Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নেতিবাচক ধারায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণ

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৪ মাসে আদায় ১৩ হাজার ৫শ’ কোটি, ঘাটতি ১৬শ’ কোটি টাকা
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। চলতি অর্থ বছরে প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি এক হাজার ৬শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দেশে আমদানি-রফতানি বেড়েছে। বেড়েছে কাস্টম হাউসের জনবলও। গেল আগস্ট থেকে কাস্টম হাউস সার্বক্ষণিক চালু রাখা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও পণ্য উঠা-নামার হার বেড়েছে। এরপরও রাজস্ব আদায়ে চলছে নেতিবাচক ধারা। সংশ্লিষ্টদের মতে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার কিছু কিছু পণ্যের আমদানিও কমে গেছে।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। গত ৬ নভেম্বর পর্যন্ত চার মাস ৬দিনে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। ঘাটতির আকার দাঁড়ায় এক হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। তবে গত বছরের এসময়ের তুলনায় এবার ২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ২০.৬৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনর ড. নাহিদা ফরিদী বলেন, রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও রাজস্ব আহরণ কিন্তু বেড়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রায় ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু কিছু পণ্যের আমদানি কমেছে। আবার বিশ্ব বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। তাছাড়া আমদানি-রফতানি সব সময় এক রকম থাকে না। কখনো কমে, আবার কখনো বাড়ে। আমরা এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে করণীয় নির্ধারণ করছি। তিনি বলেন, অর্থবছরের মাত্র চার মাস শেষ হয়েছে। এত কম সময়ে রাজস্ব আদায়ের গতি প্রকৃতি নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা যাবেনা। আমাদের লোকবল বেড়েছে, সার্বক্ষণিক কার্যক্রম চলছে। আশাকরি যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে অর্থবছর শেষে আমরা তা অর্জন করতে পারব। অর্থবছরের শুরুতে আমদানি-রফতানিতে কিছুটা ধীরগতি থাকায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমদানি-রফতানি আরও গতিশীল হলে রাজস্ব আদায়েও ইতিবাচক ধারা ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ভিত্তিক সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। তাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ে দেশের সার্বিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চিত্র পাওয়া যায়। সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস চব্বিশ ঘন্টা সচল রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য কাস্টম হাউসের লোকবলও বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে রাজস্ব আদায়ে ৪৮ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকার বিশাল টার্গেট দেয়। তবে রাজস্ব আদায়ে শুরুতেই হোঁচট খায় কাস্টম হাউস।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি-রফতানি বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে রাজস্ব আদায়ও। আর এই কারণে প্রতিবছর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তবে একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুল্ক ফাঁকি রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিগত অর্থবছরে শুল্ক ফাঁকির অসংখ্য ঘটনা ধরা পড়ে। চলতি অর্থবছরেও শুল্ক ফাঁকি রোধে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি চালান ধরাও পড়েছে।
এদিকে গত দুই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলেও প্রতিবছর রাজস্ব আদায় বাড়ছে। গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭.২৮ শতাংশ। এবার প্রথম চার মাসে তা ২০.৬৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরে আগস্টে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ২২.৪৭ শতাংশ। গেল অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।
বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। তার পরের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। এক বছরে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ