Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গাফিলতিতে শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেল ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি সার্ভিস

প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে চটগ্রাম-লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ভোলা-লক্ষ্মীপুর সরাসরি ফেরি সার্ভিসটি শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেছে। ফলে চট্টগ্রাম-বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ছাড়াও দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরের সড়ক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। এর ফলে ভোলার তরমুজ সহ নানা কৃষি পণ্যের পরিবহনও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভোলায় উৎপাদিত লক্ষাধীক টন তরমুজ নিয়ে এ দ্বীপ জেলার হাজার-হাজার কৃষক ছাড়াও বিপুল সংখ্যক ব্যাবসায়ীরাও এখন সর্বশান্ত হবার পথে। তরমুজ বোঝাই শাতাধীক ট্রাক গত সপ্তাহধীককাল ধরে ইলিশাঘাটে ফেরীর জন্য অপেক্ষমান থাকার মধ্যেই সোমবার বিকেলে থেকে ফেরি সাার্ভিসটি বন্ধ করে দেয়ায় হাজার-হাজার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ সর্বনাশ ঘটেছে। বিপুল সংখ্যক তরমুজ দিনের পর দিন ট্রাকে আটকা থাকে পচর ধরার মধ্যেই সোমবার ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ করে দেয়ায় কোটি কোটি টাকার এ কৃষি পণ্য নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কপাল পুড়ল।
তবে বিআইডব্লিউটিসি ২৮কিলোমিটার দুরত্বের ইলিশা ঘাটের পরিবর্তে ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের ভেদুরিয়া ফেরি ঘাট পর্যন্ত বিকল্প রুটে পারিক্ষামূলকভাবে ফেরি সার্ভিস চালু করেছে । গতকাল দুপুর ২টায় লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট থেকে কয়েকটি ট্রাক নিয়ে একটি কে-টাইপ ফেরি ভোলার উদ্যেশ্যে যাত্রা করে। তবে ঐ ফেরি সার্ভিস বহাল রাখতে ২৮ কিলোমিটারের পরিবর্তে প্রায় ৬৫কিলোমিটার নৌ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এতে সময়ও লাগছে সোয়া দুই ঘণ্টার স্থলে প্রায় ৭ ঘণ্টা। ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী বিআইডব্লিউটিসি’র প্রায় নতুন কে-টাইপ ফেরি ‘কিষাণি’ ও ‘কনকচাঁপা’ গত দিন পনের যাবতই ভাটির সময়ে ভোলা ফেরি ঘাটে ভিড়তে পারছিল না। মেঘনায় ভাটির সময়ে পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় ভোলার ইলিশা প্রন্তে ঘাট ও সংযোগ সড়ক থেকে ফেরি ঘাট-পন্টুন প্রায় ৬৫ডিগ্রী নিচে থাকত। ফলে কোন পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনই ফেরি থেকে পন্টুন অতিক্রম করে সংযোগ সড়কে উঠতে পাড়ছিল না। এতে করে দুটি ফেরিকেই পূর্ণ জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। ফলে ২৪ঘন্টায় দুটি ফেরি মাত্র ৪টি ট্রিপে ৫০-৬০টি বেশী যানবাহন পারপার করতেও পারছিল না।
পাশাপাশি ভাটি মেঘনায় প্রবাহ হৃাসের সাথে ভাঙনের হুমকির কারনে ভোলা প্রান্তের ইলিশা পয়েন্টে ফেরি ঘাটটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছিল বলেও দাবী করেছে বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল। সব মিলিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল সোমবার বিকেল থেকে ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ ঘোষণা করে।
গতবছরও মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে দু দফায় ভোলার ইলিশাতে ভয়াবহ ভাঙনের কারনে ঘাট ও ফেরি সার্ভিসটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ভোলার ভেদুরিয়া থেকে প্রায় ৭০কিলোমিটার দুরে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটে বিকল্প ব্যবস্থায় ফেরি সার্ভিসটি চালু করা হলেও দেশের উপক’লীয় এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা অনেকটাই বিপন্ন ছিল। গত বছর ঐ বিপর্যয়ের সময়ে ইলিশা এলাকায় একটি বিকল্প ঘাটের স্থান নির্ধারন করা হলেও গত ৮মাসেও সংযোগ সড়ক নির্মান করে সেখানে ফেরি ঘাটটি স্থানন্তরের নুন্যতম কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি।
এদিকে ইলিশা থেকে ভেদুরিয়া পর্যন্ত বিদ্যমান একটি বিকল্প চ্যনেল খুজে পাওয়া গেলেও সেখানে নাব্যতা উন্নয়ন করতে হবে ড্রেজিং-এর মাধ্যমে। ঐ চ্যানেলটি চালু করতে পারলে প্রায় ২৫কিলোমিটার দুরত্ব হ্রাস পাবে ভেদুরিয়া থেকে ইলিশা হয়ে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট পৌছতে।
কিন্তু দেশের ৩টি প্রশাসনিক বিভাগ এবং তিনটি সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভরশীল যে সড়ক পথ ও ফেরি সার্ভিসের ওপর তা নির্বিঘœ ও টেকশই করনে গত এক দশকেও নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় যথাযথ গুরুত্ব নিয়ে সুষ্ঠু কোন কর্মসূচী বাস্তবায় করতে পারেনি। ফলে দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার সাথেও সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বারবারই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
এসব ব্যপারে গতকাল বিআইডব্লিউটিসি ও আইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহলে আলাপ করা হলে তারা জানান, সংকট উত্তরনে প্রাথমকিভাবে ইলিশার পরিবর্তে ভেদুরিয়া থেকে লক্ষ্মীপুরের বিকল্প রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ইলিশাতে বিকল্প ফেরি ঘাট স্থাপনে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন বলে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে বলে জানান কর্মকর্তাবৃন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গাফিলতিতে শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেল ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি সার্ভিস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ