চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পর্দা হলো সমাজ তথা পরিবারের সৌন্দর্য্য। পর্দা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বস্ততা বাড়ায়। পর্দা নারীর পুরুষ পরস্পরের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি করে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘আপনি মুমিন নারীদেরও বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহকে হেফাযত করে, তারা যেন তাদের সৌর্ন্দয্য প্রদর্শন করে না বেড়ায়, তবে তার যে অংশ খোলা থাকে, তারা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখে, তারা যেন তাদের স্বামী, তাদের পিতা, তাদের শ্বশুর, তাদের ছেলে, তাদের স্বামীর ছেলে, তাদের ভাই, তাদের ভাইয়ের ছেলে, তাদের বোনের ছেলে, তাদের মহিলা, নিজেদের অধিকারভ‚ক্ত সেবিকা দাসী, নিজেদের অধীনস্থ পুরুষ যাদের কোনো কিছু কামনা করার নেই, কিংবা এমন শিশু যারা এখনো মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্ক কিছুই জানে না- অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, যমীনের উপর তারা যেন এমনভাবে নিজেদের পা না রাখে - যে সৌন্দর্য্য তারা গোপন করে রেখেছিলো তা লোকদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়; হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমরা সবাই আল্লাহর দরবারে তওবা করো, আশা করা যায় তোমরা নাজাত পেয়ে যাবে।’ (সূরা আন নূর:৩১) । হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি হযরত রাসূল (সা) এর অনুমতি ব্যতীত কাউকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারি না। ( বুখারী-মুসলিম: ৪৪৩৭)।
বর্তমানে সমাজে পরিবার ভাংগনের শতকরা হার প্রতিদিনই বাড়ছে। বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের হার আধুনিক পরিবারগুলোতে তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি। সাম্প্রতিক সময় গুলোতে পরিবার ভাংগনের পিছনে যৌতুকের পাশাপাশি অবৈধ প্রেম, অবৈধ সম্পর্ক বা পরকীয়ার একটি জোড়ালো ভ‚মিকা রয়েছে। আজকাল নগর মহানগর কিংবা শহর উপশহর গুলোতে আধুনিকতার নামে সর্বত্র বেহায়াপনা ও বেল্লেপনার মহোৎসবের আমেজ পাওয়া যায়। আধুনিক মানুষগুলো আপন পরিবারে সুখ খোঁজার বিপরীতে পার্ক রেষ্টুরেন্ট ক্লাব পার্টি সেন্টারের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অনেককে অফিসিয়াল পার্টি কিংবা বিজনেজ ডে আয়োজন করা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। স্বামী স্ত্রী উভয় নিজ নিজ পেশার পেশাগত দিকের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকার ফলে আধুনিক পরিবার গুলোতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক মিল মহব্বত ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। কেউ কাউকে সময় দেয়া কিংবা বোঝা পড়ার মতো সামান্য সময়টুকু পায় না। তাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে সহকর্মী বন্ধু বান্ধবের সাথে। দিন শেষে ঘরে ফিরে যে যার মতো ক্লান্ত। বেপর্দার ফলশ্রæতিতে পরকীয়ার ঘটনা সমাজে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। এবং সমাজের চারদিকে বেপর্দা বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়ছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ নিশ্চয়ই যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়–ক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা নূর:১৯)।
অবাধ মেলামেশা করার সুযোগ মানুষকে ব্যভিচারী মনোভাবাপন্ন করে। যার ফলশ্রæতিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া পরকীয়া একদিকে যেমন গোনাহের কাজ। অপরদিকে পরকীয়া একটি পরিবারে দীর্ঘ স্থায়ী অশান্তির বার্তা নিয়ে আসে। পরকীয়ার কারণে অহরহ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। পর্দা না করা কিংবা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগে পরকীয়ার ঘটনা ঘটে। অবাধে মেলামেশার সুযোগে নারী পুরুষের উভয় কোনো একটি সময়ে পরস্পর পরস্পরের প্রতি দুর্বল হয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরকীয়া খুব শক্তিশালী একটি ব্যাধি। যা দ্বারা বিবাহিত নারী পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। পরকীয়ার সংক্রামক ব্যাধিতে মানুষ গর্ভজাত বা ঔরসজাত সন্তানের মায়া মমতা পর্যন্ত ভ‚লে যায়। ছোট ছোট আদরের সন্তানকে ফেলে হুট-হাট করে একদিন অজানার উদ্দেশ্যে উধাও হয়ে যায়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘ আর তোমরা তাদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকেই চাইবে। এ বিধান তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র।’ (সূরা আহযাব:৫৩)।
সুন্নাতী পোশাক পরিচ্ছেদ ও সুন্নাতী জীবন ধারনের চর্চা পরিবারের বন্ধনকে অটুট রাখে। বিজাতীয় সংস্কৃতির পোশাক পরিচ্ছেদ কিংবা অন্যজাতি গোষ্ঠির জীবনাচার চর্চা করলে সমাজে পরকীয়ার হার বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আমাদের সমাজের পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হবে। বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়তে থাকবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা (মহিলারা) নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যূগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শণ করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর।’ (সূরা আহযাব:৩৩)। হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, যখন কোনো মুসলমানের দৃষ্টি হঠাৎ বেগানা কোনো নারীর সৌন্দর্য্যরে প্রতি পড়ে যায়, অতঃপর সে তার চক্ষু বন্ধ করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন ইবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন, যার স্বাদ সে অনুভব করতে পারে। ( আহমাদ:২৭০)।
লেখক: ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক
a
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।