পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া জাতীয় যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি মানুষকে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেওয়া হয়েছে। রোববার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ খবরটি নিশ্চিত করেছে। সিনহুয়া নিউজ এজেন্সিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ যাচাইকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাখাইনের অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক বিভাগের পরিচালক উ অং মিন জানান, প্রদেশটির যেসব এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সেখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এ যাচাইকরণের কাজ চলছে।
১৯৮২ সালের বিতর্কিত বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। এতে মিয়ানমারে বসবাসকারীদের ঈরঃরুবহ, অংংড়পরধঃব এবং ঘধঃঁৎধষরুবফ পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পরে আগতদের অংংড়পরধঃব আর ১৯৮২ সালে নতুনভাবে দরখাস্তকারীদের ঘধঃঁৎধষরুবফ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই আইনের ৪ নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এ আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়।
২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হোয়াইট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সে সময় প্রেসিডেন্ট দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই কার্ড মার্চ থেকে আপনা আপনিই বাতিল হয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমসের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ওই কার্ড ছিল।
সে সময় নাগরিকত্ব না থাকা ব্যক্তিদের এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) করার প্রস্তাব দেয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দফতর। তবে ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন বলছে, কেবল ৩৫ হাজার ৯৪২ জন ওই আবেদন করেন। আর গোটা রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্বহীন ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ওই কার্ড দেওয়া হয় সাত হাজার ৫৪৮ জনকে।
এদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডকে সমর্থন জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে সেনা-সমর্থক ও উগ্র বৌদ্ধরা। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর কারণে যে বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনা চলছে, সেই সেনাবাহিনীকে সমর্থন জানিয়ে মিছিল করেছে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
জাগারা নামে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষু বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য আপনাকে আহŸান জানাতে চাই। যদি সেনাবাহিনী শক্তিশালী হয়, আমাদের সার্বভৌমত্বও নিরাপদ থাকবে।’
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করে নুন্ত ই নামের ৭০ বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য দাবি করেন, ‘একমাত্র সেনাবাহিনীই জাতীয় নিরাপত্তার সুরক্ষা দিতে পারে এবং অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে পারে।’
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ইন্টারসেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ-আইএসসিজি জানিয়েছে, আগস্টে সহিংসতা জোরালো হওয়ারপর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘ সেনা অভিযানকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধান ও মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হছে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সহিংসতার জন্য পাল্টা রোহিঙ্গাদের দায়ী করেছে। সূত্র : ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।