Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে মুসলিম ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা দোষীদের আড়াল করার অভিযোগ

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতের রাজস্থানে এক মুসলিম দুধ ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় এবার পুলিশের বিরুদ্ধেই তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন গতকাল এক নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে যে, পহেলু খান নামের ওই ব্যক্তিকে যারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল, তাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে পহেলু খান শেষ জবানবন্দিতে কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সমর্থকের নাম উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন যে, কারা তাকে পিটিয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজস্থানের পুলিশ ওই গণপিটুনির ঘটনা সম্পূর্ণ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলির পক্ষে। রাজ্য পুলিশ অবশ্য তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে ওই সংগঠনগুলি তাদের এক নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই অভিযোগ করে। বলা হচ্ছে, পহেলু খান নিজেই যেখানে মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গিয়েছিলেন, সেখানে তাদের আড়াল করে সম্পূর্ণ অন্যদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।
নাগরিক সমাজের ওই তদন্ত রিপোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে আর কী কী অভিযোগ উঠেছে মসে বিষয়ে শেতলওয়াড় বলছিলেন, ‘তদন্তের একেবারে গোড়া থেকেই যে পুলিশ গা-ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছে, সেটা আমাদের নিজস্ব তদন্তে উঠে এসেছে। পহেলু খানকে যখন মারা হচ্ছে, সেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্তে¡ও ঘটনার প্রায় ন’ঘন্টা পরে এফ আই আর লেখা হল। অথচ এফআইআর লেখার আগে পুলিশ নিজেই হাসপাতালে জনাব খানের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে’।
‘এছাড়াও আমাদের তদন্তে দেখা গেছে যে, সরকারি হাসপাতালের ময়না তদন্তের রিপোর্ট নাকচ করানোর জন্য অদ্ভূতভাবে একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে - যে হাসপাতালটির মালিক আবার একজন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী’!
এ বছরের এপ্রিল মাসে গরু কিনে নিয়ে যাওয়ার সময়ে একদল ব্যক্তি পহেলু খানকে গণপিটুনি দেয় রাজস্থানের আলোয়ার জেলায়। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার দু’দিন পরে তার মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছিল যে, কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরাই ওই গণপিটুনির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নাগরিক সমাজের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত আরেক মানবাধিকার কর্মী অজিত শাহী বলেন, মৃত্যুকালীন জবানবন্দি যে কোনও তদন্তে অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি। কিন্তু সেটাকেও অস্বীকার করে পুলিশ এখন সম্পূর্ণ অন্য ছয়জনকে অভিযুক্ত হিসাবে খাড়া করাচ্ছে।
মি. শাহী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘পুলিশ তো চার্জশিটে প্রথমে ওই ছয়জন - যাদের নাম পহেলু খান জানিয়ে গিয়েছিলেন - তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনেছিল। তাহলে কয়েকমাসের মধ্যে কী এমন হল যে, পুলিশ নিজেই তাদের চার্জশিটের বক্তব্য পাল্টে ফেলল? এখন বলা হচ্ছে যে, ওই অভিযুক্তরা নাকি ঘটনাস্থলে ছিলই না’!
‘এই কথার সমর্থনে এমন একজনের বয়ান নেওয়া হয়েছে, যে একজন অভিযুক্তের অধীনে কাজ করে! নতুন কয়েকজনকে অভিযুক্ত হিসাবে সামনে আনা হচ্ছে। এছাড়াও খুনের ধারা না দিয়ে লঘু ধারা দেওয়া হয়েছে, নথি প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। প্রত্যেকটি পদেই গাফিলতি করেছে পুলিশ, চেষ্টা করেছে আসল অভিযুক্তদের আড়াল করতে’।
তবে নাগরিক সমাজের তোলা এইসব অভিযোগ সরাসরি নাকচ করেছে রাজস্থান পুলিশ। এই অভিযোগ নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল অজিত সিং হেসে পাল্টা প্রশ্ন করছিলেন, ‘আপনারা কি আশা করছেন যে, আমি বলব হ্যাঁ, সত্যিই পুলিশ তদন্ত গুলিয়ে দেওয়ার বা গতিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে’?
সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘ক্রাইম ব্রাঞ্চ ওই ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত করেছে। এরকমটা হতেই পারে যাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল তদন্তের পরে দেখা গেল যে তারা নয়, অন্য ব্যক্তিরা ঘটনায় জড়িত। যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই’।
নাগরিক সমাজের আরও দাবি, শুধু পহেলু খানের ঘটনায় নয়, এর আগে মুহাম্মদ আখলাখ বা অন্যান্য যেসব ঘটনায় মুসলমান ব্যক্তিদের গরুর গোশত খাওয়া বা বহন করার অভিযোগ তুলে গণপিটুনি দিয়ে মারা হয়েছে, সবগুলির ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় পৃথকভাবে বিশেষ নজর দেওয়া আর নিহতদের পরিবারগুলিকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও ভাবছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ