শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ক্ষণজন্মা ভাগ্যবিড়ম্বিত কবি ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা জন্মেছিলেন ১৮৯৮ সালের ৫ জুন স্পেনের আন্দালুসিয়ার ফুয়েন্তে বাকারোস নামক ছোট্ট একটি শহরে। লোরকা শুধু কবি নয় ছিলেন চিত্রশিল্পী, নাট্যকার ও সঙ্গীত পরিচালক। লোরকা কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ করেননি, তারপরও তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, রাজনৈতিক ইস্যুতেই। স্পেনের এক সময়ের দাপুটে সামরিক কর্মকর্তা এবং পরবর্তীতে দক্ষিণপন্থীদের ঐক্যের প্রতীক ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকোর ফালাঞ্জিস্ট বাহিনীর-‘বুদ্ধিজীবী নিপাত যাক’ কর্মসূচীর মাত্র তিন দিনের মাথায় হত্যাকাÐের শিকার হন বিশ্বসাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা! সেদিন ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়া স্পেনের দক্ষিণপন্থী কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ লোরকা নামের একজন মহানশিল্পীর মর্যাদা বুঝেনি। দেশজুড়ে তখন ভয়ঙ্কর অস্থিরতা বিরাজ করছিল। রাষ্ট্রের এরূপ দুর্বলতাকে পুঁজি করে দক্ষিণপন্থী ও প্রগতিপন্থীদের মধ্যে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। ইতালির ফ্যাসিবাদী বেনিতো মুসোলিনির সরকার ও জার্মানের নাৎসি বাহিনীর কর্ণধার এ্যাডলফ হিটলার দক্ষিণপন্থীদের পক্ষদুষ্ট হয়ে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ করে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে এবং পরিত্রাণরহিত করে তোলে। ফলে ধীরে ধীরে স্বৈরতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হয় দেশটি। তারই জের ধরে দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও অস্থিরতা চলতে থাকে যুগের পর যুগ। এক সময় বেঁধে যায় গৃহযুদ্ধ। সেই গৃহযুদ্ধের বলি হলেন বিশ্ববিখ্যাত কবি ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা। লোরকার একমাত্র অপরাধ- তিনি শ্রমিকদের এক বামপন্থী জোটের পত্রিকায় লেখালেখি করতেন এবং এ্যাডলফ হিটলার ও পর্তুগিজ স্বৈরশাসক আন্তোনিও সালাজারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিবৃতি দিতেন। মৃত্যু নিয়ে লোরকার ভেতরে সবসময়ই বিভিন্ন ভয়ভীতি কাজ করত। তার লেখাতেও মৃত্যুর বিষয়টি বিচীত্রভাবে স্থান পেয়েছে! তিনি এটাও জানতেন দক্ষিণপন্থীরা সুযোগ পেলে যে কোন সময় তাকে হত্যা করতে পারে। এ সম্পর্কে একটি কবিতায় তিনি ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন। অবাক বিষয় হচ্ছে- লোরকার দেয়া ভবিষ্যদ্বাণীটাই শেষ পর্যন্ত অবিকল সত্যে পরিণত হলো! অবশ্য একজন কবির জন্যে মৃত্যুর কণ্ঠস্বর, প্রেমের কণ্ঠস্বর এবং শিল্পের কণ্ঠস্বর শুনার কলাকৌশল রপ্ত করাটা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। এ ব্যাপারে লোরকার চমৎকার একটি মন্তব্যও চোখে পড়ে- শিল্পী, বিশেষ করে কবি, চ‚ড়ান্ত অর্থে সব সময়েই নৈরাজ্যবাদী। তিনি কেবল তার ভেতরে জেগে ওঠা তিনটি প্রবল কণ্ঠস্বরই মন দিয়ে শোনেন : সব রকম আগাম সতর্কবার্তাসহ মৃত্যুর কণ্ঠস্বর, প্রেমের কণ্ঠস্বর আর শিল্পের কণ্ঠস্বর। আশ্চর্যের বিষয় যে, ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকার আইরিশ জীবনীকার ইয়ান গিবসনের মতো একজন প্রত্যক্ষদর্শী লোরকাহত্যার যে ভ‚মিটি চীহ্নিত করেছিলেন সেখানকার মাটি খুঁড়ে তন্নতন্ন করে খোঁজার পরও কারও কোন দেহাবশেষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি! দেশের অন্য কোনখানেও খুঁজে পাওয়া যায়নি লোরকা-দেহের বিন্দুমাত্র অংশ। মাত্র ৩৮ বছর বেঁচে থাকা কবি লোরকা হয়ে গেলেন কবিতার মতনই রহস্যমানব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।