Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে হাজার হাজার আফগান শিয়াকে নিয়োগ করছে ইরান

এএফপি : | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইরান দুঃসহ দারিদ্র ও বেকারত্বের শিকার হাজার হাজার আফগান শিয়াকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ করছে। সাবেক যোদ্ধা ও মানবাধিকার কর্মীরা এ কথা জানিয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআর ডবব্লিউ) জানায়, অর্থ ও ইরানে বৈধভাবে বসবাসের অধিকার প্রদানের আশ^াস দিয়ে আফগান শিয়া তরুণ ও কিশোরদের সৈন্য হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। তারপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য লড়াই করার জন্য তাদের সিরিয়ায় পাঠানো হচ্ছে।
২০১৩ সাল থেকে আফগান শিয়াদের নিয়ে ইরান ফাতেমিয়ুন ডিভিশন নামে এই বাহিনী গঠন করে বলে এইচআরডবব্লিউ ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈন্যরা জানান। শামস নামে এক সাবেক যোদ্ধা বলেন, টাকার জন্য আমি এ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম। কারণ আমি বেকার ছিলাম, আর পরিবারের জন্য অর্থ আয়ের অন্য কোনো পথ ছিল না।
দেশে ফিরে এসে বর্তমানে কাবুলে বসবাসরত ২৫ বছর বয়স্ক আফগান হাজারা শিয়া শামস দু’বার সিরিয়ার যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি বলেন, আমি যাদের দেখেছি তারা সবাই টাকার জন্য সৈন্যদলে যোগ দিয়েছে। ধর্মীয় প্রেরণা থেকে কেউ এ যুদ্ধে যোগ দেয়নি।
২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো যোদ্ধা বাহিনী প্রত্যাহার করা হলে আফগান অর্থনীতি আরো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বহু লোক কাজ হারায়। আফগানরা উন্নত জীবনের আশায় হাজারে হাজারে ইরানে পাড়ি জমায়। এইচআর ডবব্লিউ গত বছর ইরানে উদ্বাস্তু আফগানদের সংখ্যা ৩০ লাখ বলে জানিয়েছিল।
আফগান উদ্বাস্তুদের এ ভিড় ইরানিদের ফাতেমিয়ুন ডিভিশন গঠনের পথ প্রশস্ত করে। এইচআরডবব্লিউ জানায়, এ ভিভিশনের সৈন্যরা সিরিয়ায় সরকারী বাহিনীর সাথে মিলে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
শামস বলেন, বেকার ছিলাম বলে আমি একটি কাজ খুঁজছিলাম, কিন্তু সিরিয়ার যুদ্ধে আমি যেতে চাইনি। কয়েকমাস পরও কোনো কাজ না পাওয়ায় শেষে য্ুেদ্ধ যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের তখন মুক্তিযোদ্ধা বলে উৎসাহ দেয়া হয় এবং বলা হয় যে যুদ্ধ থেকে বেঁচে ইরানে ফিরলে ১০ বছরের জন্য ইরানে থাকা ও কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে।
কোনো আফগান শিয়া ফাতেমিয়ুন ডিভিশনে সৈন্য হিসেবে নাম লেখালে তাকে ১৫ লাখ রিয়াল (৪৫০ ডলার) দেয়া হয়। তারপর বেতন হিসেবে প্রতিমাসে দেয়া হয় ৩০ লাখ রিয়াল (৬৭৫ ডলার)। বহু আফগানের জন্যই এটা অনেক অর্থ।
শামস সিরিয়ায় তার এক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আলেপ্পোতে আমরা হঠাৎ হামলার মুখে পড়ি। আমাদের ১শ’ জন যোদ্ধার মধ্যে আমরা ১৫ জন মাত্র বেঁচে আসতে পারি। নিহতদের লাশ ইরানে নিহতদের পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের আলি আলফোনেহ বলেন, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৭৬০ জনেরও বেশি আফগান সিরিয়ার যুদ্ধে নিহত হয়েছে।
২০১৪ সালে ১৭ বছর বয়সে ফাতেমিয়ুন ডিভিশনে যোগ দেয়া এক আফগান শিয়া জানান, শুধু আফগানিরাই নয়, পাকিস্তানি ও ইরাকি শিয়ারাও এ বাহিনীতে আছে। এমনকি আরব দেশগুলোর শিয়ারাও আছে এ বাহিনীতে।
এইচআর ডবব্লিউ জানায়, ইরান প্রকৃত সংখ্যা না জানালেও ফাতেমিয়ুন ডিভিশনে প্রায় ১৫ হাজার আফগান সৈন্য আছে।
আফগানিস্তানের হাজারা সম্প্রদায়ের এক পার্লামেন্ট সদস্য রমজান বাশারদোস্ত কাবুলে বলেন, ইরান সরকার এ সব আফগানকে ক্রীতদাসের মত ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, আফগান সরকার তাদের দুঃখ, বেদনা, অভাবের দিকে দৃষ্টি দেয় না।
এইচআরডডবব্লিউ কিশোরদের সৈন্যদলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইরানের নিন্দা করার পর আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তরুণ আফগানদের সিরিয়ার যুদ্ধে না পাঠানোর জন্য ইরানের প্রতি আহবান জানিয়ছে।
কিন্তু আফগানদের সৈন্যদলে যোগদান থেকে বিরত রাখা সহজ নয়। অর্থ ও ইরানে বাস করার নিশ্চয়তা লাভের সম্ভাবনা উপেক্ষা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
শামস বলেন, তিনি আর ইরানে ফিরে যেতে চান না। এখানে যদি কারো কাজের সুযোগ থাকে তাকে আমি কখনোই ইরানে যেতে বলব না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ