Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফেরি সার্ভিসও স্বাভাবিক হবার সম্ভাবনা

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিআইডব্লিউটি এর অক্লান্ত পরিশ্রমে দীর্ঘ ৩৭ ঘন্টার পর অবশেষে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী দৌলতদিয়ার নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই ফেরি সার্ভিসও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
আরিচা সংবাদদাতা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটের লঞ্চ ও স্পীডবোট চলাচল শুরু করেছে। ফেরি সার্ভিসও স্বাভাবিক হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে মেরামতকৃত ঘাট দিয়ে পরীক্ষামূলক ৩টি রো রো ফেরি ছেড়ে যায়।  
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)এর সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. ফরিদুল ইসলাম লঞ্চ চলাচল চালুর বিষয়টিও নিশ্চিত করে জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্ক সঙ্কেত প্রত্যাহার করে নেয়ায় লঞ্চ মালিকদের এই রুটে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। বর্তমানে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় নদী শান্ত রয়েছে। ফলে লঞ্চ চলাচলে কোন সমস্যা নেই বলে তিনি জানান।  
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটা থেকে দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নদীপথ উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে এই  রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ  রাখা হয়।
এদিকে চার দিন ধরে ফেরি সার্ভিসের সৃষ্ট অচলাবস্থা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কেরামত আলী নামে একটি রো রো ফেরিতে ১৩টি ট্রাক ও অন্য যানবাহন নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌছে।
জানা গেছে, বন্যায় পদ্মায় প্রবোল স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার সবক’টি ফেরিঘাট নদী গর্ভেবিলীন হয়ে যায়। এতে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা অঞ্চলের এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, চার দিন এ অবস্থা চলতে থাকার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে দৌলতদিয়ায় ৩টি ঘাট তৈরী করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরের কে-টাইপ শাপলা-শালুক নামে ফেরি একটি ট্রাক ও হালকা গাড়ি নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে ভেড়ে। কয়েক দিন যাবৎ আটকে থাকা পন্যবাহী ট্রাক নিয়ে কেরামত আলী ফেরি দৌলতদিয়া ঘাট ছাড়ে।
গোয়ালন্দ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ভেঙে যাওয়া ঘাটগুলো। নৌরুটের রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে বৃহস্পতিবার ২ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে সীমিত আকারে ছোট যানবাহনসহ ছোট পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে ফেরি চলাচল করলেও চোখে পড়েনি ভারি যানবাহন পারাপার ও রো রো বড় ফেরি চলতে। ৫টি ছোট ফেরিতে ওই দুটি ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স। তাছারা নদী কিছুটা শান্ত হওয়াতে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টাপর এ রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু করেছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে ভেঙে যাওয়া ৩ নম্বর ঘাটটি বিকেলের মধ্যে বড় যানবাহন পারাপারের উপযোগী করা হবে।
৬ষ্ঠ দিনের মত অচলাবস্থা রয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়ার ঘাটগুলোতে ২টি ঘাট আংশিক মেরামত করা হয়েছে যা দিয়ে চলছে ছোট যানবাহন আর ৩৭ নম্বর ঘাটের মেরামত কাজ বিকেল পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ঘাট সমস্যার কারণে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাট টার্মিনাল ও রাস্তার পাশ দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ঢাকামুখি কয়েকশত পণ্যবাহি ট্রাক সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত থাকায় আবার ৩ নম্বর ফেরিঘাটি সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। তবে ১ নম্বর ঘাট বন্ধ থাকলেও ২ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে ওই সব ছোট যানবাহন। ৩ নম্বর ঘাটটি সচল করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
চালক এবং যাত্রীরা জানান পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে তারা লঞ্চে পারাপার না হয়ে ফেরিতে নদী পার হচ্ছে। আর চালকরা জানান ঘাট ঠিক না থাকায় তাদের দিনের পরদিন থাকতে হচ্ছে ঘাট এলাকায় এতে তাদের পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাবে কাচামাল নষ্ট হওয়ায় লোকশানে পরবে ব্যবসায়ীরা।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আর কাজের ধীর গতির কারণে আজকে মানুষের এই ভোগান্তি। এদের তিন ডিপার্টমেন্টের মধ্যে কারো সাথে কারো সমন্বয় নেই। সমন্বয় থাকলে আজ মানুষের এই দুর্ভোগ পোহাতে হত না।
মূল চ্যানেলের ডুবোচরে আটকা পাথরবোঝাই কার্গো
শিবচর সংবাদদাতা জানান, বিকল্প চ্যানেল অর্থাৎ পদ্মা সেতুর জন্য খননকৃত চ্যানেল (চায়না চ্যানেল) দিয়ে ফেরি চলতে না দেয়ায় ও মূল চ্যানেলের লৌহজং টার্নিংয়ের ডুবোচরে আটকে পড়া পাথরবোঝাই কার্গো উদ্ধার না হওয়ায় শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি নৌরুট দিয়ে সকল ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে উভয় ঘাটে পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ যানবাহনের লাইন পড়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৪ দিন ধরে পদ্মা নদীতে দ্রুত পানি কমে ও উজানে নদী ভাঙনের পলিতে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে তীব্র নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে মূল চ্যানেলের লৌহজং টার্নিং-এ ডুবোচর পরে সংকট প্রকট রূপ নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিআইডব্লিউটিসি ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যানবাহন নিয়ে ফেরি চালালেও অব্যাহতহারে পানি কমায় হিমশিম খাচ্ছিল। এরই মাঝে বুধবার লৌহজং টার্নিংয়ের ডুবোচরে আটকে পড়ে পাথরবোঝাই একটি কার্গো। এরপর থেকেই ফেরি পারাপার মারাত্মক বিঘিœত হচ্ছিল। এরইপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে  বিকল্প চ্যানেল অর্থাৎ পদ্মা সেতুর জন্য খননকৃত চ্যানেল (চায়না চ্যানেল) দিয়ে ফেরি চলাচল শুরু করে বিআইডব্লিউটিসি। কিন্তু এতে বাধ সাধে সেতু কর্তৃৃপক্ষ। সেতু কর্তৃপক্ষ ওই চ্যানেল দিয়ে বিকেলে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়।  মূল চ্যানেলের ডুবোচরে আটকে পড়া কার্গোটি উদ্ধার না হওয়ায় ওই চ্যানেল দিয়েও ফেরি চলাচল সম্ভব না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট হয়ে সকল ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে।   



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেরি সার্ভিসও স্বাভাবিক হবার সম্ভাবনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ