বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শেরপুরের পল্লীতে তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া শিশু (১১) ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর মামলায় একমাত্র আসামী ধর্ষক জসিম উদ্দিনকে (২৭) কে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ২৮ অক্টোবর শনিবার দুপুরে ধর্ষক জসিমকে জেলা কারাগার থেকে সদর থানায় নেওয়া হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে ধর্ষণের রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তির পরও ধর্ষিতা শিশুর মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের কোন আলামত না থাকায় ওই হাসপাতালের আরএমও ডা. নাহিদ কামাল কেয়ার বিরুদ্ধে উঠা অনিয়মের অভিযোগই শেষ পর্যন্ত গতি পেয়েছে। এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে ধর্ষিতার পরিবার, এলাকাবাসীসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সেইসাথে তদন্ত কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিচ্ছে ধর্ষিতার পরিধেয় কাপড়চোপড়ে লেগে থাকা আলামতসহ ধর্ষকের ডিএনএ টেস্টে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই শুভ্র সাহা জানান, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামী জসিমকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ধর্ষিতা শিশুর মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি বলে মতামত পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ওই শিশুকে ধর্ষণ সংক্রান্তে প্রত্যক্ষদর্শীসহ যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। তাই ঘটনার পরপরই জব্দ করা ধর্ষিতার পরিধেয় কাপড়-চোপড়, পায়জামা ও সালোয়ার কামিজে লেগে থাকা আলামতসহ আসামী জসিমের ডিএনএ টেস্টের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
ধর্ষণের রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরও মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে ধর্ষিতা শিশুর বাবা ও মামলার বাদী হতদরিদ্র সাইকেল মিস্ত্রি বলেন, শিশু মেয়েকে ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত ও গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির সময় প্রাথমিক পরীক্ষায় কর্তব্যরত চিকিৎসকও জানিয়েছিলেন জোরপূর্বক ধর্ষণের কারণে তার যৌনাঙ্গ ছিঁড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টে তার কোন প্রতিফলন না ঘটায় আরএমও ডা. কেয়ার ভূমিকা নিয়ে আমাদের অভিযোগই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। কারণ ভর্তির পরদিনই শিশু মেয়েকে রোগ বা চিকিৎসার কোন ধরন না লিখেই ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই বিষয়ে জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী, জেলা হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সভাপতি এসএম শহীদুল ইসলাম ও জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ধর্ষিতা শিশুর মেডিকেল রিপোর্ট নেগেটিভ করার ঘটনায় জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি দাবি করেছেন। আর বিষয়টির আদ্যোপান্ত উল্লেখ্য করে ওই মামলায় সংবাদদাতা বাদীপক্ষে নিযুক্ত সিনিয়র আইনজীবী প্রদীপ দে কৃষ্ণ জানান, মানুষ কি পর্যায়ে গেলে একজন শিশু ধর্ষণের রক্তাক্ত ক্ষতের পরও তার মেডিকেল রিপোর্ট নেগেটিভ দিতে পারে তা বলার অবকাশ রাখে না। তবে ধর্ষিতা শিশুর হতদরিদ্র পরিবারের হতাশা কেটে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য পুনরায় মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় জেলা সদর হাসপাতাল ব্যতীত ময়মনসিংহ বা অন্য কোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষিতা শিশুর পরীক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সেইসাথে তদন্ত কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিএনএ টেস্টের।
উল্লেখ্য, ৬ অক্টোবর বিকেলে সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের দশকাহনীয়া গ্রামের হাতু মিয়ার ছেলে ২ সন্তানের জনক জসিম উদ্দিন (২৭) স্থানীয় হতদরিদ্র তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে (১১) জোরপূর্বক একটি ধান ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় ওই শিশুকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় ধর্ষিতা শিশুর বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় জসিম উদ্দিনকে একমাত্র আসামী করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় ভর্তির পরদিনই ধর্ষিতা শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়ায় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে আরএমও ডা. নাহিদ কামাল কেয়ার বিরুদ্ধে তার ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানে ষড়যন্ত্র ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সুরুজসহ পরিবারের লোকজন। এরপরও সেই ষড়যন্ত্র থেমে না থাকায় তার প্রতিবাদে শহরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনসহ জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।