Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আড়াইশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ

রায়পুরায় আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপের হামলা

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 রায়পুরার চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ী ও নিলক্ষা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সমঝোতা ভেঙে গেছে। বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা সাহেদ সরকারের সমর্থকরা এবং নিলক্ষা ইউনিয়নে আব্দুল হক সরকারের সমর্থকরা প্রতি পক্ষের বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে কমবেশী আড়াইশত বাড়ীঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে। গত ৭ নভেম্বর রাতে মির্জারচরে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের হামলায় প্রতিপক্ষের সাড়ে ৫শ’ বাড়ীঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর ৫ দিনের মাথায় এটি দ্বিতীয় ভয়াবহ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ২২ দিনের মাথায় সাহেদ সরকারের সমর্থকরা সিরাজুল হক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের বাড়ীঘরে হামলা চালিয়েছে। সাহেদ সরকারের সমর্থক মাইন উদ্দিন গংদের নেতৃত্বে লাঠিয়ালরা চান্দেরকান্দী, দিঘলিয়াকান্দী, বটতলীকান্দী, কান্দাপাড়া ও চরমেঘনা গ্রামে সিরাজুল হকের সমর্থকদের কমবেশী দেড়শতাধিক বাড়ীঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে ৪/৫টি সংঘর্ষ হয়েছে। হতাহত হয়েছে বহুসংখ্য মানুষ। লুটপাট ভাঙচুর হয়েছে কয়েকশত বাড়ীঘর। পুলিশের গুলিতে মারা গেছে কমবেশী ৬ ব্যক্তি। মামলা হয়েছে দুই পক্ষের ১৫/১৬টি। এই ঘটনার জের ধরে অব্যাহত উত্তেজনার মুখে রায়পুরার এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু গত ২০ অক্টোবর চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা সাহেদ সরকারের সমর্থকদেরকে ডেকে রায়পুরার ডাকবাংলোতে সমাবেশ করে দুপক্ষকে মিলিয়ে দেয়। কিন্তু সমঝোতার দিন সাহেদ সরকারের সমর্থক নিখোজ ৪ ব্যক্তি সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত না দিতে পারায় বাহ্যত:মিল হলেও ভিতরে ভিতরে বিরোধ থেকেই যায়। কিন্তু সমঝোতার পর সাহেদ সরকারের সমর্থকরা সিরাজুল হকের সমর্থকদেরকে বাড়ীঘরে ফিরে যেতে দেয়নি। এ নিয়ে বাঁশগাড়ীর ভিতরে ও বাইরে অবস্থানরত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা বিভিন্ন দেনদরবার করেও নিজ বাড়ীতে যেতে পারেনি। এ অবস্থায় তারা হামলা চালিয়ে এলাকায় উঠতে পারে সন্দেহে সাহেদ সরকারের সমর্থকরা এলাকায় নতুন করে সশস্ত্র মহড়া দিতে শুরু করে। ৩ দিন পূর্বে তারা একটি ছোটখাট হামলা চালিয়ে কয়েকটি বাড়ীঘর ভাঙচুর করে। এরপর সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে আবার অসন্তোষ দেখা দেয়। অবস্থা টের পেয়ে সাহেদ সরকারের সমর্থকরা গত শনিবার রাত ১১ টায় চরমেঘনা গ্রামের ধনু মিয়া, আবুল কালাম, আব্দুর রহমান, গোলাপ মিয়া, হুমায়ুন কবির। চান্দেরকান্দী গ্রামের জাহাঙ্গীর, আব্দুর রহমান, কাউছার, হানিফ মোল্লা, হোসেন মেম্বার, আশরাফ উদ্দিন, নুরুর রহমান, নূর আহমেদ, ফজলু মিয়া, কামাল উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, আতাউর রহমান, সফল আলী, গিয়াস উদ্দিন ও মুসলেম উদ্দিনের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে তাদের বাড়ীঘরে ব্যাপক লুটপাট চালায়। তারা বাড়ীঘর আসবাবপত্র, তৈজষপত্র ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করে বাড়ী ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সাহেদ সরকারের সমর্থকরা রাত ১১ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তান্ডব চালিয়ে বাড়ীঘর পুড়িয়ে ভষ্মীভূত করে চলে যায়। পুলিশ এই হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঠেকাতে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। রোববার বিকেলে নতুন করে নিলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাও গ্রামে হামলা হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হক সরকারের সমর্থকরা পূর্ব সমঝোতা ভঙ্গ করে বীরগাও গ্রামের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থক গোপীবাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এখানে তারা দীর্ঘ ২/৩ ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে শতাধিক বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ভষ্মীভূত করে দিয়েছে। হামলার আশংকা করে পূর্বেই রায়পুরা থানা পুলিশকে অবহিত করার পরও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। হামলাকারীরা হামলা চালিয়ে বাড়ীঘর পুড়িয়ে ভষ্মীভূত করে দিয়ে নির্বিঘেœ চলে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুটি ইউনিয়নে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মির্জারচর, চরমধুয়াসহ ৪টি ইউনিয়নে। যে কোন সময়ই বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ