শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
বু ক ক র্ণা র
মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত
লেখক : মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ্
মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ একজন ফররুখ অনুরাগী চিন্তাশীল লেখক। সম্প্রতি তাঁর উপরোক্ত শিরোনামের গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থের শুরুতে গ্রন্থটি সম্পর্কে দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিমত তুলে ধরা হয়েছে। সেখান থেকে অংশবিশেষ নিচে উদ্ধৃত হলোঃ
“মুসলিম আমলেই বাংলা সাহিত্যের বিকাশ। এতে মধ্যযুগের মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে এ উপমহাদেশে কয়েকজন কবির উত্থান মুসলিম গণ-মানসে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, তেরশ’ পঞ্চাশের মন্বন্তর, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা এবং আজাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে চল্লিশ ও পঞ্চাশ দশকের কবিরা ছিলেন সমাজ সচেতন ও স্বাধীনতা প্রত্যাশী। এদের মধ্যে মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত কবি আল্লামা ইকবাল ও নজরুল পরবর্তী যুগে যাঁরা ইসলামী আদর্শ ও ঐতিহ্য-চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সাহিত্য-সাধনা করেন, ফররুখ আহমদ ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রণী এবং স্বকীয় সত্তার অধিকারী। ব্যক্তি ও কবি জীবনে তিনি ছিলেন খাঁটি ইসলামের অনুসারী। তাঁর আচরিত ধর্মীয় আদর্শের মাধ্যমে, বিশেষত ইসলামের স্বর্ণ-যুগ-¯্রষ্টা খোলাফায়ে রাশেদীনের দর্শনে এ দেশ শাসিত হোক এবং এ দেশের প্রতি ঘরে মদীনার সুখ-সৌরভ ছড়িয়ে পড়–ক তা-ই ছিল তাঁর সমগ্র কাব্য-সম্ভারের মূলকথা।” (ডক্টর আবদুল করিম, প্রাক্তন ভাইস-চ্যান্সেলর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)।
অন্য আর একটি মন্তব্যের কিয়দংশঃ “আদি ও মধ্যযুগের কবিতা মূলত ধর্মভিত্তিক। শুধু ফররুখ আহমদ কেন, যে কোন করিবই নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস থাকতে পারে। ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কবিতা লেখা দোষের কিছু নয়। ধর্মের সঙ্গে রাজনৈতিক চেতনাকে মিশিয়ে ফেলার কারণে অনেক সময় সংকটের সৃষ্টি হয়। সুতরাং ব্যক্তি ফররুখ আহমদ এবং কবি ফররুখ আহমদ এই জায়গাতে পৃথক হয়ে গেছেন। কবি ফররুখ আহমদকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে তাঁর কবি-প্রতিভার প্রতি অবিচারই করা হয়। তাতে ক্ষতি হয় বাংলা সাহিত্যের; ফররুখ আহমদের নয়। (ডক্টর আহমেদ মাওলা, সাবেক ডিন, কলা ও মানবিক অনুষদ, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা)
উপরোক্ত মন্তব্য থেকে আলোচ্য গ্রন্থ ও গ্রন্থের মূলবিষয় কবি ফররুখ আহমদ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করা যায়। গ্রন্থটি সম্পর্কে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ লিখেছেন, “লেখকের ভাষা আধুনিক, বিষয়বস্তু ঐতিহ্যবাহী এবং আমাদের তরুণ পাঠকদের পাঠোপযোগী।” গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্য-সমালোচক আব্দুল মান্নান সৈয়দ মন্তব্য করেন- “সুলিখিত, সুবিন্যস্ত।” উপরোক্ত দু’জন বিশিষ্ট সাহিত্যবোদ্ধার সংক্ষিপ্ত অথচ সুচিন্তিত মন্তব্য থেকে গ্রন্থটির মান ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
এ গ্রন্থে লেখক অত্যন্ত আন্তরিকতা ও দরদের সাথে বাংলা সাহিত্যের অমর কবি ফররুখ আহমদের জীবন ও তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছেন। এতে কবি সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় ও তথ্য তুলে ধরার আন্তরিক প্রয়াস বিদ্যমান। কবির ধারাবাহিক জীবন, সাহিত্য সাধনা ও সংগ্রাম মুখর কর্মময় জীবনের কাহিনী অত্যন্ত আন্তরিক ও মর্মস্পর্শী ভাষায় বিবৃত হয়েছে। কবির ব্যক্তিজীবন, সাহিত্যজীবন ও কর্মজীবনের নানাদিক এতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কবিকে যারা জানতে চান, এ বইটি তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।