মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
একজন ভারতীয় এমপি এবং কিছু ডানপন্থী গোষ্ঠী দাবি করছে, তাজমহল ছিল একটি হিন্দু মন্দির। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির বিনয় কাটিয়ার এমনকি তাজমহলের নাম বদলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। তিনি বলছেন, একজন হিন্দু শাসক তাজমহল তৈরি করেছেন। ভারতের গণমাধ্যমে তার এই দাবি ব্যাপক প্রচার পায়। অনেক ডানপন্থী গোষ্ঠী তার এই দাবি সমর্থন করে।
বিবিসির ‘রিয়েলিটি চেক’ অনুসন্ধানের রায় : এই দাবির পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। বরঞ্চ ইতিহাসবিদদের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, এমনকি ভারত সরকার পর্যন্ত মনে করেন, এই সৌধ ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের এক চমৎকার নিদর্শন।
তাজমহল কে তৈরি করেছে?
ভারতের সরকারীভাবে সংরক্ষিত ইতিহাস অনুযায়ী, মোগল সম্রাট শাহ জাহান তাজমহল তৈরি করেছিলেন তার মৃত স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে। ভারতের মোগল শাসকরা এসেছিল মধ্য এশিয়া থেকে। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকে তারা ভারত শাসন করে। মোগল শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে ইসলামী শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটে। শিল্পকলা ও স্থাপত্যের ব্যাপারে মোগলদের যে অনুরাগ, তার সবচেয়ে বড় নিদর্শন বলে গণ্য করা হয় তাজমহলকে। ভারতের প্রতœতত্ত¡ জরিপ বিভাগ তাজমহলকে বর্ণনা করেছে ‘মোগল স্থাপত্যকলার চূড়ান্ত নিদর্শন’ হিসেবে। আর তাজমহল নিয়ে ভারত সরকারের যে ওয়েবসাইট আছে, তাতে বলা হচ্ছে, ‘ইসলামী স্থাপত্যকলার সঙ্গে ভারতের স্থানীয় স্থাপত্যকলার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা সেসময়ের স্থাপত্য রীতির সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহারণ এটি’।
এতে আরও বলা হয়, মোগলরা যখন তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ করে, তখনও তারা তাদের পারস্য এবং তুর্কী-মোঙ্গল শেকড় নিয়ে গর্ব অনুভব করে। কিন্তু ততদিনে তারা একই সঙ্গে নিজেদের ভারতীয় বলেও ভাবতে শুরু করেছে।
ইতিহাসবিদ রানা সাফভি বিবিসিকে বলেন, ‘তাজমহলের ইতিহাস নতুন করে লেখার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। সেখানে যে কখনো কোন মন্দির ছিল তার কোন প্রমাণ নেই’।
‘তাজমহল তৈরি হওয়ার আগে সেখানে হিন্দু শাসক জয় সিং এর একটি ‘হাভেলি’ (প্রাসাদোপম বাড়ি) ছিল’।
‘শাহ জাহান এই হিন্দু শাসক জয় সিং-এর কাছ থেকে হাভেলিটি কিনে নেন। এ নিয়ে একটি ‘ফরমান’ জারি করা হয়েছিল। সেটা এখনো আছে। এই ফরমানে দেখা যাচ্ছে মোগলরা তাদের বিভিন্ন চুক্তি এবং ইতিহাস রক্ষায় বেশ সচেতন ছিল’।
রানা সাফভি বলেন, ডাবিøউ ই বেগলি এবং জেড এ ডেসাহাসের লেখা একটি বইতে এসব দলিল সঙ্কলন করা আছে।
‘এসব বই পড়ে আমি উপলব্ধি করি, এসব ভবন এবং সৌধের ইতিহাস কত ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই বই পড়েই আমি যুক্তি দিতে পারি যে, তাজমহল তৈরি হয়েছে রাজা জয় সিং-এর বাড়ির জমির ওপর এবং সেখানে কোন ধর্মীয় ভবন থাকার কোন উল্লেখ কোথাও নেই। আরেকজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হারবনস মুখিয়াও রানা সাফভির সঙ্গে একমত।
‘শাহ জাহান যে তার স্ত্রীর স্মরণে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন এ নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই’।
ভারতের স্কুল পাঠ্যবই এবং বিভিন্ন সরকারী সাইটেও তাজমহলকে ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মন্দির তত্ত¡ : তাহলে তাজমহল যে মন্দির ছিল সেই কাহিনী কোত্থেকে আসলো? তাজমহলের ইতিহাস নতুন করে লেখার দাবি বিনয় কাটিয়ারই যে প্রথম জানিয়েছেন তা নয়। এর আগে ডানপন্থী ইতিহাসবিদ পিএন ওক ১৯৮৯ সালে প্রকাশ করা ‘তাজমহল : দ্য ট্রু স্টোরি’ বইতে এই সৌধকে ‘তেজো মহল’ বলে দাবি করেন। বইতে তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, এটি ছিল আদতে একটি হিন্দু মন্দির এবং একজন রাজপুত শাসক এটি তৈরি করেন। মিস্টার ওক মনে করেন, সম্রাট শাহ জাহান এটি দখল করে সেটিকে পরে তাজমহল নাম দিয়েছেন।
লেখক সচ্চিনানন্দ শেভডে ইতিহাসবিদ পিএন ওকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি বিবিসির মারাঠী সার্ভিসকে বলেন, সরকারের উচিত ‘প্রকৃত সত্য’ উন্মোচনের জন্য একটি দল নিয়োগ করা।
‘তাজমহল কোন মুসলিম স্থাপত্য নয়। এটি আসলে একটি হিন্দু স্থাপত্য’, দাবি করছেন তিনি। কিন্তু সরকারের তাজমহল ওয়েসবাইটে দাবি করা হচ্ছে, এই স্থাপত্য পারস্য, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যকলার সংমিশ্রণ।
স্থাপত্য রীতি : মিস্টার কাটিয়ার এবং মিস্টার শেভডে, উভয়েই যুক্তি দেন যে, তাজমহলের স্থাপত্যে অনেক হিন্দু স্থাপত্যের ছাপ রয়েছে।
‘তাজমহলের শীর্ষে একটি অর্ধাকৃতি চাঁদ আছে। ইসলামিক স্থাপত্যে এই চাঁদটি সাধারণত বাঁকা থাকে। কিন্তু তাজমহলের চাঁদ বাঁকা নয়। এই চাঁদ আসলে হিন্দু দেবতা শিবের সঙ্গে সম্পর্কিত’।
‘এছাড়া এই সৌধ চূড়ায় একটি কলসও আছে। সেখানে আমের পাতা এবং উল্টে রাখা নারকেলও আছে। এগুলো হিন্দু প্রতীক। ইসলামী সংস্কৃতিতে ফুল, পশুর প্রতিকৃতি নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও তাজমহলে এসব ব্যবহার করা হয়েছে। মিস্টার মুখিয়া অবশ্য এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
‘স্থাপত্য রীতি সব সময় বদলায় এবং সেখানে বহু সংস্কৃতির প্রভাব পড়ে। মোগল স্থাপত্যকলাও এর ব্যতিক্রম নয়। কলস হিন্দু স্থাপত্যরীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু অনেক মোগল স্থাপত্যেও এটি দেখা যায়, তাজমহলেও। মোগলদের তৈরি আরও অনেক স্থাপত্যে কলস এবং পাতা দেখা যাবে’।
এখন কেন এই বিতর্ক : বহু যুগ ধরে ভারতের পর্যটন বিভাগ সেদেশে পর্যটক টেনে আনার জন্য তাজমহলকে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে তুলে ধরছে। শাহ জাহান এবং মমতাজ মহলের প্রেম নিয়ে অনেক কবি-লেখক রচনা করেছেন অনেক কাহিনী।
কাজেই হঠাৎ বিনয় কাটিয়ার এরকম কিছু দাবি তুলে কী অর্জন করতে চাইছেন?
ভারতে যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটছে, তখন তিনি এরকম একটা বিতকির্ত দাবি তুলেছেন। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলটির রাজনীতিকরা ‘হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ব’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। এ ধরনের বিতর্কিত দাবি একই সঙ্গে রাজনীতিকদের একটা সুযোগ করে দেয় কর্মসংস্থান বা অর্থনীতির অবস্থার মতো বাস্তব ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে। যদিও সরকার এখনো পর্যন্ত তাজমহল বিষয়ক এই দাবিকে সমর্থন করেনি, ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো এ নিয়ে সরব। এরকম একটি গোষ্ঠী এমন দাবিও তুলেছে যে, তাজমহলে হিন্দুদের পুজা করতে দিতে হবে।
(বিবিসি নিউজের ‘রিয়েলিটি চেক‘ নানা বিতর্কিত দাবি এবং ‘ফেইক নিউজ’র মধ্য থেকে প্রকৃত ঘটনা তুলে আনার চেষ্টা করে)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।