Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় অবৈধ চিকিৎসা বাণিজ্যের দরজায় সিলগালা

দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের জের

| প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নোংরা পরিবেশ, পরীক্ষাগারের ফ্রিজে মাছ, মাংস, খাবার-দাবার, মেয়াদোত্তীর্ণ ক্যামিকেল রাখা আছে। ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই, কিন্তু রিপোর্টের খালি প্যাডে অগ্রিম স্বাক্ষর রয়েছে টেকনিশিয়ানের। কুমিল্লায় এভাবেই চলছে চিকিৎসাসেবার নামে রোগবাণিজ্য। রোগ আর রোগী নিয়ে অবৈধ চিকিৎসা বাণিজ্যের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন কুমিল্লা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দুই সপ্তাহ ধরে চলমান অভিযানে অবৈধ ও নানা অনিয়মের কারণে সিলগালা আর বন্ধের নোটিশ লেগেছে আঠারোটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দরজার। গত ৬ নভেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় চিকিৎসা বাণিজ্যে কুমিল্লায় স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পরদিন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, কুমিল্লায় লাইসেন্সবিহীন দুই শতাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লাইসেন্সধারী অন্তত পঞ্চাশটি প্রতিষ্ঠানে চলছে চিকিৎসাসেবার নামে অরাজকতা। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, রোগ নির্ণয়ের নামে অতিরিক্ত ফি নেয়া এবং নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোসহ নানা অনিয়ম ঘিরে রোগী ও তাদের স্বজনরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এসব ঘটনা নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ কুমিল্লা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নজরে পড়ে। ব্যাস, শুরু হয় অভিযান। হার্ড লাইনে থাকার অবস্থান নিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় টিম। গত ৭ নভেম্বর চান্দিনা উপজেলা থেকে অভিযান শুরু হয়। ওইদিন চান্দিনা সরকারি হাসপাতাল রোডে পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, মুক্তি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, মাতৃ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কাছে চান্দিনা সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক বিভাগ, চান্দিনা মেডিনোভা হসপিটাল এবং একইদিনে দাউদকান্দির এ্যাপোলো প্লাস হসপিটালের নানা অনিয়মের কারণে সবধরণের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধসহ প্রতিষ্ঠানগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়। তার আগে দাউদকান্দির গৌরীপুরে লাইসেন্সবিহীন লাইফ হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক প্রসূতির গর্ভে থাকা দুই সন্তানের একটিকে সিজারিয়ান অপারেশন করে আরেক সন্তান পেটে রেখেই সিজার সমাপ্ত করার ঘটনায় ওই হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়।
এদিকে ৮ নভেম্বর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে যেসব হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নেই এসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সাতদিনের মধ্যে বন্ধ করার জন্য বলা হয়। গত বুধবার বিজ্ঞপ্তির সময়সীমা পার হয়। এরিমধ্যে মধ্যে ৯ নভেম্বর লাকসামের বিজরা বাজারে অভিযান চালিয়ে এসএম সাফি নামে একটি হাসপাতাল এবং বিজরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স না থাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়। গত বৃহষ্পতিবার থেকে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে আভিযানিক টিম বিভিন্ন উপজেলায় আবারো হানা দেয়। এ অভিযানে চৌদ্দগ্রামের পুরাতন কৃষি ভবনে লাইসেন্স ছাড়াই এক পল্লী চিকিৎসকের পরিচালনায় দীর্ঘদিন চলে আসা ফ্যামেলি হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেয়া হয়। চিকিৎসাসেবার নামে কোনরকম অরাজকতা বরদাশত করা হবে না এমন হুশিয়ারিতে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চলমান অভিযানে বাদ পড়েনি কুমিল্লা নগরীর বেশ কটি প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র আবেদন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর দায়ে নগরীর রেইসকোর্সের সিমপ্যাথি হাসপাতাল, ঝাউতলার কমপ্যাথ ডায়াগনস্টিক, সেভলাইভ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরীজ সিলগালা করে দেয়া হয়। এছাড়া ভূয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রাতিষ্ঠানিক চরম অব্যবস্থাপনার দায়ে রেইকোর্সের বি.রহমান হাসপাতাল এবং একই এলাকার মিশন হাসপাতালের প্যাথলজীর ফ্রিজে রক্ত সংরক্ষণ ও স্ক্রিনিং না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটির প্যাথলজী বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তাদের কোন ছাড় নেই। কতিপয় বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্য কুমিল্লার গোটা স্বাস্থ্যখাত ধ্বংস হতে দেয়া যায়না। আমরা অভিযানে নেমেছি। এ অভিযান চলবে। চিকিৎসাসেবার নামে কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে আমরাই উদ্বিগ্ন। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বৈধ গুলোতেও কোনরকম অনিয়ম অব্যবস্থাপনা বরদাশত করা হবেনা। গত দুই সপ্তাহে আমরা দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে অভিযান চালিয়ে ১৮টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। এরমধ্যে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো সিলগালা করা হয়েছে। লাইসেন্স না পাওয়া পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আর বৈধ কিছু প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হওয়ায় তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আবেদন করে সংশোধন ও বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করতে পারবে না।’
অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে কুমিল্লা স্বাস্থ্য বিভাগের চলমান অভিযানে স্বস্তির নি:শ্বাস ছেড়েছেন সাধারণ মানুষ। এসব মানুষ বলছেন এখানকার বৈধ-অবৈধ বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নাসিংহোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডেন্টাল ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা ও রোগনির্ণয়ে চরম অরাজকতা বিরাজ করছে। এধরণের অভিযান অব্যাহত থাকলে কুমিল্লায় সুস্থধারার চিকিৎসাসেবা ফিরে আসবে বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ