পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে অচলাবস্থা কাটেনি : হাজারো গাড়ি আটকে দীর্ঘ যানজট
জাহাঙ্গীর ভূইয়া (আরিচা)/ নজরুল ইসলাম (গোয়ালন্দ) : সম্প্রতি ফারাক্কার সবক’টি গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীতে সৃষ্ট তীব্র স্রোত ও ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটগুলোর পন্টুন স্থির রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সকালে ঘাট মেরামত করে সচল করা হলেও বিকেলে পাড় ভেঙে আবার পন্টুন সরে যাচ্ছে। এতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বিঘিœত হচ্ছে চরমভাবে। সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। ফলে উভয় ঘাটে পারের অপেক্ষায় থাকা গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। উভয় ঘাটে ছয় শতাধিক ট্রাকসহ সাড়ে আট শতাধিক গাড়ি পারের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির গরুবাহী কয়েকটি ট্রাকও রয়েছে। তবে এসব ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে বলেও কয়েকজন ট্রাক চালক জানিয়েছেন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে এমন অচলাবস্থা ঈদে যাত্রায় ভোগাবে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর মাত্র দুইদিন পর ঈদযাত্রা শুরু হবে।
আগস্টের শেষ সপ্তাহে এ অচলাবস্থার শুরু হয়। নদী ভাঙ্গনে ফেরি ঘাট নদী গর্ভে বিলীন, পারাপারে দ্বিগুণেরও বেশী সময় ব্যায়, ঘন ঘন ফেরি বিকল হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সহজ যোগাযোগের অন্যতম ফেরি রুটের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আসন্ন ঈদুল আযহায় ঘরমুখো মানুষ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়বেন বলে আশংকা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬ টায় দৌলতদিয়া ৩ নং ফেরি ঘাটসহ আশপাশের প্রায় ১৩০ ফুট এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ইতোপূর্বে ভাঙ্গনের কারণে দু’বার এ ঘাটটি স্থানান্তর করতে হয়। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ২ নং ফেরি ঘাটটি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এ ঘাটের পন্টুন এলাকা এবং এপ্রোচ রাস্তা নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। এক মাস বন্ধ থাকার পর ১ নং ঘাট গত সোমবার বেলা ২ টায় চালু করা হয়। বর্তমানে দৌলতদিয়ায় চারটি ফেরি ঘাটের মধ্যে ১ ও ৪ নং ঘাট চালু রয়েছে। এ দু’টি ঘাট দিয়ে কোন মতে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে।
এদিকে নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে ফেরিগুলো চলতে গিয়ে ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। বর্তমানে এ রুটে চলাচলরত মোট ১৮টি ফেরির মধ্যে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি রো-রো, ৩টি কে-টাইপ, ৪টি ইউটিলিটি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করছে। বিকল ফেরিগুলো হচ্ছে, রো-রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, ইউটিলিটি ফেরি মাধবীলতা ও হাসনাহেনা। এসব ফেরি পাটুরিয়া ঘাটের ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামতে রয়েছে। স্বাভাবিক ফেরি সার্ভিস ব্যাহত হওয়ায় রাতে আসা নৈশ কোচগুলো পরের দিন সকালে এবং সকালে আসা কোচগুলো সন্ধ্যায় ফেরি পারাপার হচ্ছে। এসব যাত্রীবাহী বাস ও কোচগুলোকে প্রতিদিন ৬/৭ ঘন্টা অপেক্ষা করে ফেরি পারাপার হতে হচ্ছে। অপেক্ষমাণ যানবাহনের চাপে উভয় ঘাটে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। ঘাটে আসা যানবাহন টার্মিনাল ছাড়িয়ে মহাসড়কের ৫/৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে গড়াচ্ছে। দীর্ঘ সময় যাত্রীদেরকে বাসের মধ্যেই বসে কাটাতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়াসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাশাপাশি কাছাকাছি কোন ভাল খাবার হোটেল না থাকায় খাবার সংকটে পড়ছে যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী ও শিশু যাত্রীদের বেশী অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
যশোরগামী কোচ যাত্রী আশরাফুল ইসলাম জানান, ভোর ৬টায় বাসা থেকে বের হয়ে গাবতলী টার্মিনালে এসে বাসে উঠি। বাসটি সকাল ৮ টায় ছেড়ে বেলা ১১টায় পাটুরিয়া ঘাটে এসে পৌঁছাই। দুপুর গড়িয়ে বেলা ৩টা বাজলেও ফেরির অপেক্ষায় প্রহর গুণছি। স্ত্রী ও দু’শিশু সন্তান নিয়ে যানজটে আটকা পড়ে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কখন ফেরির নাগাল পাব তা বলা মুশকিল। এরকম পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন শত শত যাত্রী।
ট্রাকচালক আব্দুস সালাম জানান, গত তিন দিন ধরে ঘাটে এসে ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছি। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অনেক কার,বাস, পার হলেও আমি টিকিট না পেয়ে ঘাটেই পড়ে রয়েছি। খরচের টাকা এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এখন এমন অবস্থায় পড়েছি বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে পারছি না। ফলে সময় মত ব্যবসায়ীদের মালামাল পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছেনা। এতে একদিকে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র ব্যাবস্থাপক আব্দুস সাত্তার জানান, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় তিন শতাধিক ট্রাক, দুই শতাধিক বাসসহ প্রায় ছয়শ’ যানবাহন ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এ রুটের ফেরি সার্ভিসের অচলাবস্থার কারণে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে চলাচলরত দূরপাল্লার বাস সার্ভিসের অনেক বাস বিকল্প বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে ঘুর পথে চলাচল করছে। অনেক কোচযাত্রী ফেরিতে পারাপার না হয়ে লঞ্চে পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছে। উভয় ঘাটে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিকল্প পথে চলাচলের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দৌলতদিয়া ঘাটে পুলিশের পক্ষ থেকে এরকম মাইকিং করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-পরিবহন ও সংরক্ষণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে ফেরি ঘাট সচল রাখতে সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুতই ফেরি ঘাটসহ নৌ-চ্যানেলের উন্নতি ঘটবে। ইতোমধ্যে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটের কাছে দু’দফা ড্রেজিং করে নৌ-চ্যানেল স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ড্রেজিং ইউনিটের পক্ষ থেকে চারটি ড্রেজার প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া উভয় প্রান্তের ঘাট এলাকার চ্যানেলে ১০ ফুটের ওপরে পানির গভীরতা রয়েছে। মঙ্গলবার নদীতে পানি বাড়েওনি কমেওনি। নদীতে পানি কমার হার অল্প। ফলে ঈদের আগে নাব্যতা সংকটের সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।
বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, নদী ভাঙ্গনের কারণে ঘাটগুলো প্রতিনিয়তই ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। দ্রুত ঘাট সংস্কারের কাজ চলছে। ঈদের আগেই সবগুলো সচল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পদ্মা-যমুনায় বর্ষাকালীন পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতে প্রবল স্রোত ও নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এতে ওই সময় থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে উল্লেখিত কারণে ফেরি স্বাভাবিক ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। আগস্টের শেষ সপ্তাহে ফেরি সার্ভিসের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলেও ফারক্কার কারণে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, প্রবল স্রোত ও ভাঙ্গনের কারণে এ রুটের ফেরি সার্ভিসের আবার অচলাবস্থা শুরু হয়। চলতি মাসের প্রথম দিকে তা প্রকট আকার ধারণ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।