বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কের ফেরি সার্ভিসগুলো সম্পূর্ণ জোড়াতালি দিয়ে চালাতে গিয়ে জনদুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কেও দীর্ঘ দিনের পুরনো ফেরি ও তার মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জিন এখন প্রায় চলৎশক্তিহীন। ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ফেরি ঘাটে সাধারণ যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর প্রয়োজনের নিরিখের পরিবর্তে রাজনৈতিক তদবিরে ফেরি ও নতুন ইঞ্জিন বরাদ্ব করায়ও সমস্যার সমাধান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছ। দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি ফেরি পয়েন্টের প্রায় ২৫টি ফেরির অন্তত ২২টি দুই যুগেরও অধিক পুরনো।
এসব ফেরির ইঞ্জিনগুলোও চলছে সম্পূর্ণ জোড়াতালি দিয়ে, না চলার মত করেই। এমনকি কর্মক্ষম ফেরির অভাবে চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা বিভাগ সহ দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক পথের কঁচা নদীর বেকুঠিয়া ফেরি ঘাটে এখন প্রতিনিয়ত যানযট লেগেই আছে। ঐ ফেরি সেক্টর ব্যবহারকারী যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের দুর্ভোগ সব বর্ণনার বাইরে। প্রায় দেড় কিলোমিটার প্রসস্ত খরস্রোতা ঐ নদীটিতে বার মাসই কচুরিপানার ঢল অব্যাহত থাকে। ফলে দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরি ও তার ইঞ্জিনসমূহ জনগুরুত্বপূর্ণ ঐ মহাসড়কের যানবাহন পারাপার করতে গিয়ে প্রায়ই বিগড়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহেই দু’দিনের ব্যবধানে দুটি ইউটিলিটি ফেরির ৩টি ইঞ্জিন বিকল হয়েছে ঐ ঘাটে। ঐ পয়েন্টে অপর একটি ইউটিলিটি ফেরিতে কোন ইঞ্জিন নেই। অথচ বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধিক জনগুরুত্বপূর্ণ ফেরি পয়েন্ট এটি। বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীও অতি স¤প্রতি বেকুঠিয়া ফেরি পয়েন্টর জনদুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে অবিলম্বে সেখানে ভাল ও নির্ভরযোগ্য ফেরি মোতায়েনের অনুরোধ করেছেন মেকানিক্যাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে।
একই ধরনের বিড়ম্বনা অব্যাহত রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের আরো অনেক ফেরি পয়েন্টই। তবে গত দুই দশকে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীতে সেতু নির্মিত হবার পাশাপাশি ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী তেতুলিয়া নদীর লাহারহাট-ভেদুরিয়া সেক্টরের ফেরি সার্ভিস বিআইডবিøউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের দপদপিয়া, পটুয়াখালী, কলাপাড়া, হজীপুর, মহীপুর, বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়কের শিকারপুর, দোয়ারিকা, টেকের হাট, ভাংগা-মওয়া সড়ক পথের আড়িয়াল খাঁ এবং বরিশাল-ঝালকাঠী সড়কের কালীজিরা এবং বরিশাল-গৌরনদী-গোপাালগঞ্জ-খুলনা মহাসড়কের পয়সারহাটে সেতু নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলের সড়ক পরিবহন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফেরি পয়েন্টের সংখ্যাও ৩৫ থেকে ২১-এ হৃাস পেয়েছে। তবে এখনো প্রায় সব ঘাটেই পুরনো ফেরি ও তার চলৎশক্তিহীন ইঞ্জিন জনদুর্ভোগ অব্যাহত রখেছে।
ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরি ও এর ইঞ্জিনগুলোর সুষ্ঠু রক্ষনা-বেক্ষনে তহবিল সঙ্কট। উপরন্তু সড়ক অধিদপ্তরের ফেরি ও তার ইঞ্জিনসমূহ মেরামত এবং রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব ফেরি বিভাগের ওপর ন্যাস্ত থাকলেও তার পরিচালনের দায়িত্ব সড়ক বিভাগের ওপর। তবে সড়ক বিভাগও এসব ফেরি পরিচালন করছে ইজারাদারের মাধ্যমে। ফলে বেশীরভাগ ইজারাদারই নিম্নমানের লুব অয়েল ও গ্রীজ ব্যবহার করে ফেরির ইঞ্জিনগুলোর ক্ষতি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি এসব ফেরি পরিচালনের দায়িত্ব যাদের ওপর, সেসব চালকদের কোন প্রশিক্ষণ পর্যন্ত নেই। ফলে প্রায়সই ফেরিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ট্রাকের কারনেও ফেরিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এমনকি বেকুঠীয়া সহ সবগুলো পয়েন্টেই ফেরিগুলো চলছে ইজারাদারের খেয়াল খুশির ওপর। বেকুঠিয়াতে প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর ফেরি পারাপার হচ্ছে। অথচ ঐ ফেরি পার হয়ে বরিশাল-খুলনা পথের যে বাস চলছে, তা ছাড়ছে ৪৫ মিনিট অন্তর। এছাড়াও বিআরটিসি সহ ঐ ঘাট দিয়ে আরো বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানীর বাস সহ বিপুল পণ্যবাহী যানবাহনও পারাপার হচ্ছে। কিন্তু নিত্যযাত্রী সহ সব ধরনের পরিবহন চালকদের দুর্ভোগের কোন সীমা নেই বেকুঠিয়া সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবগুলো ফেরি পয়েন্টে।
এসব বিষয়ে সড়ক অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ,বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও বরিশাল মেকানিক্যাল সার্কেলের তত্ববধায়ক প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে সকলেই পুরেনা ফেরি ও ইঞ্জিনের কথা স্বীকার করে পরিস্থিতি উত্তরনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান। খুব শিঘ্রই বেকুঠিয়া ফেরি পয়েন্টে একটি ভালমানের ফেরি মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কথাও জানান তারা। ডিসেম্বরের প্রথমভাগের মধ্যেই ঐ ফেরিটি বেকুঠিয়া সেক্টরে মোতায়েনের পরে পরিস্থিতির ইতবাচক পরিবর্তনের কথাও জানিয়েছেন দায়িত্বশীল প্রকৌশলীগন। দক্ষিণাঞ্চলে অন্যান্য ফেরি ঘাটেগুলোতেও নতুন ফেরি ও ইঞ্জিন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করলেও প্রকৌশলীগন এজন্য অপতত প্রয়োজনীয় তহবিলের যোগান না থাকায় পর্যায়ক্রমে তা সম্ভব হবে বলে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।