ব্যার্থ মনোরথে। বড় মামা মায়ের কাঁধে হাত রেখে সাহস দেয় পরদিন যাওয়ার।
একেকটা সন্ধ্যা রাতের গভীরে ডুব দিতেই নানীজানের পরিবারের শর্ত অনুযায়ী পাওয়া একটা দিনের আয়ু ক্ষয়ে যাওয়া।
সুরাইয়ার বাবা এবার শাশুড়ীকে দল ভারী করার প্রস্তাব দেয়। তার মানে নানীজানের ছোট বোনেকে দলে টানা, এতো কথা বলাটা অনেক সহজ হবে।
৯. একদিন খবর নিয়ে এলো মামারা তার একমাত্র খালাকে। নানীজান অনেক রকমের নাস্তা তৈরী করে খাওয়ালেন তার ছোট বোনকে। সহজ করে বুঝিয়েও বললেন কথাগুলো। বোন সব বুঝলো এই বাড়ীটা যে তার বড় বোনের একান্ত প্রয়োজন এটা তিনি অনেক আগেই বুঝেছেন সেটা বলতেও ছাড়লেন না। সবশেষে তার কাছে যে প্রস্তাব দেয়া হল সেটা শুনেই ঘাড় ত্যারা করে ফেললো।
Ñ বড় বুজি এইডা কি কও তুমি এখনি ভাগা ভাগি করার লিগা উইঠা পইড়া লাগছো কেন? কম সাহায্য করছে তোমারে বড় ভাই। যখন তার কাছে গিয়া হাত পাতছো তখনইতো কিছুনা কিছুতো দিসেই। খালি হাতেতো ফেরায় নাই কুনুদিন।
Ñ আমার মা কারো কাছে সাহায্য চায়না সে তার ন্যায় অধিকার চায়। সন্তান হিসাবে বাবার সম্পতিতে সঠিক হিস্যা।
মেঝ মামাও কম যায়না। এক কথায় দুকথায় তর্কটা ঝগড়ায় রূপ নেয়। “ভিক্ষা চাইনা কুত্তাডা সামালাও” করে নানীজান ছেলেকে থামান বোনকে বিদায় করেন।
সুরাইয়ার বাবা কাজ ফেলে অকাজে বসে থাকতে পারে না। তাকে কর্মের ডাকে চলে যেতে হয়।
নানীজানের দীর্ঘ দিনের ঘোরা ঘোরির সৎসামান্য ফলাফল হাতে পানে। তিনি তার বড় ভাইর কাছে প্রস্তাবটা তুলতে পেরেছেন, তিনি শুনে সুবিবেচনা করেছেন বিষয়টার প্রতি “ভেবে দেখবেন”। ভাবাভাবি দেখাদেখির দীর্ঘ পরিকল্পনারও অবসান হয়।
একদিন বাড়ীওয়ালা তার এক দোস্তকে সাথে নিয়ে আসে। সাথের দোস্তই কিনেছে এই জমি ও বাড়ী। নতুন মালিককে দখল বুঝিয়ে দিতে হবে। এবার কড়াকড়ি ভাবে নির্দিষ্ট দিন বেধেঁ দিয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যেই ওদের চলে যেতেই হবে।
১০. পুরো পরিবারের মাথায় ভারী আকাশ ঝুপ করে ভেঙ্গে পরে। কোথায় পাবে এতো সস্তায় বাড়ী ভাড়া। এই বাড়ীওয়ালা রাগারাগি করলেও কখনও ওদের বাড়ী থেকে বের করে দেয় নাই।
আনন্দ আলোচনার অবসানের দোর গোড়ায় এখন বেদনা ভরা কথামালা । সুরাইয়ার বাবাও খবর পাঠায়, স্কুলের কাছেই নতুন বাড়ী কিনেছে-এখন থেকে সুরাইয়া তার কাছেই থাকবে।
রাতে ছোট খালার তত্তাবধানে লেখাপড়া শেষ করে নানুর কাছে ক্ষুধার কথা বলতে গিয়ে দেখে নানীজান, অন্ধকার বারান্দায় ততোধিক অন্ধকার হয়ে নি:শব্দে বসে আছে। চুপি চুপি কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই বুঝতে পারে নানীজান কাঁদছে। এমনিতেই শোকে দু:খে সুনসান বাড়ীটা ভারী হয়ে আছে। তার উপর নানীজানের কান্না। ঠিক বইতে দেখা ছবির মত হিমালয় পর্বত হয়ে আছে।
নানীজান সুরাইয়াকে বুকে চেপে কাঁদতে থাকে। সুরাইয়া চলে যাবে বলেই কি নানীজান কাঁদছে না এই বাড়ীটা ছাড়তে হবে বলে কাঁদছে, রহস্যেও খোরটোপে পড়ে যায়।
রাত ডাল পালা ছড়াতেই উঠে বসে সারাদিনের ক্লান্তী সুরাইয়া। ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পরবে। তার আগে আলমারীতে তুলবে রাখবে। কয়েক বছরের ছোটা ছুটির ফসল ওর ব্যাগে রাখা টাকা গুলো।
লাইট জ্বেলে দিতেই ঘরে আলোর ¯্রােতের প্রবল ঢেউ খেলে যায়। আঁধ ভেজা চুল গুলো ছড়িয়ে আছে সুরাইয়ার পিঠময়। সারাদিন ক্লান্তির পর দীর্ঘ গোসল বেশ প্রশান্তি এনে দিয়েছে।
ওয়ারিশের টাকাগুলো দুহাত দিয়েও ধরতে পারেনা সুরাইয়া। রেখে দেয় বিছানায় উপর। ব্যাগ থেকে আলমারীর চাবির গোছা বের করে সোজা হাতেই চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। নানীজানের উত্তরাধিকারী আজ শিক্ষিত কৌশলী কিছুটা ক্ষমতাবানতো বটেই।
১১. নতমুখী অভাব ক্লিষ্ট আমেনা বেগম আয়নায় মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে। ওর কাছে তো নানীজানের কোন ছবিও নেই তাহলে কে? উনি কে?
বারবার বদলে যাচ্ছে ছবিটা সকালের মুখ গুলোর সাথে। এতো প্রশান্তি ময় মুখ কি ছিল কখনও নানীজানের।
পিজি হাসপাতালের বিছানায় সুরাইয়ার মায়ের হাত ধরে কাঁদছিল নানীজান
Ñ আমার জমিগুলো পারবিতো উদ্ধার করতে।
এই আলোর ¯্রােতের মতই রক্তের ¯্রােতও প্রবাহমান ইথারে ভেসে থাকা কথাগুলো। নিরন্তন প্রবাহিত হয়।
জানালার কাঁছে দাঁড়ায় সুরাইয়া-বাতাসে কান পেতে থাকে................. ষ শেষ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।