Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খুনীরা অধরা : শঙ্কিত পিতার ঠিকানা বদল

চট্টগ্রামে আলোচিত সুদীপ্ত হত্যা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পুত্রের খুনীরা ধরা না পড়ায় ক্ষোভ আর আতঙ্কে ৩২বছরের ঠিকানা ছেড়ে গেলেন ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস রুবেলের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাবুল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক যত স্বপ্ন ছিল বড় ছেলে সুদীপ্তকে ঘিরে। তবে তাকে হত্যার মাধ্যমে মানুষ গড়ার এই কারিগরের সকল স্বপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে খুনীরা। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ৩৭দিন পরও খুনীচক্রের সদস্যরা ধরা পড়েনি। চিহ্নিত হয়নি খুনের নির্দেশদাতাও। পুলিশ বলছে খুনীরা পালিয়েছে।
নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গত ৬ অক্টোবর সুদীপ্তকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘুম থেকে তাকে ডেকে বাসার অদূরে রাস্তায় নিয়ে হত্যা করে বীরদর্পে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এলাকা ত্যাগ করে খুনীচক্রের সদস্যরা। বেড়ার ওপর টিনের ছাউনি দেওয়া দুই কক্ষের ঘরেই স্ত্রী আর দুই পুত্র নিয়ে বাস করতেন বাবুল। চল্লিশ বছর শিক্ষকতা শেষে এখন অবসরে আছেন তিনি। সংসারের ঘাঁনি টানতে এখনও একটি স্কুলে খন্ডকালিন শিক্ষকতা করেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে সুদীপ্ত ভাল চাকরি করবে, তার সুদিন আসবে। কিন্তু তা আর হলো না।
এই দুঃখে আর পুত্রশোকে ওই বাসা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। সুদীপ্তের জন্ম-বেড়ে উঠাও সেখানে। এখন তার নির্মমমৃত্যুর স্মৃতিও যোগ হয়েছে সেখানে। আর তাই ৩২ বছরের ঠিকানা ছেড়ে অন্যত্রই চলে যান বাবুল। সুদীপ্ত খুনের পর ওই বাসায় আর যাননি বাবুল। এরপর অন্যত্র বাসা নিয়ে স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রকে নিয়ে থাকছেন তিনি। ছোট ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। বাবুল বিশ্বাস জানান, নিরপরাধ ছেলেকে হারিয়েছি। খুনীরা ধরা পড়েনি। এখন নিজেও আতঙ্কে আছি। এ কারণে ঠিকানা বদল করেছি। প্রয়োজনেই এ শহরে থাকছি। নাহলে এ শহর ছেড়েও চলে যেতাম। তিনি বলেন, কার কাছে বিচার চাইব। উপরওয়ালার কাছেই বিচার দিয়েছি। সরকারি সিটি কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করা সুদীপ্ত একটি কমিউনিটি সেন্টারে ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি নিয়েছিল। সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে পুলিশ বলছে খুনের ঘটনায় জড়িতদের নাম-ঠিকানা জানা গেলেও খুনের রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। কার নির্দেশে, কেন তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হলো তাও এখনও অজানা। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় সিটি কলেজ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের চলমান বিরোধের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এই খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ পাপ্পু আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া মোক্তার তার দীর্ঘ জবানবন্দিতে বলেছেন সুদীপ্ত হত্যায় মূল কিলিং মিশনে ছিল তিনজন। তাদের সহযোগিতায় ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলো আরও অন্তত ১৫ জন। ১৮ জনের এই গ্রুপের মূল নেতৃত্ব দেয় আইনুল কাদের নিপু। নগরীর লালখান বাজার থেকে মোটর সাইকেল ও অটোরিকশাযোগ তারা দক্ষিণ নালাপাড়ায় যায়। হত্যাকান্ড শেষে তারা আবার লালখান বাজারে ফিরে আসে। মোক্তার হোসেন নিজেও এই মিশনে ছিল। তবে কার নির্দেশে এবং কেন সুদীপ্তকে হত্যা করা হয় তার জবানবন্দিতে তা স্পষ্ট হয়নি। এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ রুহুল আমীন ইনকিলাবকে বলেন, সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিলো তাদের প্রায় সকলের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে তাদের কাউকে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। তারা সবাই পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে আমাদের অভিযান চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ